সারা দেশে সোয়াবিন জাতীয় তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে নিজ প্রয়োজন মিটিয়ে আর্থিকভাবে লাভের আশায় খুলনা জেলার দিঘলিয়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের কৃষকেরা সরিষা চাষে ঝুঁকে পড়ছে। সরকারি সুযোগ-সুবিধা বাড়লে সরিষাসহ সকল ভোজ্য তেলের ফসলের আবাদ বাড়বে বলে কৃষকদের অভিমত। দিঘলিয়ায় এবার লক্ষ্যমাত্রারও বেশী জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। কৃষকের উদ্দেশ্য আগামীতে দিঘলিয়ার চাহিদা মিটিয়েও দেশের অন্যান্য এলাকায় তেল সরবরাহ করতে পারবে।
সরেজমিনে দিঘলিয়ার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা মেলে সরিষা ফুলের হলুদের সমারোহ। পাশাপাশি সরিষা ফুলের মিষ্টি গন্ধ ও সরিষা ক্ষেতে মৌমাছির গুনগুন শব্দ। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলতি মৌসুমে কৃযকদের মাঝে উপজেলা কৃষি অফিস কর্তৃক সার-বীজ প্রণোদনা স্বরূপ বিতরণ করায় এ বছর সরিষা চাষ বেড়েছে। উপজেলা কৃষি দপ্তরের পক্ষ থেকে সরকারিভাবে কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে সার-বীজ বিতরণ করা হয়েছে। দিঘলিয়া উপজেলায় যে সব জমি আমন ধান কাঁটার পর বোরো ধান চাষের জন্য ফেলে রাখা হতো সে সব জমিতে এবার সরিষা ফুলের হলুদের সমারোহ।
এবার সরিষার বাম্পার ফলনের আশায় কৃষকদের মাঝে আনন্দের হাসি। সরিষার ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত উপজেলার দিঘলিয়া ইউনিয়নের ফরমাইশখানা গ্রামের কৃষক মোল্লা রাকিবুল ইসলাম, সেনহাটি গ্রামের কৃষক খান আবু সাঈদ, কাঞ্চন দত্ত, বিশ্বজিৎ কু-ু, দিঘলিয়া গ্রামের কৃষক মোঃ রিজাউল ইসলাম, মোঃ শফিকুল মোল্লা, গোয়ালপাড়ার সোহেল পারভেজ ও মঈনুদ্দিন, ব্রহ্মগাতী গ্রামের মোঃ মিঠু ও মোঃ সাগর জানান, কয়েক বছর আগেও তাদের যে জমি পতিত থাকতো বর্তমানে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও উপণ্ডসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় সে সব জমিতে তাঁরা সরিষা চাষে ঝুঁকেছেন। দিঘলিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ আবদুস সামাদ বলেন, বারি-১৪ জাতের সরিষার ফলন বেশী, সময়ও কম লাগে। এতে করে এসব জমিতে সরিষা উঠিয়ে সহজেই বোরো ধান চাষ করা যায়। আর তখন সারও কম প্রয়োগ করা লাগে। জমিতে হালকা চাষ দিয়েও বীজ বপন করা যায়, আবার চাষ না দিয়েও ভেজা জমিতে বীজ বোনা যায়। শীত মৌসুমে কীটনাশক ব্যবহার না করলেও অসুবিধা হয় না। সরিষা চাষে জমিতে দস্তা, জীপসাম, বোরন, পটাশ, ইউরিয়া ও ডিএপি সার প্রয়োগ করতে হয়। দিঘলিয়া উপজেলা উপণ্ডসহকারী কৃষি অফিসার মোঃ কামাল হোসেন, কামরুল হাসান মাহমুদ, সাগর সরকার, মোঃ মনিরুজ্জামান, মোঃ আনোয়ারুজ্জামান, নিশি কান্ত রায়, অভিজিৎ দাস এ প্রতিবেদককে জানান, গত বছরে দিঘলিয়া উপজেলায় বৈরি আবহওয়া ও কৃষকদের অনাগ্রহের কারণে সরিষার চাষ বাড়ানো সম্ভব হয়নি। অনেক জমিতে সরিষা বোপন করার পর জমি নিচু হওয়ায় পানি আটকে বীজ নষ্ট হয়ে গেছে।
এ বছর দিঘলিয়ার কৃষকরা তৈল বিজ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। কোনো জমি আর পতিত রাখা যাবে না। সরকারের এ সিদ্ধান্তের সাথে তাল মিলিয়ে ব্যাপক জমি সরিষা চাষের আওতায় এনেছেন। উঁচু জমিতে সরিষার বাম্পার ফলনের আশা করছে কৃষকেরা।
দিঘলিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ আবদুস সামাদ জানান, বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচীর অংশ হিসেবে দেশে ভোজ্য তেলের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে আমরা কৃষকদের সরিষা চাষে নিয়মিত পরামর্শ প্রদান করছি। তিনি বলেন চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৫১ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। গত বছরে চাষের পরিমাণ ছিল ৪০ হেক্টর। এ বছর লক্ষ্য ছাড়িয়ে ৭০- ৮০ হেক্টরে সরিষা চাষ হয়েছে। আগামীতে আরও বাড়তে পারে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি আরও জানান, চলতি মৌসুমে সরিষা চাষে প্রণোদনার আওতায় উপজেলার ৬০০ জন কৃষককে মাথা প্রতি ১ কেজি সরিষা বীজ, ১০ কেজি পটাশ ও ১০ কেজি করে ডিএপি সার বিতরণ করা হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণের চেয়ে বেশি।