ঘাটের ইজারা বন্ধ প্রায় একবছর ধরে। কিন্তু এখনও থামেনি টাকা উত্তোলন। টাকা না দিলে মারধর করা হয় যাত্রীদের। বিআইডব্লিউটিএ’র নামে যাত্রীদের জিম্মি করে এভাবেই প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করছেন স্থানীয় এক ইউপি সদস্য। ঘটনাটি জেলার হিজলা উপজেলার ধুলখোলা ইউনিয়নের লঞ্চঘাটের।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ধুলখোলা খেয়াঘাট থেকে একই ইউনিয়নের প্রধান বন্দর আলীগঞ্জ হয়ে পাশের ইউনিয়ন উলানিয়া পর্যন্ত যাত্রীবাহী ইঞ্জিনচালিক ট্রলার চলাচল করছে। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এক ঘণ্টা পরপর অর্ধশতাধিক যাত্রী নিয়ে ট্রলারগুলো আসা-যাওয়া করে। সূত্রমতে, প্রায় একবছর পূর্বে ধুলখোলার পল্টুন নদীর পানিতে ডুবে যাওয়ার পর থেকে নৌ-স্টেশন বন্ধসহ ইজারা দেওয়া বন্ধ রেখেছে বিআইডব্লিউটিএ। অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহনের বিধান অনুসারে ইজারা না থাকলে সেই ঘাটে টাকা উত্তোলন অবৈধ।
বিআইডব্লিউটিএ’র দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ধুলখোলা লঞ্চঘাটের পল্টুন প্রত্যাহার করে চাঁদপুরে সংযুক্ত করা হয়েছে। ওই লঞ্চঘাটের ইজারা দেওয়া হচ্ছেনা। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, ধুলখোলা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য লিটন রাঢ়ী তার সহযোগিদের নিয়ে ঘাটটি দখলে রেখে যাত্রীদের কাছ থেকে ১০ টাকা করে ঘাট ফি আদায় করছেন। সূত্রমতে, বিআইডব্লিউটিএ যখন ইজারা দিয়েছিলো তখন প্রতিজন যাত্রীর কাছ থেকে পাঁচ টাকা করে আদায় করা হতো। বর্তমানে ইজারা নেই প্রায় একবছরেরও বেশি সময় ধরে অথচ এখন সেখানে ১০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক যাত্রীরা বলেন, মানুষের সাথে খুব আপত্তিকর আচরণ করে টাকা আদায় করেন ইউপি সদস্য ও তার সহযোগীরা। কেউ টাকা দিতে আপত্তি জানালে তাকে মারধর পর্যন্ত করা হয়।
অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জামাল হোসেন ঢালী বলেন, ধুলখোলা লঞ্চঘাটের পল্টুনটি একবছর আগে ডুবে যাওয়ায় লঞ্চঘাটটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এবছরও বিআইডব্লিউটিএ থেকে ঘাট ইজারা দেয়া হয়নি। চেয়ারম্যান আরও বলেন, ইউপি সদস্য লিটন রাঢ়ী ঘাট ফি উত্তোলনের নামে যাত্রীদের জিম্মি করে প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। বিষয়টি জেনে ইউপি সদস্যকে একাধিকবার নিষেধ করা সত্বেও সে টাকা উত্তোলন করা বন্ধ করেনি। ফলে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএ’র বরিশালের নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপ-পরিচালক আবদুর রাজ্জাক বলেন, পল্টুন প্রত্যাহার করে অন্যত্র সংযুক্ত করা হয়েছে। সেই সাথে সেখানকার ইজারাও বাতিল করা হয়েছে। এ অবস্থায় সরকার কোনো রাজস্ব উত্তোলন করছে না। ইজারা না থাকলে সেখানে কেউ টাকা উত্তোলন করলে তা নিয়মবর্হিভূত। তিনি আরও বলেন, বিআইডব্লিউটিএ’র টিকিট ব্যবহার করে ধুলখোলায় কেউ যেন টাকা উত্তোলন না করে সেজন্য ইতোমধ্যে হিজলা থানার ওসিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে হিজলা থানার ওসি ইউনুস আলী মিঞা বলেন, বিআইডব্লিউটিএ’র এমন কোনো চিঠি এখনো হাতে পাইনি। চিঠি পেলে তাৎক্ষণিক আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য লিটন রাঢ়ীর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে যোগাযোগের পর সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তিনি ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফোনটি বন্ধ করে রাখেন। যেকারণে তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।