রূপসা উপজেলা সদরস্থ মালিবাগ মোড় থেকে আলাইপুর হয়ে শেখপুরা পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার জিসি সড়কের কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে। যার কারণে কাজ সম্পন্নের দু'সপ্তাহ যেতে না যেতেই কার্পেটিং উঠে অনেকটা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম ব্যবহার করে ভয় দেখানোর পাশাপাশি কার্পেটিং উঠে যাওয়া স্থানে দায়সারা মেরামত করা হচ্ছে। ফলে সাধারণ মানুষের ভিতর চাপা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
রূপসা উপজেলা স্থানীয় প্রকৌশলী দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ঘুর্ণিঝড় আম্পান ও বণ্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পল্লী সড়ক অবকাঠামো পূণর্বাসন প্রকল্পের (ঈঅঋউজওজচ) আওতায় ২৩ মার্চ রূপসা উপজেলা সদরস্থ মালিবাগ মোড় থেকে আলাইপুর হয়ে শেখপুরা পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার জিসি সড়কের কার্যাদেশ পায় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স আকন ট্রেডিং এ- কোং এবং মেসার্স এস আর ট্রেডার্স। যেখানে কার্যাদেশ অনুযায়ী চুক্তি মূল্য ছিল ৬ কোটি ২১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। যা প্রতি কিলোমিটার অনুযায়ী দাঁড়ায় ১ কোটি সাড়ে ৩ লক্ষাধিক টাকা। কার্যাদেশ অনুযায়ী কাজ সম্পন্নের মেয়াদ ২০২৩ সালের ৯ ফ্রেব্রুয়ারী। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কার্যাদেশ পাওয়ার পর রাস্তা খুড়ে বালি ও খোয়া দিয়ে ম্যাকাডাম করে দীর্ঘদিন ফেলে রেখে দেয়। ম্যাকাডাম করার জন্য সিডিউলে এক নম্বর ইটের খোয়া দেওয়ার কথা থাকলেও নিন্মমানের ও পুরাতন রাস্তার গামা খোয়া ব্যবহার করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পাশাপাশি রাস্তার পাশে পাইলিং এর জন্যও নিম্মমানের ইট ব্যবহার করা হয়। ম্যাকাডাম করে দীর্ঘদিন ফেলে রাখার কারণে রাস্তায় প্রচুর সাঁদলা পড়ে যায়। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলেও আকষ্মিক তড়িঘড়ি করে কাজ শেষ করেন। তখন ঠিক মত পরিস্কার না করেই নামমাত্র তেল দিয়ে প্রাইম কোড করা হয়। ওই অবস্থাতেই বিটুমিন দিয়ে কার্পেটিং সম্পন্ন করা হয়। নামমাত্র প্রাইম কোড করার ফলে রাস্তার ওপরের কার্পেটিং টেকসই হয়নি। যার কারণে এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই রাস্তার বিভিন্নস্থানে কার্পেটিং উঠে গিয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।
মিডিয়াকর্মীদের নজরে আসার পরে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য কার্পেটিং উঠে যাওয়া স্থানে নতুন করে দায়সারাভাবে মেরামত করা হচ্ছে। যা কিছুদিন যেতে না যেতেই আবার পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসবে বলে অভিজ্ঞমহলের দাবি। এ ছাড়া ম্যাকাডমে নিম্নমানের খোয়া ব্যবহার ও প্রাইড কোড ঠিকমত না করায় সমগ্র কার্পেটিং কিছুদিনের মধ্যে নষ্ট হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। ফলে সরকারের বৃহৎ অংকের টাকা ব্যয় হলেও জনগনের কোন কল্যাণে আসবে না বলে মনে করছেন সচেতন জনগণ। যার কারণে জণসাধারণের ভিতর ব্যাপক চাপা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রূপসা উপজেলার একটি সূত্র জানায়, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সত্বাধিকারী শহিদুল ইসলাম সম্প্রতি বদলীকৃত জেলা নির্বাহী প্রকৌশলীর আস্তাভাজন হওয়ায় অনিয়ম করার সুযোগ পেয়েছে। তিনি খুলনায় থাকাবস্থায় বিল উত্তোলনের জন্য তড়িঘড়ি করে কাজ সম্পন্ন করেন। তার জন্য উপজেলা অফিসকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে কাজে অনিয়ম করার সুযোগ পেয়েছিলেন।
সরেজমিন পরিদর্শনে স্থানীয় এক ভ্যান চালকের সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, কার্পেটিং এর আগে পূর্বের রাস্তার গামা ইট ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ফেলে রাখতে দেখা গেছে। ওই রাস্তায় ময়লা ও সাঁদলা পড়ে গিলেও সেটা পরিস্কার না করে পিচ দিয়েছে।
ওই সময়ে কলেজ পড়ুয়া দুই শিক্ষার্থী বলেন, অনিয়ম করতে দেখলেও প্রতিবাদ করতে পারিনি। প্রভাবশালী নেতার ভয় দেখানো হয়। এভাবে দায়সারাভাবে কাজ করার ফলে সরকার উন্নয়নে যথাযথ
বরাদ্দ দেওয়ার পরেও দূর্ণীতিকারীদের জন্য সুনাম অর্জন করতে পারছে না।
স্থানীয় এক মহিলার কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, কাজ শেষ হওয়ার ১০/১২ দিনের মধ্যে বেশ কিছু স্থানে রাস্তা নষ্ট হয়ে যায়। ঠিকাদারের লোকজন ফের সেসব স্থানে মেরামত করে দিচ্ছে। তবে মেরামতের পরেও মজবুত হচ্ছে না।
বিষয়টি নিয়ে ঠিকাদার শহিদুল ইসলাম সোহেল বলেন, কাজে কোন ত্রুটি ছিল না। তবে কাজ চলমান থাকাবস্থায় ওভারলোডের গাড়ি চলাচল করায় সামান্য সমস্যা হয়েছিল। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী সেটা ঠিক করে দেয়া হচ্ছে।
রূপসা উপজেলা প্রকৌশলী এস এম ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, আমি অসুস্থ ছিলাম। অভিযোগের পর ঊর্ধ্বতন স্যাররা সরেজমিন কাজ পরিদর্শন করেছেন। কাজ পুন:মেরামতের জন্য ঠিকাদারকে চিঠি দেয়া হয়েছে। যেসব স্থানে সমস্যা হয়েছে সেগুলো ঠিক করে দিচ্ছেন।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী দপ্তর খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী একে এম আনিছুজ্জামান বলেন, আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি। অভিযোগ পেয়ে সরেজমিন কাজ পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। বেশ কিছু ত্রুটি পেয়েছি। ঠিকাদারকে কাজের মান যথাযথ করার বিষয়ে লিখিত নোটিশ দিয়েছি।