মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার হোসেন্দী ইউনিয়নের হোসেন্দী অর্থনৈতিক অঞ্চলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার সকাল ১১ টা ৩০ মিনিটের দিকে তিনি ভারচুয়াললি যুক্ত হয়ে ওই অর্থনৈতিক অঞ্চলের উদ্বোধন করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা এমপি, মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুল, পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান আল-মামুন,গজারিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম,মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ফয়সাল বিপ্লব ও মুন্সীগঞ্জ হোসেন্দী অর্থনৈতিক অঞ্চলের চেয়ারম্যান শম্পা রহমান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার (২০ নভেম্বর) ৫০টি শিল্প-কারখানা ও অবকাঠামোর উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তিনি তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এসব প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
মোট আটটি ভেন্যুতে একযোগে প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ভেন্যুগুলো হল- গণভবন, ঢাকা; চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগর; মৌলভীবাজারে শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল; চট্টগ্রামের আনোয়ারায় কর্ণফুলী ড্রাইডক বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল; নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে মেঘনা শিল্প অর্থনৈতিক অঞ্চল; জামালপুর সদরে জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল; কক্সবাজারের সাবরাং পর্যটন পার্ক ও মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় হোসেনদি অর্থনৈতিক অঞ্চল।
স্বনির্ভর ও টেকসই বাংলাদেশ গড়তে ২০৩০ সাল নাগাদ সারাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের উদ্যোগ নেয় সরকার এর মধ্যে অন্যতম ভোগ্য পণ্য সরবরাহে দেশের অন্যতম প্রধান প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের মালিকানাধীন মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার হোসেন্দী অর্থনৈতিক অঞ্চল।
প্রায় ১৫০ একর জায়গার উপর নির্মণাধীন এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রাথমিকভাবে ১০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে সিমেন্ট, লবণ, এলপিজি চিনি, শিপ বিল্ডিং সহ বিভিন্ন শিল্পকারখানা স্থাপন করা হচ্ছে। উৎপাদনের আগে অবকাঠামো স্থাপনে চলছে শেষ সময়ের প্রস্তুতি। একই সাথে চলছে আট ধরনের শিল্প কারখানা স্থাপনের প্রস্তুতি। এখানে সবচেয়ে এগিয়ে আছে লবণ কারখানা স্থাপনের কাজ। তৈরি হবে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন ছয় স্তরে পরিশোধিত আয়োডিনযুক্ত লবণ। এক বছরে যা ২লক্ষ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদন করতে সক্ষম। এর আগে বাংলাদেশে উৎপাদিত কোনো লবণ ছয় স্তরে পরিশোধিত হয়নি বলে জানিয়েছে সিটি গ্রুপ কর্তৃপক্ষ।
হোসেন্দী অর্থনৈতিক অঞ্চলের জিএম (অপারেশন ও প্রশাসন) তারিকুজ্জামান তালুকদার বলেন, আমরা সবচেয়ে এগিয়ে আছি লবণের কারখানা স্থাপনের কাজে আশা করছি আগামী এক দুই মাসের মধ্যে আমরা উৎপাদনে আসতে পারবো। এখানে স্থাপন করা হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম এবং বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ পেপার মিল। এখানে প্রতিবছর উৎপাদন করা হবে ৭ লক্ষ ৩০ হাজার মেট্রিক টন কাগজ। এখানে উৎপাদন করা হবে সব ধরনের টিস্যু পেপার।উৎপাদিত পণ্যের একটা বড় অংশ দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা হবে।
ইউকে বাংলা সিমেন্ট কোম্পানির পরিচালক প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান বলেন, এখানে আমরা ইউরোপের প্রযুক্তি ব্যবহার করছি। এক বছরে প্রায় ৫৫ লাখ মেট্রিক টন সিমেন্ট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কারখানায় স্থাপনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি আমরা। পরিবেশ দূষণের দিক থেকে এটি হবে বাংলাদেশের সবচেয়ে কম দূষণ মাত্রার সিমেন্ট কারখানা। পরবর্তীতে সিমেন্টের পাশাপাশি রড, টাইলস এবং নির্মাণ কাজে লাগে এরকম অনেক জিনিস উৎপাদনের পরিকল্পনা আছে আমাদের।
হোসেন্দী ইকোনমিক জোনের এলপিজি প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী ফজলুর রহমান খান বলেন, এই শিল্পপল্লীতে স্থাপন করা হবে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ধারণ ক্ষমতার এলপিজি বোতলজাতকরণ কারখানা। ১২ কেজির ৮৩ লক্ষ বোতল লিকুইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস উৎপাদন করা ছাড়াও বছরে ৭ লক্ষ সিলিন্ডার তৈরি করা হবে এখানে। ঢাকার কাছে হওয়ায় পরিবহন খরচ কম পড়বে এবং তুলনামূলক কম মূল্যে সিলিন্ডার কিনতে পারবে সাধারণ জনগণ।
হোসেন্দী অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছর ১৩ লক্ষ মেট্রিক টন চিনি ও ৩ হাজার মেট্রিক টন ক্ষমতা সম্পন্ন ৫০/৬০ টি লাইটার জাহাজ উৎপাদন করতে সক্ষম মুন্সীগঞ্জের মেঘনা পার সংলগ্ন হোসেন্দী অর্থনৈতিক অঞ্চল। বিশাল এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রায় ১৫ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে। অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিরতিহীন উৎপাদন চালু রাখার জন্য ১২৫ মেগাওয়াটের নিজস্ব পাওয়ার প্লান্ট হবে। যা দিয়ে নিরবিচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব।
বেজার নির্বাহী পরিচালক শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, হোসেন্দী অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করছে সিটি গ্রুপ পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ লোকের কর্মসংস্থান হচ্ছে এর চেয়ে ভালো কিছু হতেই পারে না।