পৌষের শুরুতেই দেশজুড়ে শীতের হাওয়া। সেই হাওয়ার ছন্দে দুলছে সরিয়ার হলুদ ফুল। মাঠের পর মাঠ এমন চোখ জুড়ানো হলুদের মেলা প্রকৃতিকে সাজিয়েছে যেন অপরূপ সাজে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠে এখন শুধু হলুদের ঢেউ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এখন কৃষি জমির দিকে চোখ মেললেই দেখা যায় সরিষা খেত। অনুকূল আবহাওয়া ও কৃষকের যথাযথ পরিচর্যার কারণে এবার এ উপজেলায় সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে। আবাদের পরিমাণ যেমন বেড়েছে পাশাপাশি চাষ হচ্ছে নতুন নতুন জাতের সরিষা। এসবের মধ্যে রয়েছে বীনা-৯, বারী-১৪ ও ও ১৮ জাতের সরিষা। সরিষাখেতে ভালো ফলন আসায় চাষীদের মুখেও তৃপ্তির হাসি দেখা যাচ্ছে।চাষীরা বলছেন ভোজ্যতেলের দাম বাজারে বেশি হওয়ায় এবার চাষ বেড়েছে। তারা আশা প্রকাশ করছেন বৃষ্টি-বাদল না হলে এবার প্রতি কানি জমিতে চার থেকে পাঁচ মণ সরিষা পাওয়া যাবে।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় থেকে জানা যায়, এ বছর উপজেলা কৃষি বিভাগের তত্ত্বাবধানে ৫৫০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যক্তিগত উদ্যোগে আরো ৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ করেছেন কৃষকরা। ভালো ফলন পেতে কৃষকদের বিনামূল্যে এক কেজি উন্নত জাতের সরিষা বীজ, ২০ কেজি সার ও পরামর্শ দেওয়া হয়। এবছর কম বেশি উপজেলার সব ইউনিয়নে সরিষা চাষ করা হলেও সবচেয়ে বেশি আবাদ করা হয়েছে ধরখার ইউনিয়নে। রুটি গ্রামের কৃষক ইমতিয়াজ মিয়া জানান, আমি এ বছর দুই কানি জমিতে সরিষা আবাদ করেছি। ফলন দেখে মনে হচ্ছে উৎপাদন অনেক ভালো হবে।গুলখারের ফয়সাল হোসেন জানান, এবারও একই পরিমাণ জমিতে সরিষা চাষ করেছি। ঝড়-বৃষ্টি না হলে গতবারের চেয়ে এবার উৎপাদন আরও বেশি হবে। সে কারণে বেশি লাভেরও আশা করছি।’ উপজেলা সহকারি কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানান, প্রতি বিঘা জমিতে গড়ে চার থেকে পাঁচ মণ সরিষা উৎপাদন হয়। তবে ফলন বেশি ভালো হলে ছয় থেকে সাত মণ উৎপাদন হয়। তিনি আরো জানান, ফালগুনের শুরুতে খেত থেকে সরিষা তোলা শুরু হবে। সরিষা বীজ বাজারে এখনো না এলেও বিক্রি হচ্ছে সরিষা শাক। বাজারে এই শাকের চাহিদা থাকায় বীজের পাশাপাশি শাক বিক্রি করেও ভালো আয় করেন কৃষকেরা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম ভোরের কাগজকে বলেন, এ অঞ্চলের মাটি সরিষা চাষের উপযোগী হওয়ায় দিন দিন সরিষার আবাদ বাড়ছে। আবাদ ভালো হওয়ায় আশা করছি এবছর আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে। তিনি আরো বলেন, চাহিদা বেশি থাকায় এ বছর কৃষকরা প্রতি মণ সরিষা চার হাজার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা দরে বাজারে বিক্রি করতে পারবেন।