চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার সীমান্ত এলাকায় নিরাপদে শ্রেনীকক্ষে এসে পাঠদানে অংশ নেন শিক্ষার্থীরা। নেই কোন ভয়ভীতি। ছাত্র-ছাত্রীরা উৎসাহ-উদ্দীপণার মধ্যে দিয়ে বিদ্যালয়ে এসে শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে অংশ নিচ্ছে। এলাকার পরিবারগুলো তাঁদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে ভর্তি করাচ্ছে। সন্তানদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলছেন তাঁরা। শিক্ষিত হয়ে অনেক শিক্ষার্থী সরকারী-বেসরকারীসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। আলো ছড়াচ্ছেন সীমান্তবর্তী বিদ্যালয়গুলো।
সরেজমিন সীমান্তবর্তী এলাকা বাঙ্গাবাড়ী এলাকা ঘুরে দেখা গেছ, গোমস্তাপুর উপজেলার সদর রহনপুর শহর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে শিবরামপুর এলাকা। ওই এলাকায় ছোটছোট ছাত্র-ছাত্রীদের আলোকিত করছেন শিবরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টি ১৯৫৫ সালে প্রতিষ্ঠিত। বিদ্যালয়ে থেকে প্রায় পাঁচশত গজ দূরে ভারতীয় সীমানা। পাশ দিয়ে চলে গেছে বাংলাদেশ ও ভারতীয় সংযোগ রেলপথ। ওপারে সিঙ্গাঁবাদ রেলস্টেশন। শিবরামপুর গ্রামসহ আশেপাশের সরকারি পুকুরের ধারে গড়ে উঠা বেশ কয়েকটি এলাকার শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক বিদ্যালয়টি পড়তে যান। যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভাল। সারিসারি ভাবে ছাত্র-ছাত্রীরা বিদ্যালয়টিতে যেতে দেখা গেছে। অনেককে আবার বই কাঁধে করে রেললাইনের ওপর দিয়ে যাচ্ছেন বিদ্যালয়ে। এ ছাড়া ওই সীমান্ত থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে তেলীপাড়ায় মাধ্যমিক ও বাঙ্গাবাড়ী কলেজ অবস্থিত। তবে মাঝেমধ্যে ভারতীয় অংশে গোলাগুলির শব্দ শোনা গেলেও এলাকার লোকজন বা শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত হয়না বলে অনেকে জানিয়েছেন। বিদ্যালয়টি শিশু শাখা হতে পঞ্চম শাখা পর্যন্ত ২১৭ জন ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। এরমধ্যে ১১০ জন বালক ও ১০৭ জন বালিকা আছে।
ওই এলাকার অভিভাবক তোফিজুল ইসলাম বলেন সীমান্ত এলাকায় হওয়ার আমরা তেমন আতঙ্কিত না। সুন্দর পরিবেশে ছাত্র-ছাত্রীরা বিদ্যালয়ে যান। এলাকার বিদ্যালয়গুলোতে গুণগত মান ভাল। ভাল ফল করে থাকে তাঁরা। সীমান্তে এলাকায় তেমন কোন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়না। পাশে রয়েছে বাঙ্গাবাড়ী বিজিবি ক্যাম্প।
শিক্ষার্থী নুসরাত জানান, আমরা আগ্রহের সঙ্গে বিদ্যালয়ে এসে পাঠদান করি। শিক্ষকরা আমাদের পড়ালেখায় উৎসাহ জোগায়। মা-বাবা বিদ্যালয় উপস্থিত হতে সাহস জোগায়। এই এলাকায় তেমন গ-ুগোল নেই। তবে খেলাধুলার কোন মাঠ নেই। খেলাধুলা থেকে আমরা বঞ্চিত। আরেক শিশু শিক্ষার্থী শুভ বলেন, ওপারে (ভারত) শব্দ হলে তাঁকে ভয় লাগে। নিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিত হন বলে তিনি জানান।
বিদ্যুৎসাহী সাদিকুল ইসলাম বলেন সীমান্ত এলাকা হলেও শিক্ষার্থীর হার ভাল। প্রতিটি পরিবারের মা-বাবা তাঁদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠান। ভারতীয় সীমান্তে কাঁটাতার দেওয়া আছে। এখানে উভয় দেশের মধ্যে ঝামেলা নেই। এ ছাড়া অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দিয়ে বিদ্যালয়ে উপস্থিত করানো হয় বলে তিনি জানান।
শিবরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিক শামিমা আকতার বলেন বিদ্যালয়ের উপস্থিত হার ভাল। সন্তোষজনক ভাবে ফল করে থাকে ছাত্র-ছাত্রীরা। বিদ্যালয়ের পাশে পুকুর থাকায় সমাবেশ করতে অসুবিধা হয়। ওই এলাকার কলেজ শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন অনেক শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছেন। ভাল ভাল প্রতিষ্ঠানে প্রতিনিধিত্ব করছেন। তবে অনেকে মাধ্যমিক পর্যায়ে এসে মোবাইল কিনতে আগ্রহী হয়ে পড়ছে। তখন বিদ্যালয় বাদ দিয়ে উপার্জনের জন্য শ্রমিকের কাজ করছেন বলে তিনি জানান।
প্রধান শিক্ষক মনিকুল ইসলাম বলেন, তাঁর প্রতিষ্ঠানে ছয়জন শিক্ষক রয়েছে। সীমান্তবর্তী প্রতিষ্ঠান হওয়ার তেমন কোন প্রভাব নেই। তবে করোনাকালীন লেখাপড়ায় একটু প্রভাব পড়েছে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল মজিদ বলেন,সীমান্তবর্তী প্রতিষ্ঠানগুলোর লেখাপড়ার গুণগত মান ভাল। বাঙ্গাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম বলেন তাঁর ইউনিয়ন সীমান্ত এলাকায় কোন বিশৃঙ্খলা নেই। অভিভাবকরা সন্তানের বিদ্যালয়ে পাঠাতে আগ্রহী।