‘সকলে মিলে এন্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স প্রতিরোধ করি’ প্রতিপাদে ১৮-২৪ নভেম্বর বিশ্ব এন্টিমাইক্রোবিয়াল সচেতনতা সপ্তাহ উপলক্ষে চাঁদপুরে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (২৩ নভেম্বর) দুপুরে চাঁদপুর প্রেসক্লাব অডিটোরিয়ামে সভার আয়োজন করে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর জেলা কার্যালয়।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) এ এস এম মোসা। তিনি বক্তব্যে বলেন, বিশ্ব বিভিন্ন সময়ে যে সব মহামারি কিংবা ভাইরাস দেখা দিচ্ছে, তা প্রতিরোধে গবেষকরা প্রতিষেধক তৈরী করছেন।
আমরা নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি করছি। কারণ কোন ধরণের চিকিৎসাপত্র কিংবা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই ফার্মেসী থেকে ওষুধ কিনে খাচ্ছি। সামান্য অসুস্থতার কারণে এন্টিবায়োটিক গ্রহণ করছি। যার কারণে এই এন্টিবায়োটিক শরীরে রেজিস্ট্যান্স হয়ে যাওয়ায় পরবর্তীতে অন্য কোন ওষুধ কাজ করে না। অর্থাৎ এইডস্ রোগে আক্রান্ত হলে যেমন মানুষের অন্য কোন ওষুধ কাজ করে না। যার ফলে সামান্য অসুস্থতায় অনেকেই মারা যায়।
তিনি বলেন, যেসব ঔষধগুলো ফার্মেসীতে বিক্রি নিষিদ্ধ, কিন্তু আমরা বিক্রি করছি। ড্রাগ অ্যাসোসিয়েশনের লাইসেন্স ছাড়া কোন ফার্মেসী করার কথা না। ফার্মাসিষ্ট ছাড়া অর্থাৎ ওষুধ সম্পর্কে যারা জানেন, তারা ছাড়া ওষুধ বিক্রি করা যাবে না। আমরা জনবহুল দেশ। আমাদের অনেক ফার্মেসী প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের দক্ষ ফার্মাসিষ্ট নাই। এই কারণে আমরা না বুঝেও এন্টিবায়োটিকের মত ওষুধ বিক্রি করছি।
এডিএম বলেন, যুগ এগিয়ে যাচ্ছে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের জীবন যাত্রার মান এগিয়ে নিতে হচ্ছে। শুধুমাত্র ঔষধই নয়, আমাদের সকল ক্ষেত্রে কাজের গুনগত মান বৃদ্ধি করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে সিভিল সার্জন ডাঃ মোহাম্মদ সাহাদাৎ হোসেন বলেন, আমাদের জন্য সামনে একটি ভয়াভহ পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে। করোনাকালে আমরা যেমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে ছিলাম, ঠিক তেমনি অবস্থা বেঁচে থাকলে দেখবেন। আপনার জ্বর হয়েছে, কিন্তু জ্বর ভাল হবে না। কোন ঔষধই কাজ করছে না। কারণ কি? কারণ হচ্ছে আপনি এত এন্টিবায়োটিক খেয়েছেন যা রেজিস্ট্যান্স হয়ে পরবর্তী কোন মেডিসিন কাজ করার মত শক্তি নেই।
তিনি বলেন, অভিজ্ঞতা থেকে বলছি অনেক শিক্ষিত মানুষই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই ওষুধ সেবন করেন। অতিরিক্ত এন্টিবায়োটিক সেবনের ফলে আপনার শরীরে যদি বেকটেরিয়া তৈরী হয়ে যায় এবং ওই বেকটেরিয়ায় যদি আপনি আক্রান্ত হন, তাহলে আপনার মৃত্যু নিশ্চিত। সকলের নিকট আমার অনুরোধ সব পেশায়ই ভালমন্দ লোক আছে। চিকিৎসক যে ব্যবস্থাপত্র দেয়, তাতে অনেক ঔষধই লিখেন। কিন্তু ভিটামিন জাতীয় যে ঔষধগুলো আছে, সেগুলো না খেয়ে দেশীয় ফলফলাদি খেলেই ভাল হয়। এ ক্ষেত্রে যারা ফার্মেসীতে ওষুধ বিক্রি করেন, তারাও লোকজনকে দেশীয় শাকসব্জি খাওয়ার পরামর্শ দিতে পারেন।
সঞ্চালনায় ছিলেন বাংলাদেশ কেমিস্ট এ- ড্রাগিষ্ট সমিতি চাঁদপুর জেলা শাখার সহ-সভাপতি সুভাস সাহা। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা প্রাণিস্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ বখতিয়ার হোসেন, সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডাঃ মোঃ শাখাওয়াত হোসেন, বাংলাদেশ কেমিস্ট এ- ড্রাগিষ্ট সমিতি চাঁদপুর জেলা শাখার সভাপতি মোস্তফা রুহুল আনোয়ার।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর চাঁদপুর জেলা কার্যালয়ের সহকারী উপণ্ডপরিচালক মৌসুমী আক্তার।
উপস্থিত ছিলেন কেমিস্ট এ- ড্রাগিষ্ট সমিতি চাঁদপুর জেলা শাখার সিনিয়র সহ-সভাপতি নজরুল আমিন সাজু, সহ-সভাপতি হুমায়ুন কবির খান, কার্যকরি কমিটির সদস্য আবু ইউসুফ তালুকদার, মনির হোসেন গাজী, মো. নেহাল হোসেন মজুমদার, মিজানুর রহমান গাজীসহ বিভিন্ন উপজেলার দুই শতাধিক কেমিষ্ট ও ওষুধ ব্যবসায়ী।
আলোচনা সভা পূর্বে সচেতনতা সপ্তাহ উপলক্ষে চাঁদপুর প্রেসক্লাব সম্মুখ থেকে বের হয়ে শহর প্রদক্ষিণ করে পুনরায় একই স্থানে এসে শেষ হয়। অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদেরকে বাংলাদেশ কেমিস্ট এ- ড্রাগিষ্ট সমিতি চাঁদপুর জেলা শাখা ও ওষুধ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেয়া হয়।