খুলনার পাইকগাছায় চাঁদখালী সন্ত্রাসীর ভয়ে ৩ মাস বাড়ী ছাড়া হয়ে পথে পথে ঘুরছে একটি পরিবার। হত্যার ভয়ে শিশু সন্তানসহ মহিলারা অতœগোপণে থেকে চরম দুর্বিষহ জীবন-যাপন করছে। এমনি কি ঐ ঘটনার পর থানা পুলিশ মামলা নিতে রাজি হয়নি। উপায়ন্ত না হয়ে ভূক্তভোগী পরিবারটি খুলনা দ্রুত বিচার আদালতে মামলা করেছে, মামলা নং ১৫২০/২২। আদালত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভিস্টিগেশন (পিবিআই) খুলনা কে তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদনের জন্য আদেশ দিয়েছেন। সরেজমিনে ও মামলা সূত্রে, উপজেলার চাঁদখালী ইউনিয়নের চককাওয়ালী গ্রামের মৃত খালেক সরদার’র পুত্র হাফিজ সরদার (৪০), মৃত মোনতেজ সরদার’র পুত্র শাহাদাত সরদার (২৮) ও মৃত ছাত্তার মৌলভীর পুত্র সুবান সরদার (৪০) সহ ১৬ জন দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী গত ১৪ সেপ্টেম্বর দেশী অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে পাকা বাড়ী ঘর-আসবাবপত্র ভাঙ্গচুর, স্বর্ণালংকারসহ নগদ দেড় লক্ষ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। এ সময় দুর্বৃত্তরা ঘর ভেঙ্গে ঘরের সাথে লাশ বানিয়েও পুতে ফেলার হুমকী দেয়। মামলার বাদী শুকুর আলী গাইনের স্ত্রী মোসা. বেবি বেগম। মামলায় আরো উল্লেখ, বাদীসহ তার ছেলে-মেয়েদের পরনে যে পোশাক ছিল তা নিয়েই পাশে এক আত্মীয় বাড়ীতে আশ্রায় নেন তারা। থানায় গেলে থানা কর্তৃপক্ষ আসামীদের দ্বারা প্রভাবিত থাকার কারণে মামলা নিতে রাজী হয়নি। থানা থেকে আসার পথে আসামিরা বলে তোদের ঘর-বাড়ী ভেঙ্গে দিয়ে কিছুই হয়নি। এখনি এলাকা ছেড়ে চলে যাবি, না হলে আজ রাতেই তোদের জীবনে শেষ করে ফেলবো। সেই থেকে এই পরিবারটি পথে পথে পালিয়ে বেড়াছে। স্থানীয়রা ঘটনা প্রত্যক্ষ করলেও মুখ খুলতে ভয় পাচ্ছেন। এমনকি মিডিয়াকর্মী বা পুলিশ প্রশাসন গেলেও স্থানীরা মুখ খুলছে না ঐ সন্ত্রাসীদের ভয়ে। জনমানব শূন্য একটি ভূতড়ে বাড়ীতে পরিণত হয়েছে। নতুন একতলা বিলডিংয়ে ছাঁদ ভেঙ্গে জানলার গ্রীলসহ দরজা খুলে নিয়ে গেছে। পাশে ছোট পুকুরে ঘরের আসবাবপত্র ফ্রিজ সহ অন্যান্য আসবাবপত্র পড়ে আছে। স্থানীয় নাম প্রকাশ না শর্তে কয়েকজন জানান, উল্লেখীত অধিকাংশ আসামি মাদক, অস্ত্রসহ জুয়া সাথে জড়িত। অবৈধ কর্মকান্ডসহ এলাকার ত্রাস সৃষ্টি করে প্রভাব বিস্তার করে চলেছে। উল্লেখ্য, গত ১০ আগস্ট বিকেলে চাঁদখালীর চককাওয়ালীতে তুচ্ছ ঘটনায় মো. আয়ুব আলী সরদার’র স্ত্রী রেনু বেগম (৫০) আহত হয়। বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২১ দিন পর তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় গত ১১ আগস্ট শুকুর আলীকে প্রধান আসামি করে একই পরিবারের নারীসহ ৫ জনের নাম উল্লেখ করে পাইকগাছা থানায় এজাহার দাখিল করা হয়। এ অনাকাঙ্খিত ঘটনায় রেনু বেগম’র চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়। রূপান্তরিত হত্যা মামলায় শুকুর আলীকে পুলিশ আটক করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠায়। এ সুযোগে সন্ত্রাসীরা ভাঙ্গচুর-লুটপাট সহ হত্যার হুমকী অব্যাহত রেখেছে। মৃত রেনু বেগমের স্বামী মো. আয়ুব আলী সরদার বলেন, ঘটনার সময় আমি খুলনায় ছিলাম। নতুন ঘরে উঠা উপলক্ষে শুকুর আলীর স্ত্রী মিষ্টি বিতরণ সময় এ অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে। তবে পরবর্তীতে যারা বাড়ী ভাঙ্গচুর ও লুটপাটকারীরা তাদের কিছু হয় না। স্থানীয় মো. হাফিজুল সরদার বলেন, হাফিজ সরদার গং শুকুর আলীর বাড়ী ভাঙ্গচুর ও লুটপাট করেছে। ভয়ে শুকুরের পরিবারের সদস্যরা পালিয়ে বেড়াছে। বেবি বেগম বলেন, অনাকাঙ্খিত ঘটনায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় রেনুর মৃত্যু হয়েছে। আদালতে যে সাজা হয় তা মেন নিবো কিন্তু আমাদের বাড়ী ভাঙ্গচুর-লুটপাটসহ হত্যার হুমকী দিচ্ছে সন্ত্রাসীরা। আমরা ভয়ে বাড়ী ফিরতে পারছি না। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাদা মো. আবু ইলিয়াস বলেন, কারো কারণে নিজ বাড়ী ফিরতে পারছে না এটা মানবিক অপরাধ, আইনে কেউ দোষী প্রমাণীত হলে তার সাজা হোক, তবে শিশুসহ অন্য সবাই তো দোষী না। থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জিয়াউর রহমান জিয়া বলেন, শুকুর আলী গাইন ও অন্যান্যের বিরুদ্ধে থানায় দায়ের করা মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়েছে। তবে বারবার চেষ্ঠা করেও মুঠোফোন রিসিভ না হওয়ায় বাড়ী ছাড়া পরিবারের বিষয় মন্তব নেওয়া সম্ভব হয়নি।