বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘণ বন্ধ করতে হলে মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় বিচারের ভিত্তিতে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এ লক্ষে মানবতাবিরোধী অপরাধ-গুম, বিচার বর্হিভূত হত্যা, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সভা-সমাবেশে বাঁধা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সকল প্রকার নিবর্তনমূলক আইন বাতিল এবং মানুষের অধিকার নিয়ে কাজ করা মানবাধিকার সংগঠন ও কর্মীদের হয়রানিসহ সব ধরণের অন্যায়-অবিচারের অবসান ঘটাতে জনগণকে সংগঠিত হয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। এ ছাড়া সাধারণ জনগণের সামনে আর কোন পথ খোলা নেই।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস’ উপলক্ষে শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) দেশের অন্যতম শীর্ষ মানবাধিকার সংগঠণ ‘অধিকার’ ও গুমের শিকার পরিবারগুলোর সদস্যদের নিয়ে গঠিত সংগঠন ‘মায়ের ডাক’ খুলনা ইউনিটের পক্ষ থেকে আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচীতে বক্তারা উল্লিখিত কথা বলেন। বেলা ১১টায় নগরীর শান্তিধাম মোড়ে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় অনুষ্ঠিত সমাবেশে সংগঠণের খুলনার ফোকাল পার্সন ও সাংবাদিক মুহাম্মদ নূরুজ্জামান সভাপতিত্ব করেন। দিবসের অধিকার ও মায়ের ডাক’র বিবৃতি পড়ে শোনান ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা ও হয়রানির শিকার দৈনিক মানবজমিনের স্টাফ রিপোর্টার ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সহ-সভাপতি মো. রাশিদুল ইসলাম।
মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তৃতা করেন নাগরিক ঐক্য খুলনা মহানগর আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট ড. মো. জাকির হোসেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা ও হয়রানির শিকার এনটিভি’র খুলনা ব্যুরো প্রধান মুহাম্মদ আবু তৈয়ব, বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা খুলনার জেলা কো-অর্ডিনেটর অ্যাডভোকেট মো. মমিনুল ইসলাম, খুলনায় পুলিশ কর্তৃক দু’ চোখ উপড়ে ফেলা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মো. শাহজালাল হাওলাদার ও তার স্ত্রী রাহেলা বেগম, সাতক্ষীরায় গুমের শিকার হোমিও চিকিৎসক মোখলেসুর রহমান জনি’র পিতা মো. আবদুর রাশেদ, বেনাপোলে গুমের শিকার কলেজ ছাত্র মো. রেজোয়ান হোসেনের ভাই মো. রিপন হোসেন ও মানবাধিকার কর্মী শেখ আবদুল হালিম।
উপস্থিত ছিলেন- খুলনা জেলা গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক মো. বিল্লাল হোসেন, হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার অ্যাডভোকেট শেখ আলমগীর আশরাফ, ডা. নুর ইসলাম, খুলনা ব্লাডব্যাংকের সভাপতি শেখ ফারুক, হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার মুহাম্মদ বদরুজ্জামান, মুহাম্মদ কামরুজ্জামান, অ্যাডভোকেট মো. শহিদুল ইসলাম, শেখ আলমগীর আশরাফ, এম এ আজিম, মো. শওকত হোসেন, মো. তাসনিম হাসান, ছাত্র অধিকার পরিষদ খুলনা জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. রাজু হাওলাদার, জেলা ছাত্র অধিকার পরিষদের প্রচার সম্পাদক মো. মিসকাত শরীফ, যুব অধিকার পরিষদ তেরখাদা উপজেলা শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সাইফুল ইসলাম প্রমুখ। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার ও সাংবাদিক কেএম জিয়াউস সাদাত।
মানববন্ধন কর্মসূচিতে মানবাধিকার দিবসে অধিকার ও মায়ের ডাক’র বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, সরকার নাগরিকদের বাক স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণভাবে সভা-সমাবেশ করার অধিকার কেড়ে নিয়েছে। অধিকারসহ সোচ্চার মানবাধিকার সংগঠনগুলো এবং ভিন্নমতাবলম্বীদের কণ্ঠরোধ করার জন্য সরকার বিভিন্নভাবে তাদেরকে হয়রানী করছে ও নিপীড়ন চালাচ্ছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ বিভিন্ন নিবর্তনমূলক আইন প্রয়োগ করে, রাষ্ট্রদ্রোহিতা ও মানহানিসহ বিভিন্ন হয়রানিমূলক মামলা দিয়ে ভিন্নমতাবলম্বীদের ওপর দমন-পীড়ন করছে। বিরোধী রাজনৈতিক দল ও ভিন্নমতাবলম্বীদের সভা-সমাবেশে হামলা করছে সরকারী দলের নেতা-কর্মী এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা। সরকারের নিয়ন্ত্রনের বাইরে থাকতে সচেষ্ট সংবাদ মাধ্যমগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও মামলা দায়ের এবং এই সংবাদ মাধ্যমগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটছে।
দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে অধিকার ও মায়ের ডাক কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থা অবসান ঘটিয়ে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য আহ্বান জানানো হয়।