প্রবাসী আয়ের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ দেশে প্রেরণ করা হচ্ছে হুন্ডির মাধ্যমে। প্রবাসীদের ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রেরণে আগ্রহ বাড়াতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও অদ্যাবধি তা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। রেমিট্যান্স বাড়াতে একের পর এক বিশেষ সুবিধা দেওয়া হলেও মিলছে না ইতিবাচক ফল। বরং নির্বিঘ্নে হুন্ডির পেটে যাচ্ছে রেমিট্যান্স। মূলত ডলারের দর বেঁধে দেওয়ার কারণেই হুন্ডিতে লেনদেনে উৎসাহিত হচ্ছেন প্রবাসীরা। ডলারের বিনিময়ে ব্যাংক দিচ্ছে কম টাকা; ব্যাংকের বাইরে দিচ্ছে বেশি। সহজে সেবা পাওয়ার কারণেও প্রবাসীরা হুন্ডিতে অর্থ প্রেরণ করে থাকেন। নানা উদ্যোগ নিয়েও বাংলাদেশ ব্যাংক কেন রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়াতে পারছে না, তা গভীরভাবে ভেবে দেখা দরকার। বস্তুত অর্থনীতির এ সূচকটির নেতিবাচক গতি দুশ্চিন্তায় ফেলেছে সংশ্লিষ্টদের। এমন পরিস্থিতিতে বৈধ পথে রেমিট্যান্স বাড়াতে বিভিন্ন শর্ত শিথিল, চার্জ ফি মওকুফসহ বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে আগামীতে রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়বে, এমনটিই আশা করা হচ্ছে। প্রবাসী বাংলাদেশি, যারা রেমিট্যান্সের মূল প্রেরক, তাদের একটি বড় অংশ স্বল্পশিক্ষিত। তাদের অনেকে ব্যাংকিং ব্যবস্থা সম্পর্কে অবহিত নন, যে কারণে হুন্ডিতে রেমিট্যান্স পাঠান। দেশের বিপুলসংখ্যক গরিব-স্বল্পশিক্ষিত মানুষ ব্যাংকের সেবাপ্রাপ্তিকে জটিল বিষয় হিসাবেই দেখে। ব্যাংকগুলো এসব মানুষের কাছে সহজে সেবা পৌঁছে দিতে না পারলে যত উদ্যোগই নেওয়া হোক, রেমিট্যান্সপ্রবাহ কাক্সিক্ষত মাত্রায় বাড়বে কিনা, সে বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। হুন্ডির হোম সার্ভিসের আদলে ব্যাংকগুলোকেও উন্নত ও দ্রুত সেবা প্রদানের পদক্ষেপ নিতে হবে। একইসঙ্গে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যাংকের শাখা-উপশাখা খোলার পদক্ষেপও নেওয়া দরকার। অভিযোগ আছে, হুন্ডি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রভাবশালীদের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সম্পর্ক রয়েছে। এই অভিযোগ যে অমূলক নয় তা স্পষ্ট হয় হুন্ডি ব্যবসায়ীদের প্রভাব বিস্তারের প্রবণতা থেকে। হুন্ডি ব্যবসায়ীদের যারা সহযোগিতা দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। বিদেশে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে দক্ষ কর্মী প্রেরণের ওপর জোর দেওয়া দরকার। এজন্য সরকারকে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে। প্রবাসীরা যাতে তাদের কষ্টার্জিত অর্থ দেশে পাঠাতে আগ্রহী হন, সে জন্য দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। প্রবাসীদের সামনে বৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিট্যান্স প্রেরণের গুরুত্ব তুলে ধরার পাশাপাশি তাদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করার পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা আশা করি, হুন্ডি বন্ধে দ্রুত জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে রেমিট্যান্স নিয়ে যে সংকট চলতে তা কাটানো সম্ভব হবে।