বর্তমান বিশ্বে যে কয়টি মারাত্মক সমস্যার সম্মুখীন তার মধ্যে মাদকাসক্তি অন্যতম। বিশ্ব জুড়ে আজ মাদকাসক্তি একটি জটিল সামাজিক ব্যাধিরূপে বিস্তার লাভ করেছে। বাংলাদেশেও যেন মাদকাসক্তির হাড় দিন দিন বেড়েই চলেছে। এবং বর্তমানে নতুন প্রজন্মের ওপর বেশি প্রভাব পড়ছে। তাই এ যুব সমাজের অবক্ষয়ের প্রধান কারণ হিসেবে মাদক দ্রব্যকেই দায়ী করা হচ্ছে। কোনো ভাবেই যেন এর প্রভাবকে ঠেকানো যাচ্ছে না, যুব সমাজ ঝুঁকে পড়ছে মাদকের প্রতি ও বাড়ছে মাদকাসক্তি। যে মাদক সম্পর্কে বিশ্লেষণ করতে গেলে বলাই যাই, মাদক হলো বিষধর সাপের বিষাক্ত ছোবলের মতো। যা প্রতিনিয়ত একজন মাদকাসক্ত ব্যাক্তিকে ধীরে ধীরে নিঃশেষ করে দেয়।
মাদকের ভয়াবহতা শুধু সামাজিক, পারিবারিক ও আর্থিক জীবনকে ধ্বংস করে তা নয়, মাদকসেবীর জীবনকে ধ্বংস করে বিভিন্নভাবে। যেমন- কিডনি, লিভার, ফুসফুস নষ্ট করে দেওয়া, রক্তচাপ বাড়ানো ও সন্তান জন্ম দেওয়ার ক্ষমতাকেও নষ্ট করে। মাদকাসক্তির পেছনে বহু কারণরে মধ্যে সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক অস্থিরতা, দারিদ্র্যতার কশাঘাত, বেকারত্বের নৈরাশ্য এবং মাদকদ্রব্যের সহজলভ্যতাও মূল কারন। মাদকাসক্তের সংখ্যা বিবেচনায় বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বের সব দেশের মধ্যে সপ্তম। ১৬ কোটি মানুষের বাংলাদেশে এখন মাদকসেবীর সংখ্যা ৭০ লাখ।
মাদক নিয়ন্ত্রণ করতে হলে কয়েকটি বিষয় বিবেচনায় আনা জরুরি। প্রথমত, সন্ত্রাসের মতো মাদকও একটি আন্তঃরাষ্ট্রীয় সমস্যা, যা কোনো একটি দেশের পক্ষে একা মোকাবিলা বা নির্মূল করা সম্ভব নয়। সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দেশকে নিয়ে মাদকের উৎপাদন ও পাঁচার নির্মূলের চেষ্টা করতে হবে।
সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগেও আজ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এজন্য মাদকবিরোধী সচেতনতা বাড়াতে হবে এবং মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের সুস্থ করে তোলার জন্য মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। মাদকদ্রব্যের উৎপাদন বন্ধের জন্য রাষ্ট্রের উদ্যোগে আইন প্রণয়ন করতে হবে এবং তার প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। মাদক নির্মূলের জন্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর নামে যে প্রতিষ্ঠান রয়েছে, তাকে আরো বেশি সক্রিয় এবং গতিশীল করতে হবে। আর এখানে সত্যিকারের মাদকমুক্ত এবং মাদক নির্মূলে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ জনবল নিয়োগ দিতে হবে। প্রবাদ আছে- একটি জাতিকে রক্ষার জন্য একটি প্রজন্মকে রক্ষা করো। সুতরাং একটি জাতিকে রক্ষার জন্য একটি প্রজন্মকে রক্ষা করতে হবে। একটি জাতিকে গঠনের জন্য একটি প্রজন্মকে গঠন করতে হবে। আমরা যদি একটি মাদকমুক্ত প্রজন্ম গড়ে তুলি, তাহলে সেই প্রজন্ম তার পরবর্তী প্রজন্মকে মাদকমুক্ত হিসেবে গড়ে তুলবে।