বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের পর পরই উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা বরিশাল। সংগঠিত হতে শুরু করেন এতদাঞ্চলের মুক্তিপাগল মানুষ। ওইসময় বরিশালে পত্রিকা আসতো একদিন পর। তাই বঙ্গবন্ধু কি বলেছেন, ঢাকার খবর কি? এসব জানতে স্থানীয় নেতাদের বাড়িতে গভীর রাত পর্যন্ত ভিড় করতেন মুক্তিপাগল মানুষ।
বিশেষ করে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ও এমএলএ নুরুল ইসলাম মঞ্জুরের বাসা হয়ে উঠেছিলো মুক্তিপাগল মানুষের সমাবেশস্থল। শহরের পেশকার বাড়ির আঙ্গিনায় মানুষের ঠাঁই দেয়া একসময় অসম্ভব হয়ে পরে। ওই বাড়ির অপরপ্রান্ত হেমায়েত মঞ্জিলের সামনে এবং কৃষি অফিস চত্বরে মানুষ অবস্থান করতো মধ্যরাত পর্যন্ত। প্রচন্ড উদ্বেগ ও উৎকন্ঠার মধ্যে পরবর্তী নির্দেশ পাওয়ার জন্য অস্থির ছিলেন বরিশালের মুক্তিকামী মানুষ।
বরিশাল শহরে স্থায়ী মঞ্চ করে প্রতিদিন চলতে থাকে প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও গণসংগীত। পরবর্তীতে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বরিশালে চালু করা হয় ‘স্বাধীন বাংলার দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রথম সচিবালয়’। যা একমাস কার্যকর ছিলো। সেখান থেকেই মুক্তিযুদ্ধে বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের প্রশাসনিক কার্যক্রম ও যুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সামরিক সরঞ্জাম, খাদ্য-অর্থ সংগ্রহ ও সরবরাহ করা হতো ওই সচিবালয়ের মাধ্যমে।
বরিশাল অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধের মূল সংগঠক ও তৎকালীন এমএলএ নুরুল ইসলাম মঞ্জুরের আত্মজীবনীমূলক বইয়ে এসব তথ্য তুলে ধরে উল্লেখ করা হয়েছে, স্বাধীন বাংলার দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রথম সচিবালয় স্থাপন করা হয়েছিল বর্তমান বরিশাল সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখানে পরে স্থাপন করা হয় ‘স্বাধীন বাংলার দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রথম সচিবালয়’র একটি স্মারক।
বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম মঞ্জুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকারের একজন মন্ত্রী ছিলেন। তার প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে দক্ষিণাঞ্চল’ বইয়ে তিনি উল্লেখ করেছেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের শেষদিকে যা বলেছেন তার নিরপেক্ষ বিচার-বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট করেই বোঝা যাবে ওইদিনই (৭ মার্চ) বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। ফলশ্রুতিতে ৭ মার্চের ভাষনের পর থেকেই বরিশালে শুরু হয়ে যায় যুদ্ধের প্রস্তুতি।