স্ট্রোক মূলত আমাদের মস্তিষ্কে সূক্ষ্ম রক্তনালির সমস্যাজনিত একটি অবস্থা। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সাধারণত স্ট্রোকে আক্রান্তদের মধ্যে ১০ শতাংশ লোক স্ট্রোক-পরবর্তী বিভিন্ন ধরনের ব্যথায় ভুগে থাকেন। এই ধরনের ব্যথাকে বলা হয় স্ট্রোক-পরবর্তী ব্যথা বা থ্যালামিক পেইন বা সেন্ট্রাল পেইন বা সেন্ট্রাল পোস্ট স্ট্রোক পেইন।
ব্যথার লক্ষণ
লক্ষণ ও গতি-প্রকৃতি নির্ভর করে মেজর বা মাইনর স্ট্রোকের ওপর।
এ ধরনের ব্যথা মূলত জ্বালাপোড়া, খোঁচা লাগা বা পিন ও নিডল প্রিকের মতো মনে হয়। এ ধরনের ব্যথার একটি মূল সমস্যা হচ্ছে, এটা সব সময়ই হতে পারে এবং সময়ের সঙ্গে ব্যথার কষ্ট বাড়ে।
কেন স্ট্রোকের পরে ব্যথা হয়?
স্ট্রোকে শরীরের বিভিন্ন অংশের নিয়ন্ত্রণ ব্যাহত হতে পারে। যে কারণে বিভিন্ন জয়েন্ট শক্ত হয়ে যাওয়া ও এর নড়াচড়া কমে যাওয়া অথবা পুরো শরীরের মাংস বেশি শক্ত হয়ে যাওয়া বা স্টিফ হয়ে ব্যথা হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ফ্রোজেন শোল্ডার অথবা শোল্ডার ডিসলোকেশন বা কাঁধ ছুটে গিয়ে ব্যথা হতে পারে।
স্ট্রোক-পরবর্তী ব্যথা নিরাময়ে করণীয়
♦ প্রাথমিকভাবে স্ট্রোকের পরে তাৎক্ষণিক অসুস্থতাজনিত চিকিৎসা শেষ হলে বা হাসপাতালের চিকিৎসা শেষ হলে যখন রোগীকে বাসায় দেওয়া হয়, তখন বাসায় নিজেদের লোকের মাধ্যমে কিছু শারীরিক ফিজিওথেরাপি প্রয়োগ করা সম্ভব। এদের মধ্যে অন্যতম শরীরের প্রত্যেকটি জয়েন্টকে নাড়াচাড়া করিয়ে দেওয়া, শরীরের বিভিন্ন মাংসপেশিতে ম্যাসাজ দেওয়া। তবে অত্যধিক জোরে এই কাজগুলো করা যাবে না।
♦ মেশিনের মাধ্যমে ফিজিওথেরাপি প্রয়োগ করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রশিক্ষিত ফিজিওথেরাপিস্টের সাহায্য নিয়ে এবং একজন ফিজিয়াট্রিস্টের পরামর্শ নিয়ে এ ধরনের ফিজিওথেরাপি প্রয়োগ করা উচিত।
♦ অত্যাধুনিক পেইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের সহযোগিতা নিয়ে কিছু ইনজেকশন পদ্ধতির মাধ্যমেও এ ধরনের ব্যথার উন্নতি করা সম্ভব। যেমন : নার্ভ ব্লক, কাঁধের ব্যথায় হাইড্রোডিসটেনশন ও বেকলোফেন পাম্প স্থাপন ইত্যাদি। এ ক্ষেত্রে ব্যথার সুনির্দিষ্ট কারণ দূর করা সম্ভব।
♦ এসব চিকিৎসা ছাড়াও চায়নিজ ট্র্যাডিশনাল কিছু চিকিৎসা রয়েছে যেমন : টিইএনএস, আকুপাংচার-এগুলো ব্যথা নিরাময়ে কিছু ভূমিকা রাখে।
সর্বোপরি স্ট্রোক-পরবর্তী হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পরে সতর্ক থাকলে বা কাছ থেকে রোগীকে দেখাশোনা করলে এবং নির্দেশনাগুলো মেনে চললে স্ট্রোক-পরবর্তী ব্যথার তীব্রতা কমে যায় এবং অনেক ক্ষেত্রে জীবন ধারণের জন্য সহনীয় হয়।
পরামর্শ দিয়েছেন
ডা. মো. আহাদ হোসেন
কনসালট্যান্ট ও ব্যথা বিশেষজ্ঞ
বাংলাদেশ সেন্টার ফর রিহ্যাবিলিটেশন, কাঁটাবন, ঢাকা