করনার কারণে ২০১৯, ২০২০ ও ২০২১ সালে বার্ষিক পরীক্ষা হয়নি। প্রায় ৩ বছর পর ২০২২ সালে বার্ষিক পরীক্ষা হয়ে গেল। করনার পূর্বে পরীক্ষা যেমন হয়েছিল, সেরকম পরীক্ষা আর হচ্ছে না। ছাত্রদের বিভিন্ন রকম সুবিধা দেয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতে আর কত দিন ছাত্রদেরকে পরীক্ষা পাশের সুযোগ দেয়া হবে?
মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ন্যাশনাল কারিকুলাম পরিবর্তন হতে যাচ্ছে। ২০২৩ সালে ষষ্ঠ শ্রেণি ও সপ্তম শ্রেণির পাঠ্য বই পরিবর্তন করা হবে। নতুন বই ১লা জানুয়ারি ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে তুলে দেয়া যাবে কিনা তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এখন নতুন কারিকুলামের উপর শিক্ষকদের প্রশিক্ষণও হচ্ছে।
করনাকালীন সময়ে ছাত্ররা লেখা-পড়া করেনি। পড়াশুনা না করার ফলে পড়াশুনা করার অভ্যাস কমে গেছে। যাঁরা শিক্ষক তাঁরাই জানেন ছাত্রদের অবস্থা কেমন কাটছে? পড়াশুনার প্রতি মনোযোগ নেই, ক্লাস ফাঁকি দিয়ে মোবাইল চালা; এমনকি নেশায় আশক্ত হচ্ছে। এরূপ ভয়াবহ অবস্থা থেকে ছাত্রদেরকে পরিত্রান পাওয়ার উপায় কি, তা খুঁজে পদক্ষেপ নিতে হবে শিঘ্রই।
নতুন শিক্ষা কারিকুলাম কেমন হবে? ২০২৩ সাল থেকে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির পাঠক্রম পরিবর্তন হচ্ছে।এররপর ২০২৪ সালে অষ্টম ও নবম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক পরিবর্তন হবে। কিছুদিন আগে শিক্ষা বোর্ডের একজন বড় মাপের ব্যক্তি মন্তব্য করেছেন, নতুন কারিকুলামে পাঠদান শুরু হলে ছাত্ররা বিদ্যালয় থেকে বাড়ি যেতে চাবে না। তাঁর মন্তব্যে মনে হচ্ছে ছাত্ররা নতুন কোন ভালো নেশায় আশক্ত হবে। যা সমাজের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে।
এ মন্তব্যের আলোকে আমি বলতে চাই, বার বার কারিকুলাম পরিবর্তন করায় দেশের জন্য বড় অংকের অর্থ অপচয় হচ্ছে। শিক্ষকদের পূর্ব অভিজ্ঞতা বিফলে যাচ্ছে। তাই বারবার কারিকুলাম পরিবর্তন করা ঠিক হচ্ছে না। দেশের সম্পদ নষ্ট করা উচিত নয়। প্রত্যেকের দেশপ্রেমে জাগ্রত হয়ে কাজ করা উচিত।
যে শিক্ষা অর্জন করলে জাঁতি এগিয়ে যাবে, সে শিক্ষাই ছাত্রদেরকে দিতে হবে। এর আলোকে কিছু বলা, স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে কর্তব্য বোধ করছি। ছাত্রদের উপর শাসনের প্রক্রিয়া বদলে গেছে। আগের দিনে ছাত্ররা শিক্ষকদের প্রতি যথেষ্ট সম্মান করতেন। এমনকি শাস্তির ব্যবস্থা ছিল বলেই ছাত্ররা শিক্ষকদের কথা শুনতো এবং পড়াশুনা করতো। বর্তমানে গ্রাম পর্যায়ে ছাত্ররা লেখাপড়া করতে চায় না। দিন দিন বছর বছর বিদ্যালয়ের ছাত্র সংখ্যা কমে যাচ্ছে। পড়ার আগ্রহ দিন দিন কমে যাচ্ছে। আগ্রহ কমে যাওয়ার কারণ- ১. মোবাইল চালানো ২. নেশা ( যেমন ধূমপান, গাঁজা, মদ, ইয়াবা, ফেন্সিডিল ও মদ পান)। আগামীতে ছাত্রদের ভবিষ্যত উন্নয়ন করতে হবে। নেশা মক্ত সমাজ গড়তে হবে। তাই যে পদক্ষেপ নিলে ছাত্র ভালো হবে সে প্রশিক্ষণ শিক্ষকদের গ্রহণ করতে হবে।
এখন শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ সম্পর্কে একটি কথা বলি,কিছু কিছু শিক্ষক আছেন; শুধুমাত্র সম্মানী ভাতার জন্য প্রশিক্ষণ নিতে যান। ঐ প্রশিক্ষণ নিয়ে ক্লাসে সঠিক পাঠদান দিতে পারেন না। কোন কোন প্রধান শিক্ষক আছেন, প্রশিক্ষণে পাঠাতে সহকারী শিক্ষকদের নিকট থেকে টাকাণ্ডপয়সা নেয়। উপজেলা মাধ্যমিক অফিসেও একই ঘটনা। বেসরকারি শিক্ষকদের উপর এখনো জুলুম চলছেই।
সহকারী শিক্ষকদের উপর অত্যাচার চালালে ক্লাসে ভালো পাঠদান দেয়া বিঘ্নতা ঘটে। তার প্রভাব ছাত্রদের ঘাড়েও পড়ে।
কোন কোন বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্য সহকারী শিক্ষকদের উপর শাসনের আচরণ করে থাকেন। আসলে এ রকম আচরণ কাম্য নয়।
ছাত্রদের ভবিষ্যৎ কিভাবে ভালো করা যাবে সেটাই আমাদের ভাবতে হবে। তারাই জাতির ভবিষ্যৎ। তাদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব আছে বলেই কোন পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে তা শিক্ষা মন্ত্রনালয় সব সময় ভাববে। কোন কারিকুলাম প্রয়োগ করলে দেশের সকল ছাত্রদের মঙ্গল হবে তা বিবেচনার বিষয়।