যশোর-সাতক্ষীরা সড়কের মণিরামপুর বেগারিতলা নামক বাজারে এক সড়ক দূর্ঘটনায় ৫ জনের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ওই বাজারে আবু তালেবের খাবারের হোটেলে নাস্তা খাওয়ার সময় তাদের মৃত্যু হয়। এ সময় হোটেল মালিক আবু তালেব গুরুতর আহত হয়। ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ জনতা প্রায় ৩ ঘন্টা সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। ঘটনার এলাকায় শোকের ছায়া নেমে পড়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ঘটনার দিন সকাল সাড়ে ৭টার দিকে যশোর থেকে সাতক্ষীরাগামী ঢাকা মেট্রো- ন-২০-১৭৫১ নম্বরধারী একটি কাভার্ডভ্যান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে থাকা বাবা-ছেলে দুই পথচারীকে প্রথমে চাপা দেয়। তারা হলো টুনিয়াঘরা গ্রামের হাবিবুর রহমান পঁচা (৫৫) তার ছেলে তৌহিদুর রহমান (৮), এরপর প্রায় ১৫ গজ দূরে কাভার্ডভ্যানটি একটি খাবারের হোটেলের ভিতরে ঢুকে যায়। এ সময় হোটেলে খাবার খাওয়া অবস্থায় স্থানীয় একই গ্রামের শেখ শামসুর রহমান (৬২) ও তার পুতাছেলে তহিদুল ইসলাম (২৫) এবং উপজেলার জয়পুর গ্রামের মোমিন গাজীর ছেলে জিয়াউর রহমান (৩৫) ঘটনাস্থলেই নিহত হয়।
মণিরামপুর ফায়ার সার্ভিস স্টেশন অফিসার প্রনব কুমার বিশ্বাস জানান, সকাল ৭টা ৪০ মিনিটের সময় খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের সাথে নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় কাভার্ডভ্যানের চাকার নিচে দুইজন ও গাড়ীর এক্সেলের নিচে একজন এবং এর প্রায় ১৫ গজ দূরে আরও দুইজনের মরাদেহ পড়ে রয়েছে। তিনি আরও বলেন, চাকার নিচে থাকা দুইজনকে ফায়ার সার্ভিসের স্পেশাল গেয়ার র্যামজ্যাক, স্প্রেডার ও হাইড্রোলিকজ্যাক দিয়ে কাভার্ডভ্যানটিকে উঁচু করে মরদেহ তিনটি উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারের পূর্বেই মরদেহগুলো চাকার নিচে পড়ে পিষ্ট হয়ে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়েছিল। এ সময় হোটেল মালিক আবু তালেবকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ী আবদুল মালেক, আতিয়ার রহমান, আনিচুর রহমান তজু বলেন, নিহত হাবিবুর রহমান পঁচা ও তার ছেলে তৌহিদ ঘটনার দিন সকালে হোটেল থেকে নাস্তা করে বাড়ি ফিরছিলো। পথিমধ্যে সাতক্ষীরাগামী কাভার্ডভ্যানটি প্রথমে বাবা-ছেলে দ্’ুজনকে চাপা দেয় এবং ঘটনাস্থলেই তারা নিহত হয়। এরপর চলমান গাড়ীটি রাস্তার পাশে থাকা টিনসেটের কমপক্ষে ৮টি দোকান ভেঙ্গে সর্বশেষ একটি হোটেলের ভিতর ঢুকে পড়ে গতিরোধ হয় এবং সেখানে গাড়ীর চাকার নিচে পিষ্ট হয়ে আরও তিনজন নিহত হয়।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক জানান, পাঁচজনের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় এলাকার বিক্ষুব্ধ এবং উৎসুক উভয় জনগণের চাপে যশোর-সাতক্ষীরা সড়কের বেগারিতলা বাজার দিয়ে প্রায় তিনঘন্টা যানচলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। পরে প্রশাসনের লোকজন পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণ করে যান চলাচলা স্বাভাবিক করে।
ঘটনার পর সহকারী কমিশনার (ভূমি) আলী হাসান ও থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ মনিরুজ্জামান ঘটনাস্থলে গিয়ে বিক্ষুব্ধ জনগণের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন এবং যান চলাচল স্বাভাবিক করেন।
মণিরামপুর থানার ওসি শেখ মনিরুজ্জামান বলেন, কাভার্ড ভ্যানটি জব্দ করা হলেও চালক ও হেলপার পালিয়ে গেছে। মরদেহগুলো উদ্ধার করে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে এবং থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
মণিরামপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্েরর টিএইচএ তন্ময় কুমার জানান, এ ঘটনায় হাসপাতালে কেউ ভর্তি হয়নি। তবে, শুনেছি নিহত সকলকে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়না তদন্তের জন্য নেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য নুরুজ্জামান পাপ্পুর সাথে বিকাল সাড়ে ৫টার সময় মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি যশোর হাসপাতালে নিহতদের স্বজনদের সাথে আছি। নিহত হাবিবুর ও তার ছেলে তৌহিদ আমার ৬নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা। এ ছাড়া শেখ শামসুর ও তার পুতাছেলে তহিদুল একই গ্রামের ৫নং ওয়ার্ডের এবং জিয়াউর রহমান পাশ্ববর্তী ঢাকুরিয়া ইউপির জয়পুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি আরও জানান, আহত হোটেল মালিক আবু তালেবকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করা হয়েছে। নিহতদের ময়না তদন্তের কাজ শেষ পর্যায়ে। মরদেহ গ্রামের বাড়ি নেওয়ার পর রাতেই তাদের দাফন কাজ সম্পন্ন করা হবে।
অপর দিকে মর্মান্তিক এ সড়ক দূর্ঘটনায় এলাকায় পিতা-পুত্রসহ পাঁচজনের অকাল মৃত্যু হওয়ায় স্বজনদের আহাজারিতে এলাকায় শোকের মাতম চলছে। তবে, সন্ধ্যা ছয়টায় এ রিপোর্ট লেখার আগ পর্যন্ত থানায় কোন মামলা হয়নি।