সাতক্ষীরার মাঠে মাঠে হলুদ রঙা গালিচায় শোভা পাচ্ছে সরিষার ক্ষেত। দিগন্তজোড়া ফসলের মাঠ ভরে গেছে সরিষা ফুলে। চির সবুজের বুকে এ যেনো কাঁচা হলুদের আল্পনা। যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই যেনো ফুলের মেলা। সরিষা চাষের পাশাপাশি মৌবাক্স স্থাপন করেছেন অনেকেই। মধু আহরণের জন্য মৌচাষিরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। মৌচাষি আফজাল হোসেন বলেন, মৌমাছি পরাগায়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। এতে সরিষার ফলন বৃদ্ধি পায়। আবার মধুও সংগ্রহ করা যায়। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার দাঁতভাঙা বিলে মৌবাক্স স্থাপন করে মধু সংগ্রহ করা হচ্ছে। এ ছাড়া অন্যান্য বিল ও মাঠে মৌবাক্স স্থাপন করেছেন মৌয়ালরা। সরিষার ফুলে দুলছে প্রায় দুই লক্ষ কৃষকের স্বপ্ন।
জেলার কলারোয়া, সদর উপজেলাসহ বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে দেখা যায়, কৃষকদের আবাদকৃত জাতের মধ্যে রয়েছে বারি-৯, ১৪, ১৫ ও ৪, টরি-৭ ও স্থানীয় জাত। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি আবাদ হচ্ছে বারি-১৪ ও ১৫ জাতের সরিষার চাষ। সরিষার জমিতে ফুলে ফুলে মৌমাছি মধু আহরণ করছে। চারিদিকে প্রকৃতির বুকে যেন সুন্দরের আগুন। প্রকৃতি সেজেছে অপরূপ সৌন্দর্যের নান্দনিক রূপে। রাস্তার দুই পাশে সরিষার হলুদ ফুলে ভরা দিগন্তজোড়া মাঠ। মাঠ ভরা সরিষা ক্ষেতের হলুদ মাঠে এক ফুল থেকে অন্য ফুলে মৌমাছিরা মনের আনন্দে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত। সরিষা চাষ লাভজনক হওয়ায় চাষিরা এখন ঝুঁকে পড়ছে সরিষা চাষে। কেউবা সরিষার বীজ তৈরি করেও লাভবান হচ্ছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সাতক্ষীরায় সরিষার চাষে ভালো ফলনের আসা করছেন কৃষকরা।
সাতক্ষীরার বেলে দোঁয়াশ মাটি শুধু ধান নয়, সরিষা চাষের জন্যও উপযোগী। তাই আমন ধান কাটার পরপরই সদর উপজেলার দাঁতভাঙা বিল, যোগরাজপুর বিল, কাশেমপুর বিল, মাছখোলার বিলসহ তালা, কলারোয়া, কালিগঞ্জ, দেবহাটা উপজেলার মাঠে,প্রান্তরে এখন হলুদের সমারোহ। রাস্তার দুধারে যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই সরিষা ক্ষেত। অনাবৃষ্টির কারণে সাতক্ষীরায় আমন ধানের ফলন কম হয়েছে। আমন ধানের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকরা লাল, দুইশিরা, চারশিরা, বারি সরিষা-১২, বারি সরিষা-১৮ সরিষার চাষ করেছেন। এরমধ্যে লাল জাতের সরিষার চাষ বেশি হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া, পোকা মাকড়ের উপদ্রব কম থাকা ও মৌমাছির পরাগায়নের ফলে অন্য বছরের তুলনায় কম খরচে অধিক উৎপাদন হবে বলে আশা করছেন কৃষকরা। সরিষা ভাঙার পরপরই তারা বোরো ধানের চাষ করবেন। এবার বাজারে ভোজ্য তেলের দাম বেশি হওয়ায় লাভও বেশি হবে বলে মনে করছেন তারা। একইসাথে কৃষি বিভাগ সরিষা চাষীদের বীজ ও সার দিয়ে সহায়তা করায় অনেকেই সরিষা চাষে উৎসাহিত হয়েছেন।
জেলায় গতবছর ১৬ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে ১৭ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে ১২ হাজার ১০৫ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়। এবার ১৩ হাজার হেক্টর জমি সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে ১৩ হাজার ৮০০ হেক্টর জমি সরিষা চাষের আওতায় আনা হয়েছে।
সদর উপজেলার ফিংড়ি ইউনিয়নের কৃষক মনিরুল ইসলাম বলেন, ৫ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছেন। মোট খরচ (চাষ, বীজ, সার ও মাড়াই খরচ) ৬ হাজার টাকা। বিঘা প্রতি ৫ মণের বেশি ফলন হবে। বিঘা প্রতি লাভ হবে তিন থেকে চার হাজার টাকা করে।
অপর কৃষক হাফিজুল ইসলাম বলেন, বিঘা প্রতি ৬/৭ মণ সরিষা হবে। আমন ধানের লোকসান পুষিয়ে যাবে।কৃষক লাল জাতের সরিষা লাগিয়েছি। সেচ না দিয়েও ফসল ভাল হয়েছে।
সদর উপজেলার ধুলিহর এলাকার কৃষক জাহাঙ্গীর কবির বলেন, দুই বিঘা জমিতে লাল জাতের সরিষা চাষ করেছি। এ ছাড়া দুই শিরা ও চারশিরা জাতের সাদা সরিষার চাষ হয়েছে। ৫ হাজার টাকা খরচ করে বিক্রি হবে ১০ হাজার টাকায়।
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (খামারবাড়ি) উপপরিচালক ড. জামালউদ্দিন বলেন, রবি মৌসুমে ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে প্রণোদনা, কীটনাশক ও সারের পাশপাশি বৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ায় সরিষা চাষ হয়েছে ১৩ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রা সাড়ে ৮শতাংশ। গতবারের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি। বারি সরিষা-১২, বারি সরিষা -১৮ ও স্থানীয় ৭টি জাতের সরিষা চাষ হয়েছে। সরিষার পর ওই জমিতেই বোরো চাষ করা যাবে। আবহাওয়া ভাল থাকায় বাম্পার ফলন হবে। দেশে সরিষা তেলের চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে। জেলায় প্রায় দুই লক্ষ কৃষক এবছর সরিষা চাষ করেছেন। এবারে সরিষা চাষে কৃষকরা লাভবান হলে আগামী বছর জেলার সকল পতিত জমিতে সরিষা চাষ করার প্রতি কৃষকদের আগ্রহ বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।