মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় রংধনু সিএনজি ফিলিং স্টেশন নামে একটি সিএনজি পাম্পের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকার গ্যাস চুরির অভিযোগ করেছে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মোতাহার মাসুম শিকদার বিরুদ্ধে। শুধু গ্যাস চুরি নয় অভিযোগ রয়েছে গ্যাস চুরির কোটি কোটি টাকা তিনি বিদেশে পাঁচার করেছেন। সেটা টাকায় মালয়েশিয়াতে করেছেন নিজের সেকেন্ড হোম।
খবর নিয়ে জানা যায়, গজারিয়া উপজেলার বালুয়াকান্দি এলাকায় ব্যক্তিগত কিছু জায়গার পাশাপাশি সড়ক ও জনপদ বিভাগের ২২শতাংশ ভূমি লিজ নিয়ে সিএনজি ফিলিং স্টেশনের ব্যবসা শুরু করেন মোতাহার মাসুম শিকদার। ২০১১ সালে সেই ইজারার মেয়াদ শেষ হলেও তিনি সেটা নবায়ন করেননি। সড়ক ও জনপদ কর্তৃপক্ষ তার কাছে প্রায় এক কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মোতাহার মাসুম শিকদারের নেতৃত্বে গত ৭ বছরে ধরে কয়েক'শো কোটি টাকার সরকারি গ্যাস চুরি করেছে তারা। ২০১৯সালে একবার র্যাবের হাতে গ্যাস চুরির ঘটনাটি ধরা পড়ে। সে সময় প্রতিষ্ঠানটি চার কর্মকর্তা কর্মচারীকেএক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ১ লক্ষ টাকা আর্থিক জরিমানা করা হয়। কিন্তু এই ঘটনার কিছুদিন পরেই আবারো পুনরায় অবৈধভাবে গেছে সংযোগ চালু করে গ্যাস বিক্রি শুরু করে দেন মোতাহার মাসুম শিকদার।
মোতাহার মাসুম শিকদারের সম্পত্তির অনুসন্ধানে খোঁজ করে জানা যায় শিকদার ডাইন নামে একটি রেস্টুরেন্ট, ফপ¯ টেইলার্স এ- ফেব্রিক্স, কলাপাতা সুইট, কলাপাতা বার্গার এ- ক্যাফ, সোনার বাংলা গ্রীন সিটি নামে একটি আবাসনসহ তার নামে-বেনামে অনেক সম্পত্তি রয়েছে। এর পাশাপাশি মালয়েশিয়ায় একটি বিলাসবহুল বাড়ি গাড়িসহ তার প্রভূত সম্পত্তি রয়ছে। ধারণা করা হচ্ছে যে কোন মুহূর্তে বাংলাদেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে পারেন তিনি সেজন্য মালয়েশিয়ায় গড়ে তুলেছেন তার সেকেন্ড হোম। রংধন সিএনজি পাম্পের মাধ্যমে তিতাসের অবৈধ গ্যাস চুরির টাকা তিনি পাঁচার করেছেন মালয়েশিয়ায়। সম্প্রতি মাসুম শিকদারের বিরুদ্ধে পত্রিকায় রিপোর্ট করায় এক সাংবাদিককে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় ফাসিয়ে হয়রানি ও মারধর করার হুমকি দেয় মাসুম শিকদার। হুকমির ঘটনায় নিরাপত্তা চেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরী করেন ওই সাংবাদিক। ডায়েরী নং:২৪। ভুক্তভোগী ওই সাংবাদিক জানান শুধু গ্যাস চুরি নয়, সরকারের বিপুল পরিমাণ টাকা ট্যাক্স ফাঁকি, অর্থ আত্মসাৎ, জমি নিয়ে প্রতারণা এমনকি দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ প্রধানমন্ত্রী এমনকি জাতের জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়েও চরম আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন মাসুম শিকদার।অনুসন্ধানে জানা যায় তার অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অবৈধ সংযোগ ব্যবহার করা হচ্ছে। তিতাসের অসাধু কর্মকর্তা এবং স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বছরের পর বছর অবৈধ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন মোতাহার মাসুম শিকদার। মাসুম শিকদারের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ঘাঁটাঘাটি করে দেখা যায় মালয়েশিয়ায় থাকাকালীন অবস্থায় তিনি জামাত-বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িয়ে যান। বাংলাদেশর গণতন্ত্র এমনকি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনাকে নিয়ে চরম অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন তিনি। স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে তার আপত্তিকর মন্তব্যে সমালোচনার ঝড় ওঠে তার নিজের এলাকা নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলায়। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীরা তাকে এলাকায় অবাঞ্চিত করে তার বিরুদ্ধে আন্দোলনের ডাক দেয়।
সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা শফিকুল ইসলাম ইমাম বলেন, ঘটনাটি ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসের। সে সময় আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আমাদের জাতীয় পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ফেসবুকে আপত্তিকর মন্তব্য করেন মোতাহার মাসুম শিকদার। চরম অপমাননাকর মন্তব্যের পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে স্পর্শকাতর মন্তব্য করে সে। সে সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সদস্যসহ অনেকে তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করে। তাকে এলাকায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে এলাকায় ঢুকতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
বিষয়টি মোতাহার মাসুম সরকারের পরিবারের একাধিক সদস্যের সাথে কথা হলে তারা জানান সাধারণ মানুষের মতো তারাও মাসুম শিকদারের প্রতারণার শিকার। বড় ভাইদের বিদেশ থেকে পাঠানো বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ এর মাধ্যমে উত্থান হয় মাসুম শিকদারের। এরপর বিভিন্ন লোকের সাথে প্রতারণা, বাংলাদেশ সরকার ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করা সহ নানা অভিযোগ আসতে থাকে তাদের কাছে। এসব ঘটনায় তারাও বিব্রত। দেশের প্রচলিত আইনে তারাও মাসুমের শাস্তি দাবি করেন।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয় মোতাহার মাসুম শিকদারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে চান না বলে জানিয়ে দেন। পরবর্তীতে তাকে অসংখ্যবার ফোন করা হলেও তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।