পুলিশের ওপর হামলার পরিকল্পনা ও উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পল্টন থানায় করা মামলায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। শুক্রবার তাদের আদালতে হাজির করে পুলিশ। এ সময় মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক তরিকুল ইসলাম। অপরদিকে, আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জামিন আবেদন করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিম তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এর আগে শুক্রবার বিকেল ৪টা১০ মিনিটে ডিবির কার্যালয় থেকে তাদের আদালতে আনা হয়। এ সময় কোর্ট প্রাঙ্গণে ক্ষোভ করেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। ‘খালেদা জিয়ার মুক্তি’, ‘পার্টি অফিসে গুলি কেন’ সহ বিভিন্ন ধরনে স্লোগান দেন তারা। এরও আগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে গ্রেপ্তার দেখায় ডিবি। এ বিষয়ে ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মির্জা আব্বাসকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গত বুধবারের ঘটনায় তাদের নির্দেশদাতা হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদিকে নয়াপল্টনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মির্জা আব্বাস উদ্দিন আহম্মেদকে পরিকল্পনাকারী, উস্কানিদাতা এবং নির্দেশদাতা বলা হয়েছে। শুক্রবার তাদের কারাগারে আটক রাখার আবেদনে এসব তথ্য উল্লেখ করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক তরীকুল ইসলাম। আবেদনে বলা হয়, বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ৭ ডিসেম্বর দুপুর ২টা ৩৫ মিনিট থেকে বিকেল সোয়া ৫টা পর্যন্ত বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা দাঙ্গা-হাঙ্গামা করেন। লাঠি নিয়ে সজ্জিত হয়ে পুলিশকে আক্রমণ ও বলপ্রয়োগ করে গুরুতর জখম করে এবং ক্ষতিসাধনের জন্য জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টিসহ ব্যক্তি বা জনগণের সম্পত্তির ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এ ঘটনায় উপণ্ডপুলিশ কমিশনার মতিঝিল বিভাগ ও অতিরিক্ত উপণ্ডপুলিশ কমিশনার মতিঝিল জোনসহ অনেক পুলিশ সদস্য আহত হন এবং সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি হয়। পুলিশের আবেদনে আরও বলা হয়, মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাস এ ঘটনার পরিকল্পনাকারী, উস্কানিদাতা এবং নির্দেশদাতা হিসেবে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তাদের গত বৃহস্পতিবার রাত ৩টায় গ্রেপ্তার করা হয়। মামলা সংক্রান্তে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের দেওয়া তথ্য ও নাম ঠিকানা যাচাই করা হচ্ছে। মামলার তদন্ত অব্যাহত আছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের জেলহাজতে রাখার প্রার্থনাসহ জামিনের বিরোধিতা করা হয়েছে। শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিম তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ। বিএনপি নেতাদের আদালতে আনার সময় আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। তারা ‘খালেদা জিয়ার মুক্তি’, ‘পার্টি অফিসে গুলি কেন’ ইত্যাদি স্লোগান দেন। এর আগে বুধবার বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন মকবুল। আহত হন অনেকে। সংঘর্ষের ঘটনায় ৪৭৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত দেড় থেকে দুই হাজার বিএনপির নেতাকর্মীকে আসামি করে পল্টন মডেল থানায় মামলা করে পুলিশ। মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- বিএনপি চেয়ারপাসনের বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাস, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান, দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম, কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল প্রমুখ।