স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, বিএনপি সমাবেশের নামে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নষ্ট করলে ভুল করবে। ১০ ডিসেম্বর যদি খালেদা জিয়া সমাবেশে যোগ দেন তাহলে আদালত ব্যবস্থা নেবেন। বুধবার দুপুরে রাজধানীর রাজারবাগে ‘নারী পুলিশের গৌরবময় যাত্রা ও অর্জন ১৯৭৪-২০২২’ প্রতিপাদ্যে বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্কের বার্ষিক প্রশিক্ষণ সম্মেলন-২০২২ অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সুন্দর পরিবেশের জন্যই তাদের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বিএনপি দুটি জায়গার কথা বলেছে- সোহরাওয়ার্দী ও মানিক মিয়া এভিনিউয়ে (সংসদ ভবনের সামনে)। তাদের দাবির বিষয়টি লক্ষ্য রেখেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। যদি সমাবেশে খালেদা জিয়া যোগদান করেন, তার জামিন বাতিল হবে কি না সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে শর্তসাপেক্ষে আদালত জামিন দিয়েছেন। তিনি যদি সমাবেশে যান, সে বিষয়ে আদালত ব্যবস্থা নেবেন। সরকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু বিএনপি সেখানে যাবে না। সরকার কী নিজেই ১০ ডিসেম্বর অরাজক পরিস্থিতি তৈরির সৃষ্টি করছে কি না? সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই অরাজক পরিস্থিতি যাতে না হয় তার ব্যবস্থা করতে। বিএনপি যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে সমাবেশ করতে পারে সেজন্য সোহরাওয়ার্দীতে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বিএনপি প্রথমে বলেছিল সমাবেশে অনেক লোকের সমাগম করবে। তারা দুটি জায়গা চেয়েছিল। একটি সোহরাওয়ার্দী উদ্যান আরেকটি মানিক মিয়া এভিনিউ। মানিক মিয়া এভিনিউতে জাতীয় সংসদ ভবন রয়েছে। সেখানে কাউকে সমাবেশ করতে দেওয়া হয় না। বিএনপির দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান দেওয়া হয়েছে। আমরা সবসময় বলে আসছি আপনাদের (বিএনপি) পার্টির যেকোনো কার্যক্রম করতে চান অবশ্যই করবেন। এটা রাজনৈতিক অধিকার। কিন্তু আপনারা কোনোক্রমেই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করতে পারবেন না এবং তার চেষ্টাও করবেন না। এখন বিএনপি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে চাচ্ছে না। তারা নয়াপল্টনে সমাবেশ করার কথা গত মঙ্গলবারও বলেছে। সেক্ষেত্রে আপনাদের ভূমিকা কী হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আপনারা নিশ্চয়ই জানেন নয়াপল্টনের রাস্তার অবস্থা। ওই রাস্তায় যদি তারা সমাবেশ করে আর বলছেন লাখ লাখ লোকের সমাগম করবেন। তাহলে ওই রাস্তার অবস্থা কী হবে? এসব বিষয় চিন্তা করেও তাদের একটা বড় জায়গায় সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমি একটি কথা স্পষ্ট করে বলতে চাই, বিএনপি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করলে ভুল করবে। অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মাঠ পর্যায়ে পুলিশি কাজের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নারী পুলিশ কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে চলেছে। নারী পুলিশ সদস্যরা বর্তমানে পাইলট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী পদক্ষেপে নারী পুলিশের সংখ্যা কয়েকটি ধাপে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ১৫ হাজার ৫৬১ জন হয়েছে। যা সামগ্রিক পুলিশ সদস্যের ৮.১৯%। মাঠ পর্যায়ের পুলিশি কাজের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নারী পুলিশ কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে চলেছে। জেলা পুলিশ, মেট্রো পুলিশসহ বিশেষায়িত নৌ-পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ, রেলওয়ে ও হাইওয়ে পুলিশ এবং শিল্প পুলিশে নারী পুলিশ সদস্যের কার্যক্রমে গতি সঞ্চার হয়েছে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালে স্পেশাল ব্রাঞ্চে পোষাকে সর্বপ্রথম ১৪ জন নারী পুলিশ সদস্য নিয়োগের মাধ্যমে এ যুগান্তরকারী পদক্ষেপ নেন। পরে নানা বাধাবিঘ্ন পেরিয়ে নারীদের যে পথচলা অব্যাহত থাকে