আশাশুনি উপজেলার বড়দল আফতাব উদ্দীন কলেজিয়েট স্কুলের প্রভাষক শিবপদ সানার বিরুদ্ধে একটি মামলায় ৭ বছরের কারামন্ডাদেশ দিয়েছেন বিজ্ঞ আদালত। অনদিকে তাকেসহ তৎকালনীন অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা চলমান, তাকে চাকুরী থেকে সাসপেন্ড করা ও থানায় পৃথক মামলা করা হয়েছে।
এজাহার, দুদক, এনটিআরসিএ ও শিক্ষা অধিদপ্তরের কাগজপত্র সূত্রে জানাগেছে, তালা উপজেলার মেশারডাঙ্গা গ্রামের করুণাময় সানার ছেলে শিবপদ সানা তঞ্চকিকতা করে ২০০৮ সালে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় (রোলনং-২০১১০৪৫১, রেজিঃনং- ৮০০১৯৮৩০) এবং আরেকবার ২০০৫ সালে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা (রোলনং- ৬৫৭০৩৫২ ও রেজিঃনং- ০৫১০৭৯৫৩) সনদ ব্যবহার করে ১৩/১২/২০১০ তাং ব্যবসায় ও ব্যবস্থাপনা বিভাগে প্রভাষক পদে চাকুরীতে যোগদান করেন। কুমিরা মহিলা ডিগ্রী কলেজের সহকারী অধ্যাপক আদিত্য ব্যানার্জী বাদী হয়ে ১/৯/১৬ ও ৩১/০৫/১৭ তাং তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করলে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের তদন্ত কমিটি সরেজিমন তদন্ত করেন। এনটিআরসিএ নিবন্ধনসনদ যাচাই শেষে ১১/০৩/২১ তাং রিপোর্টে বলা হয়, ২০০৮ সালের সনদটি জাল ও ভূয়া। প্রকৃত সনদধারীর নাম এমডি জিয়াউর রহমান, পিতা এমডি আয়ুব আলী। বিষয় বাংলা। এবং ২০০৫ সালের সনদটিও জাল ও ভূয়া। প্রকৃত সনদধারীর নাম তানমীম ইয়াসমীন, পিতা মোঃ শাহজাহান আলী। একই সাথে এনটিআরসিএ এর সহকারী পরিচালক (পমূপ্র-৩) তাজুল ইসলাম বড়দল আফতাব উদ্দিন কলেজিয়েট স্কুলের অধ্যক্ষকে দালিলিক ভাবে প্রমাণিত জাল ও ভূয়া সনদধারী শিবপদ সানার বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের পূর্বক তার অফিসকে অবহিত করতে বলেন।
কলেজিয়েট স্কুলের অধ্যক্ষ ড. শিহাবুদ্দীন তার বিরুদ্ধে আশাশুনি থানায় ৪০৬, ৪১৭, ৪৬৮ ও ৪৭১ পেনাল কোড ধারায় ২০/০৪/২১ তাং ১৮৬০ নং মামলা রুজু করেন। মামলা বিচারাধীন আছে। অন্যদিকে দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয় খুলনা বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ আদালত খুলনায় ক্রিমিনাল মিস কেস (নং-১১০২/২০১৮) রুজু করেন। মামলায় তৎকালীন অধ্যক্ষ সানা মোহাম্মদ আলীকেও আসামি করা হয়।
সাসপেন্ডে থাকা শিক্ষক শিবপদ সানার বিরুদ্ধে ওই আদিত্য ব্যানার্জী ৩০২সহ বিভিন্ন ধারায় (হত্যার অভিযোগসহ) সিআরপি ২৮/১৯ ও সিআর ৩৫০/২২ নং মামলা করেন। বিজ্ঞ আদালত শিবপদ সানাকে ৭ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাগেছে। আসামি শিবপদ পলাতক রয়েছেন।
অধ্যক্ষ শিহাব উদ্দিন প্রতিষ্ঠানটিকে আইন প্রতিপালনের মাধ্যমে উন্নয়ন, শিক্ষার মান উন্নয়ন ও সঠিক পন্থায় প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করায় মামলার আসামি ও অপরাধের সাথে জড়িতরা নানা কার্যক্রমকে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষক, অভিভাবক ও সচেতনমহল জানান, সামনে গভর্নিং বডি নির্বাচনকে উপলক্ষ করে তারা হীনস্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যে একসাথে মাঠে নামার চেষ্টাও করে যাচ্ছেন। যাতে জালজালিয়াতি ও অপরাধীদের বিচারের হাত থেকে রক্ষা করা যায় সে মানসিকতা মাথায় নিয়ে চলছে নানামুখি ষড়যন্ত্র। এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক মন্ডলী, অভিভাবকবৃন্দ, সচেতন এলাকাবাসী, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও জন প্রতিনিধিদের সুচিন্তিত হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।
কলেজিয়েট স্কুলের অধ্যক্ষ ড. শিহাবুদ্দীন জানান, প্রভাষক শিবপদ সানার বিরুদ্ধে দুদকে মামলা চলমান রয়েছে। তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট হয়েছে। এনটিআরসিএ এর নির্দেশনায় আদালতে পৃথক মামলা চলমান রয়েছে। তাকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তৎকালীন অধ্যক্ষও দুদক কর্তৃক দায়েরকৃত মামলায় আসামি করা হয়েছে।