২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ফেরত না দেওয়ার অভিযোগে করা একটি মামলায় পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার ১২ জন কৃষককে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ। এর আগে তাদের বিরুদ্ধে গত বুধবার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন পাবনার সিনিয়র জুডিশিয়াল আদালত। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত তাঁদের মধ্যে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। দুপুরে তাঁদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ঋণের টাকা পরিশোধ করার পরও তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে বলে অভিযোগ ভূক্তভোগী পরিবারের।
গ্রেপ্তারকৃত কৃষকদের বরাত দিয়ে ঈশ্বরদী থানা পুলিশ বলছে, বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক নামের একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়েছিলেন ওই কৃষকেরা।
গ্রেপ্তার ১২ কৃষক হলেন, উপজেলার ছলিমপুর ইউনিয়নের ভাড়ইমারি গ্রামের শুকুর প্রামাণিকের ছেলে আলম প্রামাণিক (৫০), মনি ম-লের ছেলে মাহাতাব ম-ল (৪৫), মৃত সোবহান ম-লের ছেলে আবদুল গণি ম-ল (৫০), কামাল প্রামাণিকের ছেলে শামীম হোসেন (৪৫), মৃত আয়েজ উদ্দিনের ছেলে সামাদ প্রামাণিক (৪৩), মৃত সামির উদ্দিনের ছেলে নূর বক্স (৪৫), রিয়াজ উদ্দিনের ছেলে আকরাম আলী (৪৬), লালু খাঁর ছেলে রজব আলী (৪০), মৃত কোরবান আলীর ছেলে কিতাব আলী (৫০), হারেজ মিয়ার ছেলে হান্নান মিয়া (৪৩), মৃত আবুল হোসেনের ছেলে মজনু হোসেন (৪০) ও মৃত আখের উদ্দিনের ছেলে আতিয়ার রহমান (৫০)। তাঁরা সবাই প্রান্তিক কৃষক।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক থেকে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা করে ঋণ নিয়েছিলেন ঈশ্বরদী উপজেলার ৩৭ জন কৃষক। এই ঋণ ফেরত না দেওয়ার অভিযোগে ২০২১ সালে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে। পরে আদালত তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতেই থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করে।
শনিবার (২৬ নভেম্বর) দুপরে ভাড়ইমারি গ্রামের গিয়ে দেখা যায় গ্রেপ্তার আতঙ্গে অনেক পরিবারের সদস্যরা বাড়ি ছাড়া। রজব আলীর স্ত্রী বুলি খাতুন অভিযোগ করে বলেন, ঋণের টাকা ২০১৭ সালের ২৯ জানুয়ারি সসমিতির পাওয়া ৩৭ হাজার৭শ ৭৩ টাকা জমা দিয়ে পরিশোধের রশিদ থাকলেও তার স্বমী রজব আলীর নামে মামলা হয়েছে। এই মামলায় তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। শুধু রজব আলীই নয় তার মত বেশ কয়েকজন কৃষক রয়েছেন তাদেরও একই অবস্থা বলছেন গ্রামের সাধারণ কৃষক।
গ্রামের অনেক কৃষকের অভিযোগ, স্থানীয় মহিলা ইউপি সদস্য বিলকিস খাতুন, ঐ সমিতির গ্রুপ লিডার হয়ে গ্রামের এইসকল কৃষকদের টাকা উত্তোলন করে সমিতিতে জমা না দিয়ে তিনি আত্মসাৎ করেছেন। তবে এ বিষয়ে ওই মহিলা ইউপি সদস্যের বাড়িতে গিয়ে তার বাড়ির গেটে তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। মুঠোফনে তার সাথে যোগযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে রাজি হননি।
ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অরবিন্দ সরকার বলেন, ২০২১ সালে ওই ৩৭ কৃষকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। পরে আদালত গত বুধবার তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। আদালতের আদেশের ভিত্তিতে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কৃষকেরা দাবি করেন, তাঁরা ঋণের টাকা পরিশোধ করেছেন। এরপর কেন মামলা হলো, তা তাঁরা জানেন না। বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংকের জেলা কার্যালয় পাবনা শহরের এলএমবি মার্কেটে। এ বিষয়ে শনিবার দুপুরে সেখানে গিয়ে ওই কার্যালয় বন্ধ পাওয়া যায়।