ময়মনসিংহের গফরগাঁও এ নামের সাথে লাফা বেগুনের নামটি জড়িয়ে আছে। গফরগাঁও নামটি সারাদেশে খ্যাতি লাভ করে লাফা বেগুন দিয়ে। এক হালি লাফা বেগুন আর ১ মণ ধানের দাম সমান ছিলো। লাফা বেগুন দিয়ে অনেকের চাকুরী হয়েছে বলেও লোকমুখে শুনা যায়। ঢাকাণ্ডময়মনসিংহ রেলপথে গফরগাঁও রেলওয়ে ষ্টেশনে ট্রেন থামার পরই চোখে দেখা ও শুনা যেতো হকারের হাক-ডাক “বেগুন..বেগুন, লাফা বেগুন”।
কালের পরিক্রমায় হারিয়ে গেছে লাফা বেগুন। বিশেষ প্রজাতির এই বেগুন দেখতে গোলাকার, কিন্তু দেহ মসৃণ নয়; অনেকটা ঢেউ খেলানো খাজকাটা। সাইজ বেশ বড়। সম্প্রতি ওই এলাকার বেগুন চাষ করা দেখে বয়োবৃদ্ধরা চমকে উঠে। তাঁরা বেগুন চাষের হারিয়ে যাওয়া অতীতের স্মৃতিতে ফিরে যান। বেগুনটি লাফা বেগুন না। তবে কৃষকের দাবি, নতুন প্রজাতির তাল বেগুনটি মাটির গুনাগুন ও আবহাওয়ার কারণে স্বাদে লাফা বেগুনের মতো।
জানা যায়, উপজেলার ৩নং চরআলগী ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের মৃত জমির উদ্দিনের ছেলে মাওলানা বশির আহম্মেদ(৪২) প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ করে ২০ শতক জমিতে বেগুন চাষ করেন। ময়মনসিংহ থেকে ৬ হাজার টাকা খরচ করে তাল বেগুন জাতের চারা সংগ্রহ করেন। পর্যাপ্ত যত্ন করে সফল হন তিনি। গত বছর এই বেগুন বিক্রি করে প্রায় ২ লক্ষ টাকা আয় করে। তিনি প্রথমে কোন বীজ সংগ্রহ করেননি কিন্তু তারই জমি থেকে বীজ সংগ্রহে রেখেছিল প্রতিবেশী সোহেল মিয়া। পরে মাওলানা বশির আহম্মেদ তাঁর কাছ থেকে ৫০ গ্রাম বীজ সংগ্রহ করেন। চলতি মৌসুমে শ্রাবন মাস শুরুতে বীজতলা তৈরি করে তিনি চারা উৎপাদন করে। ১০০ শতক জমি প্রস্তুত করে দেড় ফুট অন্তর অন্তর ভাদ্র মাসে চারা রোপন করেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি ৩-৪ ফুট গাছে ৭-৮ টি বেগুন ঝুলছে। এগুলো একেকটা প্রায় ৫০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজন হবে। এ বেগুনের প্রচার আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে গেছে। প্রবাসীদের স্বজনরা বিদেশেও বেগুন পাঠিয়েছে। এখন প্রতিদিনই প্রায় ১ মন করে বেগুন তুলেন বেগুন চাষীরা। পাইকারী বাজারে এ বেগুন প্রায় ৮০ টাকা করে বিক্রি করছেন। খুচরা বাজারে বেগুনের মূল্য ১০০ টাকা। প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন জমিটি দেখতে আসে ও বেগুন ক্রয় করেন বলে জানান চাষীরা। মাওলানা বশিরের বেগুনের সাইজ বড় ও ভালো।
লাফা বেগুনের বিষয়ে এলাকায় বয়োবৃদ্ধ কৃষক জমির মিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, লাফা বেগুন আর নেই। চরমছলন্দ গ্রামের কয়েকজন কৃষক এ বেগুন চাষ করতো, বেগুন চাষের কিছু জমি এখন নদী গর্ভে চলে গেছে। আর এ বেগুনের জাতটি হারিয়ে যাওয়ার একটি কারণ হলো এ বীজ কেউ কাউকে দিতো না। গাছ দিতো ঠিকই কিন্তু বীজ দিতোনা। শুনেছি লাফা বেগুনের শেষ বীজ যে চাষীর কাছে ছিলো প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারণে ওই বছর ফলন আর হয়নি। যার ফলে সাথে সাথে বিলুপ্ত হয়ে যায় বেগুনের এ জাতটি।
মাওলানা বশির আহম্মেদ জানান, আমাদের লাফা বেগুনের ঐতিহ্য আছে। লাফা জাতের বেগুনটি হারিয়ে গেছে। তাল জাতের বেগুনটির স্বাদ প্রায় লাফা বেগুনের মতো। আমাদের চরআলগীর মাটি ও আবহাওয়া বেগুন চাষে বেশ উপযোগী। তাই এ মাটিতে জন্মানো বেগুনের স্বাদও ভিন্ন। আমি গত বছর তাল বেগুন জাতের চারা প্রথম রোপন করে সফল হয়েছি। এবছরও ১ একর জমিতে চাষ করেছি। ফলনও ভালো হয়েছে। নিজেই চারা উৎপাদন করে নেওয়াতে গত বছরের তুলনায় এবছর আমার খরচ কম হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজার টাকার বেগুন বিক্রি করেছি। এখনও জমিতে অনেক ফলন আছে। কাঙ্খিত ফল আশাকরি পাওয়া যাবে।
গফরগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফারুক আহম্মেদ বলেন, মাওলানা বশির আহম্মেদ একজন সফল কৃষক। সরেজমিনে এসে আমি তাঁর বেগুন চাষ দেখে বেগুন ও চারা দুটোই সংগ্রহ করেছি। এ তাল বেগুনের স্বাদ একটু ভিন্ন।
চরআলগী ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মাছুদুজ্জামান বলেন, প্রতিবছর বেগুন স্থানীয় চাহিদা পূরণ হয়ে সারাদেশে যায়। বেগুন চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে সঠিক পরামর্শ দেওয়া হয়। যার ফলে ফলনও ভালো হয়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নূর মোহাম্মদ বলেন, কৃষক বশির আহম্মেদকে পরামর্শ ও সুযোগ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। আশাকরি বেগুন চাষে তিনি সফল হবেন। তিনি একজন আদর্শ কৃষক। তাঁকে অনুসরণ করে এবছর আরও দুইজন কৃষক বেগুনের চাষ করেছে।