দরিদ্র পরিবারের গৃহবধু বিউটি নিজে কাজ করে অন্যের জমিতে মাঝেমধ্যে ঝিয়ের কাজ করে প্রতিবেশীর বাড়ীতে। স্বামী সুমন দাস পেশায় কাঠ মিস্ত্রীর সহযোগী এক বেলা খাবার জুটলেও আরেক বেলা শিশু-সন্তান নিয়ে উপোস থাকতে হয় সবার। এরইমধ্যে বিউটির পরপর তিনটি অপারেশন করতে গিয়ে খুইয়েছেন গোয়ালের গরু, সুদে টাকা আনতে হয়েছে মহাজনের কাছ থেকে। ডাক্তার জানিয়েছে বিউটির মরনব্যাধী ক্যান্সার। তাই সদ্য ভূমিষ্ট শিশু সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ানো যাবেনা। বাধ্য হয়ে সাহায্য চেয়েছে উপজেলা সমাজসেবা কার্য়ালয়ে।
সরেজমিনে জানাগেছে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার বাকাল ইউনিয়নের কোদালধোয়া গ্রামের সুবোধ দাসের ছেলে সুমন দাসের সাথে পনের বছর পূর্বে বিয়ে হয় পার্শ্ববর্তী কোটালীপাড়া উপজেলার বিজয় বিশ্বাসের মেয়ে বিউটির। স্বামী সুমন দাস পেশায় কাঠমিস্ত্রীর সহযোগী। দৈনিক পাঁচশত টাকা হাজিরায় কাজ করেন, মাঝেমধ্যে কাজ না থাকায় বেকার জীবন কাটাতে হয়। স্ত্রী বিউটি সংসারে সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে স্বামীর পাশাপাশি নিজে কাজ করে দুইশত টাকা হাজিরায় অন্যের জমিতে। অনেক সময় জমির কাজ না থাকায় প্রতিবেশী সন্ধ্যা দাসের বাড়ীতে ঝিয়ের কাজ করে। সুমন-বিউটির দাম্পত্য জীবনে তিনটি কন্যাসন্তান রয়েছে। বড় মেয়ে বর্ষা দাস স্থানীয় বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। দ্বিতীয় মেয়ে বৈশাখী দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী। ছোট মেয়ে কথা এখনো স্কুলে যায় নি। অর্থনৈতিক দৈন্যতার মাঝে ভালই কাটছিল সুমন-বিউটির দাম্পত্য জীবন। কিন্তু বিধিবাম এ যেন মরার উপর খারার ঘাঁ। এরইমধ্যে বিউটির চতুর্থ সন্তান প্রসবের জন্য সিজার ও এ্যপেন্ডিস অপারেশন করা হয় একই দিন উপজেলা সদরের দূঃস্থ মানবতার হাসপাতালে। কিছুদিন যেতে নাযেতে বিউটির কানের নীচে একটি মারাত্মক টিউমার দেখাদেয়। বরিশাল ফেয়ার ক্লিনিকে ডাক্তার, অধ্যাপক এসএম সরোয়ারের তত্ত্বাবধানে অপারেশন করা হয় টিউমারের। টানাপোড়েনের সংসারে তিনটি অপারেশনে হাসপাতালের ব্যায়সহ অন্যান্য খরচ মিটাতে গিয়ে বিক্রি করতে হয় বিউটির বাবার বাড়ী থেকে দেয়া গোয়ালের গরু। স্থানীয়দের কাছ থেকে দের লক্ষ টাকা সুদে সংগ্রহ করে সুমন। বিউটির টিউমার অপারেশনের পরে নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকা মহাখালী ক্যান্সার ইনিস্টিটিউটে পাঠানো হলে পরীক্ষা-নীরিক্ষা শেষে জানানো হয় বিউটির শরীরে ক্যান্সার এর জীবানু পাওয়া গেছে। এ কারণে সদ্য ভূমিষ্ট সন্তান শোভন দাসকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো যাবেনা। দরিদ্র পরিবারে বিউটির শিশু সন্তানের জন্য বাহির থেকে দুধ ক্রয়ের ক্ষমতা না থাকায় বাকাল ইউপি চেয়ারম্যান বিপুল দাস বিউটির সন্তানের জন্য দুই কৌটা গুড়োদুধ পাঠিয়েছেন। ডাক্তার জানিয়েছেন বিউটিকে বাচাতে হলে থেরাপির জন্য তিন লক্ষ টাকার প্রয়োজন। বিউটির বাবা বিজয় বিশ্বাসও ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরন করেছেন। অতি দরিদ্র এই পরিবারটি সরকারি কোন সাহায্য পায়না। বর্তমানে টাকার অভাবে ভাল কোন হাসপাতালে বিউটির চিকিৎসা হচ্ছেনা। বাড়ীতেই মৃত্যুর প্রহর গুনছে বিউটি। অসুস্থ বিউটি কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন বর্তমানে আমার মাথা এবং বুক সহ শরীরের বিভিন্ন অংশ অব্যাহত ভাবে জ¦ালা-পোড়া করছে। যখন কোন অবস্থায় সহ্য করতে পারিনা তখন স্বামী সন্তানের চোখ ফাঁকি দিয়ে নীরবে কাঁদি। বিউটির স্বামী সুমন দাস বলেন আমার সামান্য আয়ে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ ছোট বাচ্চার দুধসহ সংসার চালানোই কঠিন। এক বেলা খেলে অন্যবেলা উপোস থাকতে হয়। এর পরে প্রতি মাসে দের লক্ষ টাকার সুদ এবং স্ত্রী বিউটির জন্য প্রতিদিন একশত বিশ-ত্রিশ টাকার ওষুধ প্রয়োজন। এ বিষয়ে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সুশান্ত বালা সাংবাদিকদের বলেন ক্যান্সারে আক্রান্ত বিউটি বিশ্বাসের সাহায্যের আবেদন আমি বরিশাল অফিসে পাঠিয়ে দিয়েছি। আশা করছি অতি শীঘ্র তিনি সাহায্য পাবেন। এ বিষয়ে বাকাল ইউপি চেয়ারম্যান বিপুল দাস বলেন, আমার পরিষদ থেকে তাকে চাল দেয়া হয়। আগামীতে তার নামে ভিজিডির কার্ড করে দেয়া হবে। আমাদের রাজনৈতিক অভিভাবক আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ’র (এমপি) কাছে বিউটির বিষয়ে বলা হয়েছে। তাকে সাহায্যের জন্য নিয়ে যাওয়া হবে। এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কম্পেøক্সের প্রধান ডাক্তার বখতিয়ার আল মামুন বলেন বর্তমানে ক্যান্সারের অনেক আধুনিক চিকিৎসা রয়েছে যেহেতু কানের নীচে টিউমার থেকে ক্যান্সারের জীবানু পাওয়া গেছে চিকিৎসা করলে ভাল হওয়া সম্ভব। যেহেতু ডাক্তার শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খাতাতে নিষেধ করেছেন, সেহেতু না খাওয়ানোই ভাল।