রংপুরের পীরগঞ্জে বুধবার বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ও শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর র্যালি এবং দোয়া মাহফিলের মধ্য দিয়ে পীরগঞ্জ হানাদার মুক্ত দিবস পালন করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে পৃথকভাবে উপজেলা চত্বর ও বঙ্গবন্ধু চত্বরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালে শ্রদ্ধা জানানো হয়। পরে উপজেলা আওয়ামী লীগের র্যালি উপজেলা সদরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে বাদ জোহর ও বাদ আসর উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদ ও কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। এতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিরোদা রানী রায়, উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক নুরুল আমিন রাজা, সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র তাজিমুল ইসলাম শামীম, সাংগঠনিক সম্পাদক ও ভাইস চেয়ারম্যান শফিউর রহমান মন্ডল মিলন, মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান রওশন আরা আলম রীনা,ওসি কর্মকর্তা জাকির হোসেন,বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সাত্তার মন্ডল,পীরগঞ্জ বিজ্ঞান ও কারিগরি কলেজের অধ্যক্ষ খলিলুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য,পীরগঞ্জ উপজেলার ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে আছে ৭ ডিসেম্বর। মূলত পীরগঞ্জ থানা শত্রু মুক্ত হয় ৭১ এর ৬ ডিসেম্বর গভীর রাতে। শুক্লপক্ষের অন্ধকার যবনিকা কেটে গিয়ে সূর্যোদয়ের পর দ্রুতগতিতে এই সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে। পরদিন ৭ ডিসেম্বর হাজার হাজার স্বাধীনতাকামী নারী-পুরুষ দীর্ঘদিনের কষ্ট আর ক্লেদ ভূলে গিয়ে বিজয় মিছিলে অংশ নেয়। তাই ৭ ডিসেম্বর পীরগঞ্জ থানা শত্রু মুক্ত হিসেবে পরিগনিত হয়। প্রত্যক্ষদর্শী প্রবীণদের মতে পূর্ব হতে পাক সেনাদের আস্তানা ছিল থানা সদরে। ৬ ডিসেম্বর বিকেলে মিত্র বাহিনীর জলপাই রংএর ট্যাং বহর ছুটে আসে দিনাজপুরের হিলি সীমান্ত পার হয়ে। পীরগঞ্জ থানার পশ্চিমাঞ্চল এর খালাশপীর,কাদিরাবাদ ও ত্রি-মোহনী ব্রীজের আশপাশে অবস্থান নিয়ে সূর্যাস্তের পূর্বেই এলো পাথাড়ী গোলা বর্ষণ শুরু করে পীরগঞ্জ থানা সদরে অবস্থানরত পাক সেনাদের আস্তানার উপর। রাত গভীর হলে একসময় ছত্রভঙ্গ হয়ে পাক সেনারা পিছু হটতে শুরু করে। দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পাক সেনাদের একটি অংশ রংপুর-ঢাকা মহা সড়কের বড়দগাহ্ নামক স্থানে মিত্র বাহিনীর অপর অংশের কাছে বাধাপ্রাপ্ত হয়। অপর অংশটি গাড়ি বহর নিয়ে মহাসড়ক ধরে বগুড়া সেনা নিবাসের উদ্দেশ্য পালিয়ে যায়। বিচ্ছিন্ন একটি অংশ জীবনের ভয়ে অস্ত্র ও পোষাক খুলে পায়ে হেঁটে গ্রামীন পথ ধরে পালিয়ে যায় মিঠিপুর এলাকায়। মাদারগঞ্জের কাছাকাছি গিয়ে এরা জনগনের হাতে ধরা পড়ে নাজেহাল হয়। এদিকে ধীর গতিতে এগিয়ে আসে মিত্র বাহিনীর সাঁজোয়া বাহিনী। একপর্যায়ে গোলার আওয়াজ থেমে যায়। গভীর রাতেই জলপাই রং এর ট্যাংকবহর নিয়ে মিত্র বাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর সার্থক জোয়ানরা পীরগঞ্জ থানা সদরে প্রবেশ করে বিজয়ের বেশে। প্রতি বছর দিবসটি উপজেলার বিভিন্ন সংগঠন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নানা কর্মসুচির মাধ্যমে পালন করে আসছে।