মাস কলাইয়ের ডাল কয়েক ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে মিলে ভাঙ্গানোর পর তার সাথে পাকা চাল কুমড়া, মুলা কিংবা অন্যান্য সবজি ভাল করে ফেনিয়ে মিশিয়ে তৈরী করা হয় শীত কালের উপাদেয় খাবার কুমড়া বড়ি। গত ১ সপ্তাহ পূর্বে কিছুটা শীতের আমেজ শুরু হয়েছে যদিও হাড়কাঁপানো শীত এখনো শুরু হয়নি। তবুও ঝিনাইদহ কালীগঞ্জে অনেকেই কুমড়া বড়ি তৈরি ও বাজারজাত করণের কাজ শুরু করেছেন। মুখরোচক হওয়ায় কালীগঞ্জের ভোজন বিলাসীরা শোল, টাকি, ফাতাসি, টেংরা মাছ, ডিমসহ বিভিন্ন মাছ কুমড়া বড়ি দিয়ে রান্না করে খেতে পছন্দ করেন। যদিও দেশের অন্যান্য জেলার লোকজন বড়ি কি তা চেনেনা। তবে দেশ থেকে প্রবাসীরা বিদেশে যাওয়ার সময় কুমড়ার বড়ি এখন অনেকের কাছেই পরিচিত। ইন্দোনেশিয়া ও মালেশিয়ার অনেক মহিলাদের কাছেও কুমড়ার বড়ি পরিচিতি লাভ করেছে।
কালীগঞ্জ উপজেলায় বিভিন্ন এলাকার প্রায় প্রতিটা পরিবার কুমড়ার বড়ি তৈরি করে থাকেন।
এ উপজেলার প্রতিটা পরিবারের একেকজন একেকটা কুমড়া বড়ি তৈরির কারিগর।উপজেলার প্রায় প্রতিটা গ্রামেই রয়েছে কুমড়া থেকে বড়ি তৈরির উপযোগী কুমড়া ও ডাল ভাঙানো মেশিন। অনেক রাইচ মিলেও এ মেশিন রয়েছে। ভোর থেকে শুরু করে সকাল ৯/১০ টা অবধি এসব মেশিন দ্বারা কুমড়া ও ডাল কুটানো/ভাঙানো হয়ে থাকে। গ্রাম এলাকার কয়েকজন মিল মালিক জানান, বছরের প্রায় ২/৩ মাস আমরা কুমড়া বড়ি তৈরির জন্য কুমড়া কুটে থাকি। হাড়কাঁপানো শীততে আমাদের আরাম নেই।
গ্রামের অধিকাংশ মহিলাই মাস কলাইয়ের পাশাপাশি খেশারী, ছোলা ও এ্যাংকর ডাল ভিজিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে মিলে ভাঙ্গিয়ে থাকে। এরপর খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে এগুলি পাকা কুমড়া কিংবা মুলা দিয়ে ভাল করে ফেনিয়ে পলিথিনের প্যাকেটে ভরে পলিথিনের নিচের দিকের কোনা পরিমান মতো কেটে সে অংশ দিয়ে টিনের তৈলাক্ত মাচায় কিংবা মইয়ের উপর বাঁশের চাটাই দিয়ে তার উপর বড়ি দেয়। কুমড়া বড়ি তৈরিতে এ এলাকার মহিলারা পাকা উস্তাদ তারা কুমড়া বড়ি রোদে শুকিয়ে শক্ত হয়ে গেলে উঠিয়ে রাখে। উঠিয়ে রাখার জন্য ২/৩ দিন রোদে রাখে যাতে করে সকল বড়ি সমান ভাবে রোদ পায়। ভাল রোদ হলে দুই দিনেই শুকিয়ে যায় কুমড়া বড়ি। শুকোনোর পর বাড়ির পুরুষ সদস্যরা সেগুলি পার্শ্ববর্তী বাজারসহ স্থানীয় হাট বাজারে বিক্রি করেন।
উপজেলার কয়েকজন কুমড়া বড়ি তৈরির মহিলা জানান, গত বছরের চেয়ে এবার সব ধরণের ডালের দাম বেড়েছে। তাছাড়া মাস কলাই সোনার হরিণ হওয়ায় এখনো অনেকেই মাস কলাইয়ের ডালের বড়ি তৈরি শুরু করেনি। উপকরণের দাম বাড়ায় ক্রেতাকে বেশি দামে কুমড়া বড়ি কিনতে হবে। তিনারা আরো জানান, সংসারে অনেক খরচ। তাই বসে না থেকে কুমড়ো বড়ি তৈরি করি। ছেলেরা হাট বাজারে এগুলি বিক্রি করে। এতে বাড়তি কিছু আয় আসে। এ বাড়তি আয়টুকু সংসারে স্বচ্ছলতা আনে।