প্রতি বছরই ভাঙ্গছে গড়াই নদীর পাড় আর এই অবিরাম ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলার ৬নং সারুটিয়া ও ৭ নং হাকিমপুর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম। অনেকের বসতবাড়ি বিলীন হয়ে গেলেও নতুন করে হুমকির মুখে এসব গ্রামের শত শত বসতবাড়ি সেইসাথে গুচ্ছ গ্রাম ও আশ্রয়ণ প্রকল্পের অনেক বাড়ি। নদীগর্ভে বসতভিটা হারিয়ে অনেকেই এখন নিঃস্ব। তবে দেরীতে হলেও কিছুটা স্বস্তির নিঃশ^াস ফেলেছে নদী পাড়ের ভূূক্তোভোগী মানুষ। নদীতে ভাঙন রোধে ফেলা হচ্ছে জিও ব্যাগ।স্থানীয়দের দাবি, জিও ব্যাগ ফেলে কোনো অবস্থাতেই গড়াইয়ের ভাঙন রোধ করা সম্ভব নয়। এজন্য প্রয়োজন স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ।
ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বড়-রিয়া, কেশনগর ও মাদলা এলাকার কয়েকটি স্থানে ৬টি প্যাকেজের মাধ্যমে প্রতি প্যাকেজে ৮৩৩৬ জিও ব্যাগ ফেলার আদেশ হয়েছে। প্রতি প্যাকেজ ৩০ লক্ষ টাকা করে ৬টি প্যাকেজে সর্বমোট ১ কোটি ৮০ লক্ষ টাকায় ৫০ হাজার ১৬ জিও ব্যাগ ফেলার আদেশের কাজ চলমান রয়েছে।তবে চাহিদার তুলনায় একেবারেই কম বলে জানান, নদীপাড়ে বসবাসরত স্থানীয়রা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ২ যুগেরও বেশী সময় ভাঙন রোধে ক্ষতিগ্রস্থ এসব এলাকায় সরকারী কোন উদ্যোগ গ্রহন করা হয়নি এমনকি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধও চোখে পড়ে না। নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে আবাদি জমি, বসতভিটা, রাস্তা-ঘাটসহ গাছপালা। নিঃস্ব হয়ে পড়েছে নদীপাড়ের কয়েকশ পরিবার। কেউবা ভাঙন আতঙ্কে ছাড়ছে চিরচেনা বসতভিটা। হুমকির মুখে রয়েছে শত শত একর ফসলি জমি ও বসতভিটা। দুই যুগ ধরে একে একে গড়াই নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে বদলে গেছে উপজেলার এই ইউনিয়নের বড় একটি অংশের চিত্র। ভিটেবাড়ি, জমিজমা সহায়-সম্বল হারিয়ে কেউ আশ্রয় নিয়েছেন ওপারে জেগে ওঠা চরে কেউবা নিরাপদ আশ্রয়ে।বর্তমান দেরীতে হলেও নদীর ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ড ঠিকাদারদের মাধ্যমে উপজেলার সারুটিয়া ইউনিয়নের বড়-িলয়া, কেশনগর ও মাদলা গ্রামে এসব জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু করেছে।
আমজাদ হোসেন নামের এক গড়াই পাড়ের সারুটিয়া ইউনিয়নের বড়-লিয়া এলাকার বাসিন্দা বলেন, ‘জিও ব্যাগ দিয়ে নদী ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু ভরা নদীতে এসব ব্যাগ দিয়ে ভাঙন রোধ করা সম্ভব নয়। নদীর পাড়ের নিচের অংশে জিওব্যাগ দিয়েও থাকছেনা। স্থায়ী সমাধান দরকার। বসতভিটা নিয়ে আমরা সব সময় আতংকের মধ্যে থাকি।
উপজেলার হাকিমপুর ইউনিয়নের মাদলা এলাকার আঃ গণি নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘ নদী ভাঙন এ এলাকায় প্রতি বছরই হয়, সাধারণ মানুষরা অসহায় হয়ে পড়ে। নদীতে যখন পানি থাকে না, তখন ভাঙন রোধে প্রস্ততি নিয়ে কিছুটা হলেও ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। ভরা নদীতে জিও ব্যাগ ফেলে সমস্যা সমাধান হবে না। নদীর ¯্রােতের সময় এসব জিও ব্যাগ থাকবে না।তাই প্রয়োজন স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের।’
উপজেলার ৬নং সারুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান বলেন, আমার ইউনিয়নের বড়-রিয়া ও কেশনগর এলাকায় কিছু জিও ব্যাগ নদীতে ফেলা হচ্ছে যা চাহিদার তুলনায় একেবারেই কম। তাছাড়াও এসব জিও ব্যাগ ফেলে তেমন কোন লাভ হবে না। স্থায়ী সমাধানের জন্য দরকার স্থায়ী বাাঁধ।
উপজেলার ৭নং হাকিমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান জিকু বলেন, আমার ইউনিয়নের মাদলা এলাকায় সামান্য কিছু জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে তবে কোন কাজ হবে বলে আমার মনে হয় না। স্থায়ীভাবে নদীর পাড় দিয়ে বাঁধ নির্মান করলে নদীপাড়ে বসবাসরত সাধারণ মানুষের অনেক উপকার হবে। তাই সরকারের কাছে স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মানের দাবী জানাচ্ছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) বনি আমিন বলেন, প্রথমে সাংবাদিকদের মাধ্যমে জানতে পারি গড়াই নদীর ভাঙ্গনের খবর এরপর আমরা ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলি। যাই হোক জিও ব্যাগ ফেলার খবরে আমি খুব খুশি। তবে কিভাবে স্থায়ী সমাধান করা যায় সেদিকে সবার সাথে আলোচনা সাপেক্ষে নজর দেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান বলেন, ইতোমধ্যে ওই ্এলাকাতে জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। তবে স্থায়ী প্রতিরক্ষামূলক কাজ বাসÍবায়নের জন্য প্রকল্প দাখিল করা হয়েছে যদি পাশ হয় তবে স্থায়ী কাজ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।