করোনা পরবর্তীত পরিস্থিতি ও রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধসহ নানা কারণে বিশ্ব অস্থিরতার সম্মুখীন। বেশ কিছুদিন থেকে শোনা যাচ্ছে, আসন্ন নতুন বছর ২০২৩ সংকটের বছর হিসেবে উপস্থিত হচ্ছে। বাংলাদেশের শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিরাও বলছেন,আসন্ন বছরটি সংকট নিয়ে আসছে। গত ১৪ নভেম্বর মন্ত্রী সভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সমস্যা মেনে নিয়েও আত্মবিশ্বাসের সাথে সব সময় বলেছেন, বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ হবে না ইনশাল্লাহ। আলোচিত মন্ত্রী সভার বৈঠকটি সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ২০২১-২০২২ অর্থ বছরের কার্যাবলী সম্পর্কিত বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপনের সময় অর্থনীতি পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে মন্ত্রী সভার বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।
সংকট থেকে উত্তরণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে সব নির্দেশনা দেন, তার প্রথমটি হচ্ছে খাদ্য নিরাপত্তা সংক্রান্ত। সর্বাবস্থায় খাদ্যের উৎপাদন বাড়াতে হবে। কারণ যতই খাদ্য আমদানির কথা বলা হোক না কেন, সমস্যাটি থাকবেই। রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে খাদ্যশস্য আমদানির সুযোগ থাকলেও বৈদেশিক মুদ্রার যেহেতু সংকট আছে এবং মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের সুদ হারে বেড়ে যাওয়ার ফলে যেসব দেশ ঋণ নিয়ে কাজ করে বা যাদের আমদানি বেশি, তাদের দুই দিক থেকেই অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে। এর মধ্যে একটি হলো যখন টাকা দেওয়া হচ্ছে তখন বেশি দিতে হচ্ছে, আবার যখন নেওয়া হচ্ছে, তখন কমে পাওয়া যাচ্ছে। এজন্য সবাইকে খাদ্যের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য চেষ্টা করতে হবে। যদিও দেশের খাদ্য মজুদ পরিস্থিতি এখন খুব ভালো। বেসরকারি খাতকে অনেক পরিমাণ খাদ্য আমদানি করার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। পরিমাণটি ১৫ লাখ মেট্রিকটন। খাদ্য আমদানির ক্ষেত্রে উৎস কর জাতীয় কিছু করের বিষয়ে নমনীয় হওয়ার ক্ষেত্রেও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারা আলাপ আলোচনা করে অবিলম্বে সন্তোষজনক বিধান চালু করবে।
দ্বিতীয়ত, বিদেশে অদক্ষ শ্রমিক না পাঠিয়ে দক্ষ শ্রমিক পাঠাবার ব্যবস্থা করতে হবে। তাতে উচ্চ বেতনে কাজ করা সম্ভব হবে। সংশ্লিষ্ট দেশের চাহিদা অনুসরণ করে এ সুযোগ বাড়াতে হবে। আর দক্ষতার সনদের ক্ষেত্রে যেন যথাযথ প্রতিষ্ঠানের সনদ দেওয়া হয়। তৃতীয়, প্রবাসী আয় (রেমিটেন্স) বাড়ানোর জন্য কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে রেমিটেন্স পাঠাতে ব্যাংকে কোন ফ্রি দিতে হবেনা। যে ব্যাংকে পাঠাবে, সেই ব্যাংক বিষয়টি দেখবে। চতুর্থত, বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এজন্য বিনিয়োগের যেসব শর্ত আছে, সেগুলোকে আর একটু নমনীয় করা যায় কিনা, সেটি দেখতে বলা হয়েছে। বাংলাদেশ বিনিয়োগ কর্তৃপক্ষের কয়েকটি শাখা থাকবে। লাইসেন্সের জন্য যেন পৌরসভা বা সিটি করর্পোরেশনে যেতে না হয়।
আমরা মনে করি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এসব নির্দেশনা গুলো যথাযথ এবং সময় উপযোগী। সংগত কারণে তা বাস্তবায়ন করে আগামী বছরের সংকট উত্তরণের পথে এগুতে হবে। জাতীয় ঐক্য ও কাজ করার আন্তরিকতাই আমাদের লক্ষ্যে পৌছাতে সাহায্য করবে। আমরা নানা দুর্যোগ দুর্বিপাক মোকাবেলা করে বেঁচে আছি। তাই আমরা পারি, আমরা পারবো।