কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে তালগাছ। সেই সাথে বিপন্ন হচ্ছে বাবুই পাখির নিরাপদ আশ্রয়। তাই আর দেখা মেলে না শৈল্পিক সৌন্দর্যের প্রতীক বাবুই পাখির। খুলনার পাইকগাছায় তিন দশক আগে অনেক বড় তালগাছ ছিলো, দেখামিলতো বাবুই পাখির বাসা। কিন্তু তা আর টিকে নেই। লবণাক্তের আগ্রাসনে হারিছে তালগাছ আর আবাসস্থলের অভাবে বিলুপ্ত হচ্ছে বাবুই পাখি। প্রকৃতীক বিপর্যয় ও লবণাক্তের আগ্রাসনে বিপন্ন শৈল্পিক পাখি বাবুই। আগেকার দিনে সারাক্ষণ তালগাছে বাবুই পাখির কলাতানে মুখর থাকতো। যেন একান্নবর্তী পরিবার, তাতে বাসা বেঁধেছে। রোদ-বৃষ্টি-ঝড়ে একটুও দমছে না তারা। বাবুই পাখি যদি নগরায়ন বুঝত, তাহলে মনে হয় ভালোই হতো। ঝড়-বৃষ্টিতে আর প্রতিকূল পরিবেশে না থেকে চড়-ই পাখির মতো অট্টালিকায় থাকতে পারত। কিন্তু তাতে ওদের স্বকীয়তা যে নষ্ট হবে সে কথা কবি রজনীকান্ত সেন তার ‘স্বাধীনতার সুখ’ কবিতায় লিখেছেন। সেই সাথে শিল্পের বড়াই তো আছেই। আর এই পঙক্তি না বললে যেন তাদের স্মরণ করাই হবে না; ‘বাবুই পাখিরে ডাকি বলেছে চড়াই, কুঁড়েঘরে থেকে করো শিল্পের বড়াই’। হ্যাঁ, এই বাবুইকে বলা যেতে পারে সৃজনশীল কর্মী, শিল্পী ও সামাজিক বন্ধনের প্রতীকও। দেশে প্রধানত তিন প্রকার বাবুই থাকলেও দেশী বাবুই (যা দেখতে ছোট চড়-ইয়ের মতো) এর সংখ্যা নগণ্য। বাবুই আকারে সাধারণত ১৫ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। এদের প্রজনন ঋতু এপ্রিল থেকে নভেম্বর মাস। আর এ সময় এদের বেশি দেখা যায়। বাবুই পাখি বাসা বুননে খুবই দক্ষ। প্রজনন মৌসুমে একটা পুরুষ বাবুই দুই-তিনটা বাসা বানায়। স্ত্রী বাবুই তার ইচ্ছে মতো যে পুরুষ বাবুইয়ের বাসা পছন্দ হয়, সে বাসায় প্রবেশ করে এবং জোড়া বেঁধে ডিম পাড়ে। এই মৌসুমে পুরুষ বাবুইয়ের গলা খয়েরি, মাথা-বুক হলদে হলেও স্ত্রী বাবুইয়ের দেহের রঙ পরিবর্তন হয় না। এরা ডিম পাড়ার স্থানে নরম ধুলার আস্তরণ দিয়ে রাখে। এক মৌসুমে বাবুই দুই থেকে চারটি ডিম পাড়ে। আর বাচ্চা ফুঁটতে সময় লাগে দুই থেকে তিন সপ্তাহ। মজার তথ্য হলো বাবুই পাখি জোনাকি ধরে বাসার দেয়ালের নরম কাদায় আটকে রেখে রাতে আলোর চাহিদা মেটায়। এদের ঠোঁটের আগার দিকটা সরু হওয়ায় এরা শস্যদানা খেতে বেশ পটু। এ ছাড়া কাউন, ছোট কীট এদের খাদ্যতালিকার অন্যতম। বর্ষা মৌসুমে কৃষক যখন মাঠে ধান বুনে, বাবুই পাখি দল বেঁধে তাতে ভূরিভোজ করে। পাখিপ্রেমী ও পরিবেশ বাদীরা বলেন, কৃষিজমিতে অতিমাত্রায় কীটনাশক প্রয়োগ, ইটভাটার জ¦ালানি হিসেবে তাল-খেজুর গাছের ব্যবহারে বিপন্ন হচ্ছে বাবুই পাখি ও বাবুই পাখির বাসা। তারা আরো বলেন, তালগাছ আমাদের ভারসাম্য রক্ষা করে ও বাবুই পাখিদের অশ্রয়স্থল তালগাছ না কাটার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।