বিভিন্ন অসুখে আক্রান্ত রুগীরা দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর আস্থাশীল নয়। তারা চিকিৎসার জন্য বিদেশ নির্ভর হয়ে উঠছেন। দেশে একের পর এক বেসরকারি হাসপাতাল গড়ে উঠলেও চিকিৎসায় আস্থা ও খরচের ক্ষেত্রে সরকারের কোন নিয়ন্ত্রণ না থাকায় তারা বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাড়ি জমাচ্ছেন। অধিকাংশ মানুষ ভারতে চিকিৎসার জন্য যাচ্ছেন। অতি সামর্থবানরা সিঙ্গাপুর ,থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া যাচ্ছেন। কেউ কেউ আবার যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য সহ ইউরোপীয় দেশ গুলোয় যাচ্ছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতি বছর ৩৫ থেকে ৪০ হাজার কোটি টাকা বিদেশে চিকিৎসার জন্য ব্যয় হচ্ছে। অন্যদিকে অতি দরিদ্র মানুষেরা সরকারী হাসপাতালে ভিড় জমালেও চিকিৎসার জন্য সিট পাওয়া যেন সোনার হরিণ। তাছাড়া রোগীর চাপ এত বেশি যে সামলানো সম্ভব হচ্ছে না চিকিৎসক ও নার্সদের পক্ষে। মফস্বলে যে সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো রয়েছে, সেখানে চিকিৎসকরা থাকেন না। বাধ্য হয়ে রুগী নিয়ে স্বজনরা শহরের হাসপাতালে ভিড় করেন।
বাংলাদেশে প্রচুর ভালো চিকিৎসক থাকার পরও রুগীরা তাদের প্রতি আস্থাশীল হতে পারছেন না। অভিযোগ রয়েছে, চিকিৎসকরা রুগীদের সময় দেন না। সমস্যা বা অসুবিধা গুলো ঠিক মতো শোনেন না। কর্কশ ব্যবহার করেন রুগীদের সাথে। এমন অভিযোগ নার্সদের বিরুদ্ধে। অন্যদিকে বিদেশে যাওয়া রুগীরা বলেন, সেখানে চিকিৎসক অনেক সময় নিয়ে রুগী দেখেন এবং অত্যন্ত মার্জিত ব্যবহার করে থাকেন। ওষুধ সেবন না করলেও অনেক সময় জটিল রুগী সুস্থতা অনুভব করেন। এ ছাড়া রোগ নির্নয়ের জন্য যে পরীক্ষা- নিরীক্ষা করা হয়ে থাকে, তাও সঠিক ভাবে ফলাফল দেয় না। ফলে চিকিৎসার ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হয়। রুগী সুস্থ হওয়ার পরিবর্তে আরো অসুস্থ হয়ে ওঠে। বিদেশে রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা নিরীক্ষা রুগীদের মাঝে আস্থা সৃষ্টি করেছে।
সারা দেশে ব্যাংঙ্গের ছাতার মতো অসংখ্য ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ছাড়া রোগ নির্ণয় করার সক্ষমতা তাদের না থাকলেও তারা ইচ্ছে মতো মূল্য আদায় করছে। এসব দেখভাল বা মূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। অবশ্য সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এ ধরনের অনেক ডায়াগনিস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু বড় বড় ডায়গনিস্টিক সেন্টারের রোগ নির্ণয়ের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে না। ফলে যে যার ইচ্ছে মতো মূল্য আদায় করছে। এমন পরিস্থিতির মাঝে মানুষ চিকিৎসার জন্য বিদেশ নির্ভর হয়ে উঠেছে।
স্বাস্থ্য সেবা পাওয়া প্রতিটি মানুষের নাগরিক অধিকার। অথচ এখন স্বাস্থ্য সেবা খাত ব্যবসা নির্ভর হয়ে উঠেছে। এজন্য সংশ্লিষ্টদের নজরদারি বাড়ানো উচিৎ। কিন্তু রুগীর প্রতি যত্নশীল না হওয়ায় কখনো স্বজনদের সাথে চিকিৎসকদের মারামারি ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটছে। চিকিৎসকদের ধর্মঘট আর স্বজনদের থানায় মামলা হচ্ছে। কিন্তু রুগীর চিকিৎসা ব্যবহৃত হচ্ছে। তাই দেশের চিকিৎসক সমাজকে রুগীর প্রতি যত্নশীল হতে হবে। মনে রাখতে হবে সৃষ্টিকর্তার পর তারাই মানুষের পূজনীয় তাদের পেশার কাড়নে। রুগীর কাছে চিকিৎসকের যে আস্থা সংকট, তা দূর করে দেশের টাকা দেশে রাখার উদ্যোগ তাদেরই নিতে হবে।