খুলনার পাইকগাছা পৌরসভার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত মধুমিতা পার্ক। ১৯৮০ সালে তৎকালিন খুলনা জেলা প্রশাসক নূরুল ইসলাম উদ্বোধন করেন। পার্কের মধ্যে রয়েছে একটি পুকুর। স্থানীয় লোকজন লবণাক্ত এ ভূূমিতে মিষ্টি পানির আঁধার বলে জানেন। কারণ ঐ পুকুরে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করা হয়। পৌরসদরের শত শত মানুষ বাসাবাড়ি, হোটেল ও রেস্তরায় ঐ পুকুরের পানি পান করেন। যার গেট, সীমানা প্রাচীর সহ চারিপাশে বসার জন্য বেঞ্চ তৈরি করা হয়। লাগানো হয় ফুল বাগান। পৌরবাসির বিনোদনের একমাত্র স্থান এই মধুমিতা পার্ক। যার দিকে নজর পড়ে একশ্রেণির প্রভাবশালী, ভূমিখেকো, রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও ব্যবসায়ীদের। তারা পার্কের উত্তর ও পূর্ব পাশে দখল করে মোটা টাকা লেনদেনের মাধ্যমে ৩০টি পাকা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বা কেউ অগ্রিম ও মাসিক টাকা নিয়ে দিয়েছেন ভাড়া। ফলে ধ্বংস হয়েছে মধুমিতা পার্কের সীমানা প্রাচীর, বসার জায়গা ও চারিধারের রাস্তা। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পিছনে যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগ সহ রাতের আঁধারে চলে অনৈতিক কার্য্যকলাপ। সঙ্গে সঙ্গে নষ্ট হয় পৌরবাসির ব্যবহার যোগ্য মিষ্টি পানি। এ অবস্থায় একদল সচেতন মানুষ মধুমিতা পার্ক সংরক্ষণ কমিটি গঠন করেন। তারা পার্কের বাতিখালি মৌজার এসএ ৪, ১৪ ও ৯১ খতিয়ানের ১৭১, ১৭২ দাগ ভুক্ত ১.৪৫ একর জমি উদ্ধার এবং অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করার জন্য আদালতের দারস্থ হন। ২০০৫ সালের মামলার চলমান প্রক্রিয়ায় নালিশি মধুমিতা পার্কের জমির উপর ষ্টে দেন আদালত। পরবর্তীতে অবৈধ দখলদাররা মহামন্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল ডিভিশন ৫১০/৯ নম্বর লিভ টু আপিল মামলায় গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ অবৈধ দখলদারদের আবেদন না মঞ্জুর করেন। তবে এরপরও অবৈধ দখলদাররা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় আজও দখলে আছে। অবৈধ দখলদাররা উচ্ছেদ হয়নি। দীর্ঘদিন পর গত ১০ নভেম্বর ২০২২ অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের জন্য মানববন্ধন করেন মধুমিতা পার্ক সংরক্ষণ কমিটি। এরপর অবৈধ দখলদাররা মহামান্য হাইকের্টের আদেশ অমান্য করায় মধুমিতা পার্ক সংরক্ষণ কমিটির পক্ষে কন্টেম অফ কোর্ট পিটিশন ১০২/২২ দাখিল করেন। তখন আদালতের আদেশ কেন দীর্ঘদিনেও মধুমিতা পার্কের অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করা হয়নি মর্মে খুলনা জেলার জেলা প্রশাসক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের নিকট মহামান্য হাইকোর্ট জানতে চান। এরপরও মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। উচ্ছেদের নামে গত ১০ ডিসেম্বর' কিছু ইট, বালু ও খোয়া তুলে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সলিসিটর উইং সহ সহকারি অ্যাটর্নি জেনারেল কে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম চলমান মর্মে জানানো হয়। বাস্তবে কোনো উচ্ছেদ কার্যক্রম করা হয়নি। মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের আদেশ বাস্তবায়নে টালবাহনা সচেতন মানুষকে হতবাক করেছে। আদালতে মধুমিতা পার্ক সংরক্ষণ কমিটি আবেদনকারীর একজন অ্যাড. প্রশান্ত মন্ডল এফএনএসকে বলেন, আদালতের রায় দ্রুত বাস্তবায়নে দাবী জানাছি। পাইকগাছা প্রেসক্লাবের সভাপতি ও বিশিষ্ট আইনজীবী এফএমএ রাজ্জাক এফএনএসকে বলেন, স্থানীয় প্রশাসনকে যথা শীঘ্রই মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক মধুমিতা পার্কের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হোক। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মমতাজ বেগম এফএনএসকে বলেন, ২০০৮ সালে আদালতের রায়ে নির্মাণ সামগ্রী অপসারণের আদেশ ছিলো, উচ্ছেদের কোনো নির্দশনা না থাকায় পদক্ষেপ নিতে পারিনি। জেলা জিপির মতামত নেওয়া হয়েছে। আগামী ৫ তারিখ আদালতে শুনানি পরবর্তী যে আদেশ হয় সেমত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।