দেশের বৃহৎ ব-দ্বীপ উপজেলা ভোলার মনপুরায় নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের লক্ষ্যে প্রায় ১৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বিশে^র দ্বিতীয় বৃহত্তম ‘অফগ্রীড হাইব্রীড সোলার পাওয়ার’ সিস্টেম চালু করতে যাচ্ছে ওজোপাডিকো।
ফলে সাগর বক্ষের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ মনপুরা উপজেলায় দীর্ঘদিনের বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান হতে যাচ্ছে। দেশের দুর্গম এলাকার এ দ্বীপ উপজেলাতে কয়েক লাখ মানুষের বসবাসের পাশাপাশি একটি মৎস্য বন্দর গড়ে উঠলেও বরফের অভাবে সেখানে আহৃত মাছের গুনগত মান নষ্ট হচ্ছে। যেকারণে ওই এলাকার জেলেসহ মৎস্যজীবীদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হচ্ছেনা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সন্ধ্যা নামলেই অমনিশার অন্ধকার নেমে আসে গোটা মনপুরা দ্বীপে। বর্তমানে ওয়েষ্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) শুধুমাত্র সান্ধ্য পীক আওয়ারে কয়েক ঘন্টার জন্য ডিজেল প্লান্টের সাহায্যে সীমিত কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করলেও উৎপাদন ব্যয় উঠে আসছে না। এমনকি পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড দেশের সব উপজেলা থেকে সুদুর পল্লী এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছে দিলেও মনপুরা নিয়ে অদ্যাবধি কোন কর্মপরিকল্পনা গ্রহন করেনি।
সূত্রমতে, ওজোপাডিকো মূল ভু-খন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন এ দ্বীপটির বিদ্যমান বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ ব্যবস্থাকে উন্নয়নের জন্য দীর্ঘদিন থেকে চেষ্টা করলেও তহবিল সংকটসহ নানাবিধ প্রতিবন্ধকতায় এতোদিন তা সম্ভব হয়নি। এমনকি সরকারের উচ্চপর্যায় থেকেও মনপুরার বিদ্যুৎ ব্যবস্থা উন্নয়নে তাগিদ ছিল।
ওজোপাডিকোর দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ওয়েষ্টার্ন রিনোয়েবল এনার্জি কোম্পানি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আগামী ২০ বছর ক্রয় চুক্তির ভিত্তিতে ভোলা ও লক্ষীপুরের মধ্যবর্তী সাগর বেষ্টিত বিচ্ছিন্ন এ দ্বীপ উপজেলাটিতে সৌর ও ডিজেল প্লান্টের সাহায্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে যাচ্ছে। এ ব্যবস্থায় এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম ‘অফগ্রীড হাইব্রীড সোলার পাওয়ার’ সিষ্টেম চালু হতে যাচ্ছে মনপুরা উপজেলায়।
বেসরকারী প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ১৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে মনপুরার দ্বীপ উপজেলাটিতে ১০ মেগাওয়াটের সোলার ও দুই মেগাওয়াটের ডিজেল পাওয়ার প্লান্টের পাশাপাশি লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারী সম্বলিত ব্যাকআপ সিষ্টেমও স্থাপন করতে যাচ্ছে। ফলে সাগর বক্ষের এ দ্বীপটিতে যেকোন দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়াতেও নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। পাশাপাশি দেশের অন্যতম বৃহত বিচ্ছিন্ন ব-দ্বীপটিতে প্রায় ২০ হাজার নতুন সংযোগ প্রদানসহ শতভাগ মানুষকে বিদ্যুতের আওতায় আনা সম্ভব হবে। এ ছাড়া দিনরাত নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবারহ করা সম্ভব হবে।
ওজোপাডিকোর দায়িত্ব কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন, আগামী মার্চ কিংবা এপ্রিল মাসের মধ্যেই প্রকল্পটির কাজ শেষ করে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হবে। কর্মকর্তারা আরও জানান, ওজোপাডিকো বেসরকারী প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে আগামী ২০ বছরের জন্য নিরবিচ্ছিন্নভাবে প্রায় ২১ টাকা দরে প্রতি কিলোওয়াট ঘন্টা বিদ্যুৎ ক্রয় করে সরকার নির্ধারিত দরে গ্রাহকদের কাছে তা বিক্রি করবে। এছাড়াও প্লান্ট পর্যায়ে ওজোপাডিকো ১১ কেভি লাইনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ গ্রহন করে ০.৪ বিতরণ লাইনের সাহায্যে গ্রাহকের কাছে তা সরবরাহ করবে। এজন্য একটি পরিপূর্ণ সাব-স্টেশনসহ ১১ কেভি এবং ১১/.৪ কেভি সঞ্চালন ও বিতরণ লাইনের নির্মান কাজ করছে ওজোপাডিকো।
বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মোঃ আমিন উল আহসান বলেন, এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম ‘অফগ্রীড হাইব্রীড সোলার পাওয়ার’ সিষ্টেম চালু হওয়ার পর দেশের বৃহত বিচ্ছিন্ন দ্বীপ মনপুরা উপজেলাটি দেশের উন্নয়নের মহাসড়কে যুক্ত হবে। এমনকি মনপুরাতে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতের পর সেখানে সমৃদ্ধ মৎস্য বন্দর গড়ে ওঠার পাশাপাশি ইকো টুরিজমের ক্ষেত্রেও ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।