কুড়িগ্রামের রাজারহাটের তিস্তা নদীতে সরকারি ভাবে বালু মহালের গেজেট হওয়ার পর ইজারার প্রস্তুতি চলছে। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছেন প্রায় দেড়’শ ঠিকাদার। কুড়িগ্রাম জেলা ও রাজারহাট উপজেলার মধ্যে এটিই প্রথম সরকার অনুমোদিত বালু মহাল। তবে জেলার উলিপুর, চিলমারী, নাগেশ্বরী ও সদর উপজেলায় আরো ১টি করে বালু মহাল অনুমোদন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
জেলা প্রশাসকের রিভিনিউ শাখা থেকে জানা গেছে, উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা নদীর ১০দশমিক ৮৫একর জমির উপর এই বালু মহালের কার্যক্রম শুরুর প্রস্ততি চলছে। ওই ইউনিয়নের রামহরি ও চতুরা মৌজায় প্রায় ১১একর জমির উপর “কালিরহাট বালু মহাল’’নামে এটির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এটি রাজারহাট উপজেলা ও কুড়িগ্রাম জেলার মধ্যে প্রথম সরকার অনুমোদিত বালু মহাল। তবে জেলার উলিপুর ,চিলমারী,নাগেশ্বরী ও সদর উপজেলায় আরো ১টি করে বালু মহাল অনুমোদন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। ২১নভেম্বর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম স্বাক্ষরিত পত্রে বালু মহাল ইজারা দরপত্রে অংশ গ্রহণের নিমিত্তে তালিকা ভূক্তির জন্য আহবান জানানো হয়েছে।
ইতোপূর্বে জেলায় সরকার অনুমোদিত বৈধ কোন বালু মহাল না থাকায় বিভিন্ন নদণ্ডনদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চলার কারণে সরকার বিপুল পরিমান রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছিল। অপরিকল্পিত ভাবে বিপনের উদ্দেশ্যে যত্রতত্র বালু উত্তোলনের ফলে সৃষ্ট নদী ভাঙনে প্রতি বছর গৃহহারা ও ভূমিহীনের শিকার হয়েছিল শতশত পরিবার। তবে গত ২বছর ধরে উপজেলা প্রশাসনের কঠোরতায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন প্রায় বন্ধ হওয়ার কারণে বিভিন্ন ঠিকাদারী ও ব্যক্তি পর্যায়ের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে কিছুটা ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় সরকার অনুমোদিত বালু মহালটি চালু হলে উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে নতুন গতি সঞ্চার করবে। এ ছাড়া এটি চালু হলে সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি সহ অনেক মানুষের কর্মসংস্থান কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে মনে করছেন ঠিকাদার ও সচেতন মহল।
রাজারহাট উপজেলার ঠিকাদার শফিউর রহমান বলেন, বৈধ বালু মহাল না থাকায় তিস্তা নদী থেকে যত্রতত্র অপরিকল্পিত ভাবে বালু উত্তোলন চলে আসায় নদী ভাঙন সহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিত। এখন নির্ধারীত বালু মহাল চালু হলে নদী ভাঙন প্রতিরোধ এবং নির্মাণ কাছে গতি বাড়বে।
বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের ডাংরারহাট গ্রামের বাসিন্দা মাহবুব, খবির উদ্দিন বলেন, আমাদের গ্রামে আবাসিক এলাকায় কোয়ার্টার কিলোমিটারের মধ্যে নির্বিচারে বালু উত্তোলনের ফলে অনেকবার আমাদের গ্রাম নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সরকার অনুমোদিত বালু মহাল চালু হলে এ সংকট কেটে যাবে।
উল্লেখ্য, বালু মহাল ছাড়া বালু উত্তোলন করা দন্ডনীয় অপরাধ এবং বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা ২০১০অনুযায়ী বিপনের উদ্দেশ্যে আবাসিক এলাকার এক কিলোমিটারের মধ্যে নদীর তলদেশ বা উম্মুক্ত স্থানে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ। এ ছাড়া ওই আইনে বালু উত্তোলন ও বিপননের উদ্দেশ্যে ড্রেজিংয়ের অপরাধে অনূর্ধ্ব দুই বছর কারাদণ্ড এবং সর্বনিম্ন ৫০হাজার থেকে ১০লক্ষ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডের বিধান রয়েছে।
রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরে তাসনিম গেজেট প্রকাশের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে “কালীরহাট বালু মহাল” লিজের প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।