কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে পূর্ব শত্রুতার জেরে এক অসহায় পরিবারকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানীর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগে জানা যায় উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলোনীটারী এলাকার আবদুল বারেকের স্ত্রী রাবেয়া বেগমের (৪৩) সাথে প্রতিবেশি আতা শেখের ছেলে মিলন মিয়া ওরফে চাঁন মিয়ার (৩২) পরিবারের দ্বন্দ্ব চলে আসছে। দ্বন্দ্বের জেরে ১৪ অক্টোবর রাবেয়া বেগম গভীর রাতে মিলন মিয়ার বাড়িতে গিয়ে ঘরের বেড়ায় ডাং মার করে ভাঙচুড় করতে থাকে। পরে চাঁন মিয়ার স্ত্রী নুরুন্নাহার বেগম ও তার ভাবি মিলে ওই নারীকে আটক করে রাখেন। এরপর এলাকার লোকজনসহ ইউপি সদস্য ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় আবদুল বারেক বাদী হয়ে চাঁন মিয়া, তার স্ত্রী ও ভাইসহ ৬ জনকে আসামি এবং ইউপি সদস্যসহ ৭ জনকে স্বাক্ষী করে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। তবে ওই মামলার ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন স্বাক্ষিগণ। বরং মিথ্যা স্বাক্ষী দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে বলে জানান মামলায় উল্লিখিত স্বাক্ষীগণ। মামলার স্বাক্ষী হাছেন আলী জানান, তিনি ঘটনার বেশ কিছুদিন আগে থেকে ঢাকায় অবস্থান করছিলেন। ঘটনার দুদিন পরে জানতে পারেন তিনি এই মামলার স্বাক্ষী। মামলার ঘটনার ব্যাপারে কিছুই জানেন না তিনি। তবে তাকে মিথ্যা স্বাক্ষী দেয়ার জন্য চাপ দিয়েছেন এমনকী মিথ্যা স্বাক্ষী না দিলে মামলার আসামি করাও হুমকী দেন বাদিপক্ষ। একই কান্ড ঘটান বাদী আবদুল বারেকের বড় ভাই আবদুল আউলের স্ত্রী আমেনা বেগমের (৫০) সাথেও। আবদুল আউয়াল জানান, আমার ছোট ভাইয়ের বাড়িতে হামলা করে তার বউকে তুলে নিয়ে গিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে বলে মামলা করেছে চাঁন মিয়ার পরিবারের বিরুদ্ধে। অথচ একই বাড়িতে থেকে আমরা কিছুই জানি না। কিন্তু আমাদেরকে মিথ্যা স্বাক্ষি দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে আমার ভাই। এতে আমি ও আমার স্ত্রী রাজি না হলে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে আমার স্ত্রীকে আসামি করে। বেগম বিবি (৪০) নামের আরেক নারী বলেন, আমি অন্যের বাড়িতে ঝিঁয়ের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করি। এ ধরণের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। বরং রাবেয়া বেগম চাঁন মিয়ার বাড়িতে এসে ঘরের বেড়া ভাঙচুর করেন। এ সময় তাকে আটক করলে উল্টো হয়রানীর জন্য মিথ্যা মামলা দিয়ে সে মামলায় আমাকেও আসামি করেছে। অপরদিকে আরেক স্বাক্ষী আবদুল জলিলের বাড়ি পাশর্^বর্তী ভূরুঙ্গামারী উপজেলায়। তিনিও ঘটনার ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে। এছাড়াও পরিকল্পিতভাবে এক নং স্বাক্ষী দেয়া হয়েছে বাদীর নিজ ছেলেকেই।
চাঁন মিয়া জানান, আমিগরিব মানুষ। কাজকামাই করে দিন এনে দিন খাই। আমার বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। আমি এর সঠিক বিচার প্রার্থনা করছি।
স্থানীয়রা জানায়, আমরা চিল্লাচিল্লি শুনে এসে দেখি ওই নারীকে আটক করে রেখেছে। পরে ইউপি সদস্যের উপস্থিতিতে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। তবে রাবেয়া বেগমের বাড়ি থেকে তাকে তুলে আনার ব্যাপারে কেউ জানেন না বলে নিশ্চিৎ জানান তারা। এ ব্যাপারে আবদুল বারেক ও তার স্ত্রীর সাথে কথা বলতে চাইলে তারা কথা বলতে রাজি হননি।
রামখানা ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ড সদস্য মোশারফ হোসেন স্বীকার করে বলেন, মিথ্যা ছাড়া তো মামলা হয় না। তবে আমি রাতে গিয়ে ওই মহিলাকে চাঁন মিয়ার বাড়িতে আটক রাখা দেখেছি। পরে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় রাবেয়া বেগমকে উদ্ধার করে তাদের বাড়িতে রাখা হয়েছে। আর বাদীপক্ষ মিমাংসার প্রস্তাব দিয়েছেন। দুই পক্ষের সম্মতি থাকলে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যাক্তিদেরকে নিয়ে শালিসি বৈঠকের মাধ্যমে মিমাংসা করা যেতে পারে।