জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের সঙ্গে চলমান দ্বন্দ্বের নিরসন ঘটবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ ও পার্টির বহিষ্কৃত সাবেক মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা। সোমবার (২১ নভেম্বর) বেলা তিনটার দিকে রংপুর মহানগরীর দর্শনাস্থ পল্লী নিবাসে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
এরআগে পল্লী নিবাসে শায়িত সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের করব জিয়ারত করেন মসিউর রহমান রাঙ্গা। এ সময় তার সঙ্গে গঙ্গাচড়া উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি নুর আমিন, সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মমিনুর রহমান, জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খতিবার রহমানসহ রওশন-রাঙ্গাপন্থী কয়েক শতাধিক কর্মী, সমর্থক ও পরিবহন শ্রমিকরা উপস্থিত ছিলেন।
জিএম কাদের সঙ্গে চলমান দ্বন্দ্বের নিরসনের সম্ভাবনার কথা জানিয়ে মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, জিএম কাদেরের সঙ্গে আমার কোনো দ্বন্দ্ব চলছে না। বরং উনি আমার সাথে দ্বন্দ্ব তৈরি করে আমাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছেন। আমি এরশাদ সাহেব এবং জিএম কাদেরের সময় মহাসচিব ছিলাম। কাউন্সিলনের মাধ্যমে আমি নবম সংসদের মহাসচিব হয়েছিলাম। উনি (জিএম কাদের) আমার প্রাথমিক সদস্য পদ পর্যন্ত বাতিল করে দিয়েছেন। অথচ এর কোনো কারণ জানাতে পারেননি। তবে আমি আশা করি কোনো দ্বন্দ্ব থাকবে না একসময় এটা ঠিক হয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, এরশাদের মৃত্যুর দুটি জাতীয় পার্টি গঠন হয়েছে। একটি রওশন এরশাদের নেতৃত্বে আরেকটি জিএম কাদেরের। দুইটাইতে আমাকে মহাসচিবের দায়িত্ব রাখা হয়েছিল। আমি দলটাকে না ভেঙে, টুকরো টুকরো না করে সবার সঙ্গে বসে মিমাংসা করে সমাধান করেছিলাম। আমি তখন কাউন্সিলনের মাধ্যমে মহাসচিব হয়েছিলাম। সেই কারণে আমি মনে করি এটা দেবর-ভাবির সম্পর্ক, এর থেকে বেশি অবনতি ঘটবে না। এখন যা চলছে এটাও মিটে না। তারপর রংপুর সিটিতে একজন নতুন মেয়র প্রার্থী দেয়া হবে।
একসময় পাশে থেকে সুবিধা নেওয়া দলের নেতাকর্মী এখন কেন সঙ্গে নেই, জানতে চাইলে মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, আমার কাছ থেকে কেউ সুযোগ সুবিধা নেয়নি। বরং আমি অনেকের কাছ থেকে সুযোগ সুবিধা এবং ভোট নিয়ে তিনবার এমপি হয়েছি, মন্ত্রী হয়েছি। আমি কারো জন্য কোনো উপকার করেছি বলে আমার মনে হয় না। আমি ৩৮ বছর ধরে এই দলটি গড়েছি। আমার হাতে তৈরি অনেক নেতাকর্মী রয়েছে। অথচ আমাকে হঠাৎ করে প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে পর্যন্ত অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এটা নিয়ে আমি হাসব না কাঁদব এখনো বুঝে উঠতে পারিনি। এর জন্য আমি কাউকে দোষারোপও করছি না।
রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যেই প্রার্থী লাঙ্গল প্রতীক পাবেন সেই মেয়র নির্বাচিত হবেন দাবি করে সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, জাতীয় পার্টি মানেই লাঙ্গল। আর লাঙ্গল যার কাছে থাকবে, সেই হবে জাতীয় পার্টির প্রার্থী। দলের মহাসচিব রংপুরে যাকে মনোনয়নপত্র দিয়েছে সেটা কোনো দিন বৈধ হতে পারে না। কারণ দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী মনোনয়ন দেয়ার ক্ষমতা তার নেই। মহাসচিব অযাচিত ভাবে মোস্তফাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। চেয়ারম্যান এখন আইনি সমস্যার কারণে মনোনয়নপত্রে স্বাক্ষর করতে পারছেন না। তবে এই সমস্যাও থাকবে না। দ্রুত সবকিছুর সমাধান হয়ে যাবে।
এরআগে সকালে ঢাকা থেকে বিমানযোগে সৈয়দপুরে আসেন মসিউর রহমান রাঙ্গা। সেখান থেকে নিজ নির্বাচনী এলাকা গঙ্গাচড়া গিয়ে ডিজিটাল মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেন। পরে গঙ্গাচড়া থেকে তার কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে করে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা নিয়ে রংপুর মহানগরীতে শোডাউন করেন।