নিজ পরিবারকে সুখ-সমৃদ্ধিতে ভরে দিতে জমি বিক্রি করে ধারদেনা করে বিদেশে কাজ করতে গিয়ে স্বপ্ন তো পূরণ হয় নি, বরং নিজ জীবন সংহার হবার অবস্থায় পড়েছেন অনেকে। মুক্তিপণের টাকা দিয়ে দেশে ফিরে সর্বশান্ত হয়েছেন। দেশে এসে মামলা করলেও সে সব মামলা নিষ্পত্তি হচ্ছে না। দীর্ঘ সময় কেটে গেলেও ভুক্তভোগী পরিবার বিচার পাঁচ্ছে না। পুলিশ সদর দপ্তরের হালনাগাদ তথ্য অনুসারে, গত ১৮ বছরে দেশে মানব পাঁচার প্রতিরোধ আইনে মামলা হয়েছে ৭ হাজার ৫১৭ টি। নিষ্পত্তি হয়েছে মাত্র ২৪৭ টি, যা মোট মামলায় মাত্র ৩ দশমিক ২৮ শতাংশ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, ২০২১ সালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মানব পাঁচার সংক্রান্ত ৫৩৫ টি মামলা তদন্ত করেছে। অথচ মানব পাঁচার আইনে একটি মামলার রায় হয়েছে। আর চলতি বছর ১৩ টি মামলার রায় হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের মতে, সারা দেশে মানব পাঁচারের সাথে জড়িত রয়েছেন ৩১ হাজার ১০১ জন। তাদের মধ্যে গত গত ১৮ বছরে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে ১৪ হাজার ৫৩৮ জন। এ সময় মানব পাঁচারকারী চক্রের সদস্যরা ১৩ হাজার ৪২৪ জনকে বিভিন্ন দেশে পাঁচার করেছে। আর সরকারী - বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা উদ্ধার করেছে ১০ হাজার ৫৭৯ জনকে। মানব পাঁচারের মামলায় আট জনের মৃত্যু দণ্ড হয়েছে, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে২৯৯ জনের। ১২৭ জনের অন্যান্য শাস্তি হয়েছে। এক গবেষণা বলছে, ভারত, মালয়েশিয়া, ব্রুনাই, থাইল্যান্ড, ইতালি, গ্রিস, পর্তুগাল ,সাইপ্রাস, স্পেন ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব, ওমান, কাতার, ইরান, বাহরাইন ও লিবিয়ায় বাংলাদেশিদের বেশি পাঁচার করা হয়ে থাকে।
প্রথমে পাঁচার করে নিয়ে যাওয়া হয় ভিন দেশে। সেখানে তাদের বন্দি করে রাখা হয় কখনো কখনো অপহরণ করে নিয়ে বন্দি করা হয়। বন্দি শিবিরে অকথ্য নির্যাতনের ভিডিও করে দেশে স্বজনদের কাছে পাঠানো হয়। সাথে মুক্তিপণ হিসেবে বড় অংকের টাকা চাওয়া হয়। সেই টাকা দেওয়ার পর তাদের দেশে ফিরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়। অবশ্য ফিরত আসার খরচ ভুক্তভোগীকে বহন করতে হয়। আর দুর্ভাগা অনেকেই সেই নির্যাতনে প্রাণ হারিয়ে আপনজনের সুখ- সমৃদ্ধির জীবনের স্বপ্ন মাটি চাপা দেন। এমন নির্মমতা, নিষ্ঠুরতার কি কোনো সভ্য মানুষ মেনে নিতে পারে ? যা হারিয়ে নি:স্ব, রিক্ত মানুষ গুলো আইনের আশ্রয় নেবার পরও তারা বিচার পাঁচ্ছে না। এ দায় করে?
আমাদের সরকার, বিরোধী দলসহ অন্যান্য রাজনৈতিক নেতারা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করার কথা বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলেছেন, কিন্তু পাঁচারকৃত ভুক্তভোগীরা তাদের প্রার্থিত বিচার পাঁচ্ছেন না। সভ্য দেশ গুলোয় তদন্ত সংস্থাসহ প্রসিকিইশন পদত্যাগ করার নজির থাকলেও এদেশে তেমনটি দেখা যায় না। আমরা চাই মানব পাঁচার মামলাগুলো যথার্থই গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত ও বিচার কার্যক্রম দ্রুত শেষে করা হোক।