ফলের স্বর্গ রাজ্য বলে পরিচিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা থেকে বিজয়নগরের দুরত্ব প্রায় কিলোমিটার। ভারতীয় সীমান্তবর্তী উপজেলা বিজয়নগরের মাটি বিভিন্ন ধরনের ফল চাষের জন্য খুবই উপযোগী। বর্তমানে দেশী ও বিদেশী অনেক ধরনের ফলেরই বাণিজ্যিক চাষ হচ্ছে এই বিজয়নগরে।
সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে জানা গেছে, প্রতি বছর এই উপজেলায় প্রায় ৫০ কোটি টাকার ফল উৎপাদন হয়। উৎপাদিত ফলের মধ্যে রয়েছে লিচু, কাঁঠাল, আম, জাম, পেয়ারা, মালটা ও লটকন। তবে এবার প্রথমবারের মতো বিজয়নগরে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয়েছে রসালো ফল কমলা।৬৫ শতাংশ জমিতে চায়না-থ্রি জাতের কমলার চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন প্রবাস ফেরত মোঃ আলমগীর। এ বছরই বাগান থেকে প্রায় ৫ লাখ টাকার কমলা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন আলমগীর মিয়া।
ফলন ভালো হওয়ায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে, কমলা চাষে আগ্রহ বাড়ছে অন্যান্যা চাষীদের। প্রতিদিন শহর থেকে ভ্রমন পিয়াসুরা বিজয়নগরে যান আলমগীরের কমলার বাগান দেখতে। আলমগীরের কমলা বাগান দেখে এলাকার বেকার যুবকরাও বলছেন কৃষি বিভাগের সহযোগীতা পেলে তারাও অনাবাদি জমি গুলোতে কমলার আবাদ করবেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিজয়নগর উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের দুলালপুর গ্রামের আলমগীর মিয়া দীর্ঘদিন বিদেশে থেকে কয়েক বছর আগে দেশে ফিরেন। প্রায় আড়াই বছর আগে আলমগীর মিয়া ইউটিউবের মাধ্যমে চুয়াডাঙ্গা জেলায় কমলার চাষ দেখে ওই চাষীর সাথে যোগাযোগ করেন। একপর্যায়ে আলমগীর চুয়াডাঙ্গায় গিয়ে ওই চাষীর কমলার বাগান পরিদর্শন করেন।
পরে বাড়িতে এসে তার চাচার কাছ থেকে ৬৫ শতাংশ জমি ইজারা নিয়ে চুয়াডাঙ্গা গিয়ে ওই চাষীর কাছ থেকে ১৮৫টি চারা এনে কমলার বাগান করেন। মাত্র দুই বছরে তার গাছে কমলার ফলন এসেছে। চোখ ধাঁধানো ফলন দেখে চাষী আলমগীর মিয়া খুবই খুশী।
চাষী আলমগীর মিয়া বলেন, আমি চুয়াডাঙ্গা থেকে ১৮৫টি চারা এনে ৬৫ শতাংশ জায়গায় রোপন করেছি। তিনি বলেন, রোপনের দুই বছর পরে ফলন ধরেছে। তিনি বলেন, বাগান করার সময় অনেকেই আমাকে নিরুৎসাহী করেছে। অনেকেই বলেছেন এই এলাকায় কমলার চাষ হবে না। আমি লোকজনের কথায় কান না দিয়ে নিজের মতো করে চেষ্টা করেছি। আল্লাহতায়ালা আমাকে সফল করেছেন।
আলমগীর মিয়া বলেন, এখন পর্যন্ত বাগান থেকেই ১৭০ টাকা কেজি দরে ১ হাজার থেকে ১২শ কেজি কমলা বিক্রি করেছি। দর্শনার্থীরা বাগান দেখেতে এসে যাওয়ার সময় কমলা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, আশা করছি বাগান থেকে কমপক্ষে ৫ লাখ টাকার কমলা বিক্রি করতে পারবো।
আলমগীরের সাফল্য দেখে আশপাশ এলাকার চাষীরা বলছেন, সরকারি সহযোগিতা পেলে তারাও অনাবাদি জমি গুলোতে কমলার আবাদ করবেন।
রাজু মোল্লা নামে এক চাষী বলেন, আলমগীরের চাষ দেখে মনে হচ্ছে এই এলাকায়ও কমলার চাষ হবে। সরকার যদি আমাদেরকে সহযোগিতা করেন তাহলে আমরা আমাদের অনাবাদি জমিগুলোতে কমলার চাষ করতে আগ্রহী হবো।
মোঃ মুসা মিয়া নামে আরেক চাষী বলেন, অল্প জায়গায় কমলার চাষে প্রমানিত হয়েছে যে বিজয়নগরের মাটি কমলা চাষের জন্য উপযোগী। আগামীতে আমিও আমাদের অনাবাদি জমিতে কমলার বাগান করবো। সরকার যদি সহযোগিতা করেন তাহলে বৃহৎ পরিসরে এলাকার চাষীরা কমলার বাগান করতে পারবে।এদিকে আলমগীরের কমলা বাগানের ভালো ফলন দেখে আশ্চর্য্য হয়ে গেছেন এলাকার কৃষি কর্মকর্তারা।
বিজয়নগর উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আবদুল ওয়াদুদ ও হাদিউল ইসলাম বলেন, তারা বিজয়নগরে বাণিজ্যিকভাবে কমলা চাষের জন্য একাধিকবার পরীক্ষামূলকভাবে কমলার চাষ করেও সুফল পায়নি। তবে সফল চাষী আলমগীরের কাছ থেকে তারা পরামর্শ নিয়ে এই অঞ্চলে কমলার বাণিজ্যিক চাষ করার জন্য কাজ করবেন। এ ছাড়া সরকারিভাবে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কমলার চাষ বৃদ্ধিতে এই অঞ্চলে প্রদর্শনী করা হবে।
এ ব্যাপারে ইসলামি ব্যাংক লিমিটেড, ব্রাহ্মণবাড়িয়া শাখার কর্মকর্তা মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, কমলা চাষী আলমগীর মিয়া চাইলে তিনি ব্যাংক থেকে সহজ শর্তে ঋণ নিতে পারেন। আমরা তাকে সহযোগীতা করবো।