অস্ট্রেলিয়া এবং ডেনমার্ককে হারিয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই নকআউট পর্ব নিশ্চিত করে ফেলায় তিউনিসিয়ার বিপক্ষে দ্বিতীয় সারির একাদশ নিয়ে মাঠে নেমেছিল ফ্রান্স। নিয়মিত মূল একাদশের ৭-৮ জনকে ছাড়া মাঠে নামার কারণেই কি-না কিছুটা খাপছাড়া ছিল ফরাসিরা।
সেই সুযোগ নিয়েই ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের ১-০ গোলে হারিয়েছে তিউনিশিয়া। তবে এই জয়ের পরেও গ্রুপপর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয়েছে আফ্রিকান দেশটিকে। অন্যদিকে, অপ্রত্যাশিত এই হারের পরেও গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে শেষ ষোলোর টিকিট পেয়েছে ফ্রান্স। অস্ট্রেলিয়ার সমান ৬ পয়েন্ট থাকলেও ফরাসিরা এগিয়ে ছিল গোল ব্যবধানে।
নকআউট পর্বে জায়গা করে নিতে ফরাসিদের বিরুদ্ধে জয়ের বিকল্প ছিল না তিউনিশিয়ার সামনে। বুধবার (৩০ নভেম্বর) কাতারের আল রাইয়ানের এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় সারির দল নিয়ে মাঠে নামা ফ্রান্সের বিরুদ্ধে তাই শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ছিল কার্থেজের ঈগলরা।
৮ মিনিটেই সবাইকে চমকে দিয়ে গোল করে তিউনিশিয়া। তবে অফসাইডের কারণে গোলটি বাতিল হয়ে যায়। ১৭ মিনিটে ম্যাচের আবারও গোলের সুযোগ এসেছিল তিউনিশিয়ার সামনেই। যদিও ফ্রান্সের ডি-বক্সের সামনে একাধিক ডিফেন্ডারের বাধার কারণে বেন সিলমানের বাড়ানো বলে ঠিকমতো শট নেওয়ার সুযোগ পাননি বেন রোমদানে।
প্রথমে কিছুটা বেসামাল থাকলেও ফ্রান্সও ধীরে ধীরে খেলায় ফিরে আসে। ২৫ মিনিটে ডান প্রান্ত থেকে আসা ইউসুফ ফোফানার ক্রসে কিংসেলে কোম্যান মাথা ছোঁয়ালেও তা লক্ষ্যে থাকেনি। নয়ত ফ্রান্স তখনই ম্যাচে এগিয়ে যেতে পারতো।
মধ্যবিরতির আগে আরও দুবার গোলের সুযোগ সৃষ্টি করে তিউনিশিয়া। তবে দুবারই ফ্রান্সের ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হন গোলরক্ষক স্টিভ মানডান্ডাডা। ৩০ মিনিটে আইসসা লাইদুনির ক্রসে বেল সিলমানের হেড ঠেকিয়ে দেন তিনি। ৫ মিনিট পর একইভাবে ৩৫ গজ দূর থেকে ওয়াহবি খাজরির ভলি ফরাসি গোলরক্ষক ফিরিয়ে দিলে গোলশূন্যভাবেই প্রথমার্ধ শেষ হয়।
নকআউট পর্বে ওঠার অদম্য ইচ্ছায় দ্বিতীয়ার্ধেও আক্রমণের ধারা বজায় রাখে তিউনিশিয়া। ৫৮ মিনিটে আফ্রিকান দলটির আক্রমণের তোড়ে দিশেহারা হয়েই কি-না ফ্রান্সের রক্ষণভাগ করে বসলো ভুল। আর সেই সুযোগেই আইসসা লাইদুনির কাছ থেকে বল পেয়ে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন ওয়াহবি খাজরি।
গোল হজম করে পিছিয়ে পড়ার কারণেই মনে হয় খেলোয়াড়দের নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার আশা মিটে গেছিলো দিদিয়ের দেশমের। তাই তো গোল হজমের তিন মিনিট পরেই কিলিয়ান এমবাপ্পে আর আদ্রিয়ান রাবিওটকে মাঠে নামান ফ্রান্স কোচ। ৭৩ এবং ৭৯ মিনিট পর মাঠে নামেন দুই ফরোয়ার্ড আন্তোয়ান গ্রিজম্যান আর ওসমান ডেম্বেলে।
এরপরই যেন পুরো ম্যাচে নিষ্প্রভ থাকা ফ্রান্সের আক্রমণভাগ নতুন উদ্যমে জেগে ওঠে। ৭৯ থেকে ৯০ মিনিটের মাঝে অন্তত পাঁচবার সমতায় ফেরার সুযোগ পেয়েছিল লেস ব্লুজরা। কিন্তু তিউনিসিয়ার গোলরক্ষক আইমেন ডেম্যুানের নৈপুণ্যে আর ফরাসি ফরোয়ার্ডদের ব্যর্থতায় লিড ধরে কার্থেজের ঈগলরা।
নির্ধারিত সময়ের পর যোগ করা সময়েও ফ্রান্সের আক্রমণের ফোয়ারা থামেনি। তবে শেষ মুহূর্তে ঠিকই সমতাসূচক গোলের দেখা পেয়েছিল ফ্রান্স। অরিলিয়েন শুয়ামেনির ক্রসটা ঠিকঠাকভাবে বিপদমুক্ত না করায় গ্রিজমানের নেওয়া নিখুঁত শটে বল জালে জড়িয়ে যায়। কিন্তু শুয়ামেনির ক্রসের সময় গ্রিজম্যান অফসাইডে থাকায় গোলটি বাতিল হয়ে গেলে স্মরণীয় এক জয় নিয়ে মাথা উঁচু করে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেয় তিউনিশিয়া।