মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে সম্পত্তি আত্মসাধের চেষ্টায় একটি পক্ষ দীর্ঘদিন যাবৎ নানা ভাবে অত্যাচার করে আসছে অসহায় হতদরিদ্র একটি পরিবারের প্রতি। প্রায় ৪ বছর ধরে কয়েকদফা মারধর ও নানা ভাবে হয়রানি করছে বিরোধী পক্ষ। ভূক্তভোগীরা দীর্ঘদিনে কারো কাছে গিয়ে কোন বিচার না পেয়ে আদালতের স্মরণাপন্ন হয়েছেন। গত ৯ নভেম্বর মুন্সীগঞ্জ বিজ্ঞ আমলী আদালত ০২, একটি সি,আর মামলা হয়, যার নং ৪৫৩/২০২২। মামলাটির আদেশনামা গত ১৬ নভেম্বর সিরাজদিখান থানা ওসিকে পাঠানো হয়। সি,আর মামলাটি তদন্তপূর্বক আমলে নিয়ে সিরাজদিখান থানায় নিয়মিত মামলা রুজু করার জন্য বিজ্ঞ আদালত আদেশ দেন।
জানাযায়, উপজেলার মালখানগর ইউনিয়নের ফুরশাইল গ্রামে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন মৃত সিরাজ মিয়ার স্ত্রী তাসলিমা (৫২) তিনি ছেলে মনসুর (৩২) ও মেয়ে সেলিনা আক্তারকে (৩০) নিয়ে বসবাস করছেন। গত ৭ বছর আগে ৭ শতাংশ সরকারি জমি আগের ভোগ দখলদারের নিকট থেকে ভোগদখল ক্রয় করে বসবাস করে আসছেন। স্বামী সিরাজ মিয়া গত ৪ বছর আগে মৃত্যুবরণ করেন। এরপর থেকে একই গ্রামের কালাম (৪৫), কাজল (৪০), আল-আমিন (৩৪) আরিফ (৩২), শরীফ (২৬) সর্ব পিতা মৃত হাসেম মিয়া, আকলিমা (৩৭) ও মো. হোসেন (৫৪)সহ তাদের স্বজনরা আত্যাচার করে আসছেন। ওই ৭ জনকে আসামি করে সি,আর মামলা করেন বাদী সেলিনা আক্তার।
গত ৩০ অক্টোবর রোববার বিড়াল মারার অজুহাতে মা ও মেয়েকে বেধম মারধর করে ওই ৬/৭ জন মিলে। কেউ শাবল, কেউ বাঁশ, কেউ কাঠ দিয়ে পিঠিয়ে তাসলিমাকে নিলাফুলা যখম করে এবং মেয়ে সেলিনাকে লোহার শাবল দিয়ে পিটিয়ে ডান হাত ভেঙ্গে দেয় এবং শরীরে রক্তাক্ত যখম করে। এরপর এলাকাবাসীর সহযোগিতায় প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়, জরুরী বিভাগের চিকৎসক সেলিনা ও তার তার মা তাসলিমাকে ঢাকা মিটফোর্ড হাসপাতালে রেফার করেন। কিছুটা শারীরিক উন্নতি হলে গত ৭ নভেম্বর আদালতে গিয়ে পিটিশন মামলা দায়ের করেন সেলিনা। এরপর স্বাস্থ্যের অবনতি হলে আবার সেলিনাকে মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে ভরি আছেন। তার শারীরিক অবস্থা সঙ্কটাপন্ন।
বিধবা তাসলিমা জানান, ২০১৮ সালে আমার মেয়েকে বিবাদীরা মেরে মাথা ফাটিয়ে দেয়, সি,আর মামলা নং ২৮/১৮, তারিখ ০৮-০২-২০১৮। গত ১০-১২-২০২১ আমার লীজকৃত জায়গা থেকে বিবাদীরা ৩ টি বড় গাছ কেটে নেয়। বাধা দিলে আমাকেসহ ছেলে ও মেয়েকে মারধর করে, আমি থানায় অভিযোগ করি। এরপর ০৫ আগস্ট ২০২২ মালখানগর ইউনিয়ন পরিষদে অভিযোগ করি, আমার বাড়ীর উপর তাদের বাড়ি ও বিল্ডিং এর পানি নামানোয় আমার জায়গার মাটি ভেঙ্গে যাওয়ায়। সেখানেও কোন বিচার পাই নাই। পরে আমি নানা অত্যাচার সইতে না পেরে ১৫ অক্টোবর ২০২২ ইং থানায় অভিযোগ করি। গত ৩০ অক্টোবর ২০২২ ইং সকাল ৯টায় বিবাদীরা আমাদের বলে তাদের বিড়াল নাকি আমরা মেরে ফেলেছি! এরপর দুপুরে তাদের বাড়ির লোকজন এসে আমাদের মারধর করে রক্তাক্ত যখমসহ আমার মেয়ের ডান হাত শাবল দিয়ে আঘাত করে ভেঙ্গে ফেলে। আমরা কি এ অত্যাচার থেকে রেহাই পাবো না?
হাতভাঙ্গা ভুক্তভোগী সেলিনা বেগম জানান, আমরা কি অপরাধ করেছি জানিনা, তবে এটুকু বলতে পারি আমাদের লীজের ৭ শতাংশ জমি থেকে তারা আমাদের অত্যাচার করে তাড়িয়ে দিতে চায়। তারা বড় পরিবার ৪০/৫০ জন লোক, আমরা মাত্র ৩ জন। মেম্বার, চেয়ারম্যান এমনকি থানায় গিয়েও কোন ব্যবস্থা পাই না। আগে দুই মামলায় একবার এস আই সবুর খান, আরেকবার এএস আই রিপন আসেন, কিন্তু সঠিক কি তা তারা কেন বুঝে না। আমরা কোন উপায় না পেয়ে আদালতের স্মরনাপন্ন হই। আমার ভাইকে মারতে মারতে দীর্ঘদিনে পাগল বানিয়েছে তারা। আমার মাথা ফাটিয়েছে, এবার আমার হাত ভেঙ্গেছে। আমরা কি বিচার পাবো না, আমাদের পাশে কি কেউ দাড়াবে না। এত অত্যাচার আর সইতে পারছি না।
বিবাদী কালাম জানান, আমরা ৩ ভাই ঢাকায় থাকি, শুক্রবার গ্রামে আসি, রোববার বিড়াল মারা যায় তাদের ঘরের সামনে তারা লাঠি দিয়া অথবা কিছু খাওয়াইয়া মারছে। আমরা তাদের মারি নাই, যদি কোন সাক্ষি থাকে বা আমরা মারছি প্রমাণ দিতে পারে তবে যা শাস্তি হয় মেনে নিব। এসব মিথ্যা মামলা তারা দিচ্ছে। তাদের কোন জায়গা নাই, আমি লীজ দেই ২১ শতাংশ জায়গার। তারা ৭ শতাংশে থাকে ওখানে অন্য একজনকে থাকতে দিছিলাম, সে তাদের দিয়ে চলে গেছে। তাদের কোন কাগজপত্র নাই। তারা বার বার আমাদের নামে মিথ্যা মামলা করে। ২ টা মামলা বাতিল হইছে। আমরাও দুইটা মামলা দিছি।
সিরাজদিখান থানা অফিসার ইনচার্জ একেএম মিজানুল হক বলেন, থানায় কেউ কোন অভিযোগ করেনি। কোর্ট পিটিশন হয়েছে, বিজ্ঞ আদালত নির্দেশ দিয়েছে তদন্ত করে নিয়মিত মামলা রুজু করতে, তদন্ত চলছে।