দক্ষিণের জেলা ঝিনাইদহ, যশোর, মাগুরা, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও কুষ্টিয়ায় মাঠের পর মাঠ সর্ষে চাষ হয়েছে। চলতি বছর এ অঞ্চলে আশাতীত ভাবে সরিষা চাষ বেড়েছে। অনুকূল আবহাওয়া সরকারের বিশেষ প্রনোদনা, ন্যায্যমূল্য আর ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধির কারণে সরিষার চাষ বেড়েছে। কৃষক ও সংশ্লিষ্ট অফিস বাম্পার ফলনের আশা করছেন। দেশের ঋতু পরিক্রমায় হেমন্ত ও শীত ঋতুতে মাঠে মাঠে এই সরিষার চাষ হয়ে থাকে। এ অঞ্চলে চাষ হওয়া সরিষা দেশের মোট চাহিদার বড় একটি অংশ পূরণে ভূমিকা রাখে। প্রত্যন্ত এলাকা ঘুরে দেখা যায় মাঠের পর মাঠ সরিষা ফুলের অপূর্ব হলুদ শোভার চোখ জুড়ানো দৃশ্য। মাঠে নামলে মনমাতানো গন্ধে বিভোর হয়ে উঠতে হয়। হলুদাভা প্রকৃতির সৌন্দর্য যেমন বাড়িয়ে দিয়েছে, তেমনি অর্থনৈতিক সচ্ছলতার স্বপ্ন জাগিয়ে তুলেছে কৃষকদের মনে। চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলের জেলা গুলোতে মোট ৭২ হাজার ৯২৫ হেক্টর জমিতে সর্ষে চাষ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছিল ৫৪ হাজার ৯০ হেক্টর। এ বছর ১৮ হাজার ৩৩৫ হেক্টর বেশি জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন যশোর আঞ্চলিক কৃষি অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। গত মৌসুমে এসব জেলায় মোট সরিষা চাষ হয়েছিল ৪৯ হাজার ৮৬১ হেক্টর জমিতে। ওই বছর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৫৩ হাজার ৭৩৫ হেক্টর। প্রতিকুল আবহাওয়ার জন্য গত কয়েক চাষ কম হয়েছিল বলে জানা যায়। কৃষি অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কৃষকরা জানিয়েছেন, সরকারের বিশেষ প্রনোদনার কারণে এ বছর সরিষার চাষ বেশি হয়েছে। ফলে একদিকে যেমন তেলের চাহিদা মিটিয়ে অর্থনৈতিকভাব লাভ আসবে, অন্যদিকে জমিতে জৈব সারের ঘাটতি পূরণ হবে।
কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের যশোর আঞ্চলিক অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২২-২৩ মৌসুমে যশোর জেলায় সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ১৩ হাজার হেক্টর কিন্তু চাষ হয়েছে ২৪ হাজার ৮৪৮ হেক্টর, ঝিনাইদহে ৯ হাজার ৭৭০ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও চাষ হয়েছে ১১ হাজার ১১২ হেক্টর, মাগুরায় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৫ হাজার হেক্টর কিন্তু চাষ হয়েছে ১৬ হাজার ৩৫৫ হেক্টর জমিতে, কুষ্টিয়ায় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ হাজার ১৫০ হেক্টর চাষ হয়েছে ১১ হাজার ৬৪৫ হেক্টর জমিতে, চুয়াডাঙ্গায় লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২ হাজার ৮০০ হেক্টর কিন্তু চাষ হয়েছে ৩ হাজার ১৩৫ হেক্টর এবং মেহেরপুরে ৪ হাজার ৩৭০ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও চাষ হয়েছে ৫ হাজার ৮৩০ হেক্টর জমিতে। বিগত ২০২১-২২ মৌসুমে যশোর জেলায় ১১ হাজার ৯২৬ হেক্টর, ঝিনাইদহে ৯ হাজার ১১৯ হেক্টর, মাগুরায় ১৩ হাজার ৩৯ হেক্টর, কুষ্টিয়ায় ৯ হাজার ১৪৭ হেক্টর, চুয়াডাঙ্গায় ২ হাজার ২৬৫ হেক্টর এবং মেহেরপুরে ৪ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছিল। ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার কাঁঠালিয়া গ্রামের কৃষক স্কুল শিক্ষক শফিকুর রহমান জানান, চলতি বছর দুই বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছেন। এতে খরচ হয়েছে মাত্র দেড় হাজার টাকা। আবহাওয়া ভালো থাকলে ৪০ থেকে ৫৫ হাজার টাকার সরিষা বিক্রি সম্ভব। তিনি জানান, কয়েক বছর ধরে সরিষার দাম বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে তেলের দামও। তেলের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য সরিষা একটি ভালো চাষ। যশোর আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. মঞ্জুরুল হক জানান, সরকারের লক্ষ্য আগামী তিন বছরে ৪০ শতাংশ সরিষার চাষ বৃদ্ধি দেশে প্রতি বছর প্রায় ৩০ হাজর কোটি টাকার তেল আমদানি করতে হয়। এসব ঘাটতি পূরণে স্থানীয় ভাবে উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দিয়ে গত বছরের জুলাই থেকে সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে একটি পস্ন্যান করা হয়েছে। সে অনুযায়ী, সরকার প্রনোদনা কর্মসূচি চালু করেছে। যশোর অঞ্চলের ৬ জেলার ১ লাখ ৪০ হাজার কৃষককে বিঘা প্রতি বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া বারি সরিষার বীজ দেওয়া হয়েছে, যার ফলন হয় মাত্র ৭৫ দিনের মধ্যে। বিঘা প্রতি ৫ থেকে ৬ মণ ফলন হয়। সরকারের এ কর্মসূচির কারণে কৃষকরা ব্যাপক ভাবে উৎসাহিত হয়েছে। ফলে সরিষা চাষ এখন এ অঞ্চলে বেশ জনপ্রতি হয়ে উঠেছে। তাছাড়া সম্প্রতি ভোজ্যতেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষকরা সরিষার চাষে আরও বেশি মনোযোগী হয়ে উঠেছে।