সেক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতা, দৃঢ়তা, ও সদিচ্ছা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছে। তিনি জনমুখী পুলিশিং ব্যবস্থা প্রবর্তনসহ নারীর ক্ষমতায়ন ও দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠী নারী ও শিশুর জন্য জেন্ডার সংবেদনশীল সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রথাগত পেশার বাইরে পুলিশসহ বিবিধ ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণের জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। মন্ত্রী আরও বলেন, সাতটি মেট্রোপুলিশসহ পার্বত্য রাঙ্গামাটি জেলার ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার সহিংসতার শিকার নারী শিশুর চিকিৎসা সহায়তা, আইনগত ব্যবস্থা, সাময়িক আশ্রয়দানসহ মনো-সামাজিক কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে নিষ্ঠার সঙ্গে জেন্ডার সংবেদনশীল সেবা দানে নিয়োজিত রয়েছে। আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, রোহিঙ্গা নাগরিকদের অস্থায়ী ক্যাম্প গুলোতে নারী শিশুর নিরাপত্তায় পুলিশের নারী সদস্যরা আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছে। মামলা তদন্ত, ফরেনসিক, জঙ্গি দমন, গোয়েন্দা কার্যক্রম, বিমান চালনা, ভিভিআইপি প্রটেকশন, ইমিগ্রেশন সর্বোপরি জাতীয় জরুরী সেবা-৯৯৯ প্রভৃতি ক্ষেত্রে আমাদের পুলিশের নারী সদস্যরা দক্ষতার স্বাক্ষর রাখছে বলেও যোগ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। মন্ত্রী আরও বলেন, মুজিববর্ষের অঙ্গীকার হিসেবে সমগ্র দেশের থানাগুলোতে নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী সহায়তা ডেস্কের কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে যা বাংলাদেশের প্রত্যন্ত এলাকার সুবিধা বঞ্চিত ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সেবা দানের ক্ষেত্রে অনন্য মাত্রা যোগ করবে বলে আমার বিশ্বাস। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ গ্রহণ, দেশ-বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে নারী পুলিশ পেশাগত দক্ষতার উন্নয়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্ক (বিপিডব্লিউএন) নারী পুলিশের চলার পথকে সুগম করতে যেমন পেশাগত উন্নয়নে অবদান রাখছে তেমনি কমিউনিটির মধ্যেও জেন্ডার ভিত্তিক অপরাধ বিষয়ক সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করছে বলেও উল্লেখ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নারী পুলিশের অবদান সংবলিত প্রকাশনা-‘পুলিশ উইমেন ইন ব্লু হেলমেট: টেল অব সাকসেস অ্যান্ড প্রাইড’ এ বইটি পড়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নারীর কাজ করার ক্ষেত্রে অধিকতর আগ্রহী ও সংকল্পবদ্ধ হবে। অ্যাডিশনাল আইজি (অবসরপ্রাপ্ত) ফাতেমা বেগমের ‘আমার পুলিশ হওয়া’ গ্রন্থটি চ্যালেঞ্জিং পেশায় নারীদের উদ্বুদ্ধ করবে। বিপিডব্লিউএন এর এ ধরনের অনুপ্রেরণামূলক প্রকাশনার উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই। দুই দিন ব্যাপী বিপিডব্লিউএন-এর বার্ষিক প্রশিক্ষণ সম্মেলন-২০২২ এ বাংলাদেশ পুলিশের পেশাদারিত্ব, নেতৃত্ব, শৃঙ্খলা, ড্রেস রুলস ও ক্যারিয়ার প্ল্যান, সাইবার অপরাধ, কেস এ্যানালাইসিস নারীর জন্য সচেতনতা সৃষ্টি, সংবেদনশীল সেবা দান ও প্রযুক্তিগত দক্ষতার উন্নয়ন, মাঠ পর্যায়ের পুলিশিং চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় করণীয়, নারীর ক্ষমতায়ন ও জেন্ডার সমতা, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও রূপকল্প ২০৪১, নারীর ক্ষমতায়নে প্রাইভেট ও পাবলিক ওনারশিপ এবং জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে নারী পুলিশের অবদান ও সাফল্যের ধারাবাহিকতা রক্ষায় করণীয়, স্বাস্থ্য সচেতনতা ও স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি বিষয় আলোচিত হবে। বাংলাদেশ উইমেন পুলিশ নেটওয়ার্কের (বিপিডব্লিউএন) সভাপতি ও পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের ডিআইজি (প্রটেকশন আ্যন্ড প্রটোকল) আমেনা বেগমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান প্রমুখ।