রূপসা উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহারের বীর নিবাস নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এক বছর আগে প্রথম ধাপের ১২টি নিবাসের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করা হলেও অনেক নিবাসের নির্মাণ কাজের ৫০ শতাংশ এখনো সম্পন্ন হয়নি। আর যা সম্পন্ন হয়েছে সেসব বীর নিবাসে সিডিউল মোতাবেক মালামাল ব্যবহার করা হয়নি। এসব অনিয়মের প্রতিকার চেয়ে ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেও পাননি কোন প্রতিকার।
উপজেলার আনন্দনগর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম নুর মিয়া ফকিরের ছেলে মোঃ হযরত আলী বলেন, আমার আব্বার নামে বরাদ্দ বীর নিবাসের কাজের শুরু থেকে ঠিকাদার মাসুদ প্রতিটিা ক্ষেত্রে অনিয়ম করতে থাকে। সিডিউল মোতাবেক ঘরের থাই গ্লাস, গ্রীল দেয়নি। এ ছাড়া নিন্মমানের পানির ট্যাংকি ও সিলিং ফ্যান এবং অন্যান্য সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। শুধু তাই নয় ইট, বালু সিমেন্ট ব্যবহারেও ব্যাপক অনিয়ম করা হয়েছে। ঘরের ওয়ালে বড় ধরণের ফাটল হলেও তা মেরামত না করে সেখানে পুটিং করে রং দিয়ে ঢেকে দিয়েছে। এসব ব্যাপারে পিআইও ও ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ করেও কোন ফল পাইনি।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মুনছুর আলী বিশ্বাস বলেন এক বছর আগে আমার নামে বরাদ্দ করা বীর নিবাসে নিম্নমানের ইট, বালু ও সিমেন্ট ব্যবহার করার প্রতিবাদ করায় ছাঁদ পর্যন্ত করে এক বছর ধরে ফেলে রেখেছে ঠিকাদার। বিল্ডিংয়ের বিভিন্ন স্থানে স্যাদলা পড়ে গেছে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তোষ কুমার চিন্তাপাত্র বলেন, উপজেলায় বীর নিবাস নির্মাণ কাজের উদ্বোধন হয়, ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। উপজেলা নির্বাহী অফিসার আমার বাড়িতেই এর উদ্বোধন করেন। শুরু থেকে ঠিকাদার অনিয়ম করতে থাকে। তাদের অনিয়মের সাথে আপস করতে না পেরে আমি বাধ্য হয়ে নিজ খরচে অনেক কাজ করিয়েছি। তিনি বলেন ভিত ৫ফুট খোড়ার নিয়ম থাকলেও মাত্র দেড় ফুট খুঁড়ে কাজ শুরু করে। এ সময় তাদের কাজ বন্ধ করে আমি নিজ অর্থে লেবার দিয়ে কাজ করায়। পরবর্তীতে ইট, বালু, সিমেন্ট এবং রড ব্যবহারে ব্যাপক অনিয়ম করতে থাকে। তারপরও এখনো তারা নির্মাণ কাজের অর্ধেকও করতে পারেনি। শুধু যে আমার এখানে অনিয়ম করা হয়েছে তা নয়। এ উপজেলার প্রতিটি বীর নিবাস নির্মাণে অনিয়ম-দুর্ণীতি করা হচ্ছে। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আরো বলেন, অনিয়ম, দুঃশাসন ও দুর্ণীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করলেও স্বাধীন দেশের এই উম্মুক্ত দুর্ণীতির কাছে হার মানতে হচ্ছে। ইতোপূর্বে এ ব্যাপরে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান হযরত আলী, মুক্তিযোদ্ধা মুনসুর আলী বিশ্বাস, সন্তোষ কুমার চিন্তাপাত্র, কাজী মোঃ ইয়াহিয়া, বজলুর রশিদ আজাদ, হাসান মাহামুদ ও টুকু মিনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। তাবে অদ্যবদি তারা কোন প্রতিকার পাননি বলে জানিয়েছেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (চ.দ) সাজ্জাদ হোসেন বলেন, বীর নিবাস নির্মাণে অনিয়ম করলে ঠিকাদারকে ছাড় দেওয়া হবেনা। তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা চেয়ারম্যান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ কামাল উদ্দীন বাদশা বলেন, এই ঠিকাদার বীর নিবাস নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম করছে। স্বচ্ছতার সাথে সময় মত কাজ শেষ করতে না পারলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।