১৯৭১। শিপাহী মো. আলাউদ্দিন পাকিস্তানি সেনাবাহীনির অর্ডন্যান্স কোড় ছিলেন টকবগে যুবগ। ঘরে বৃদ্ধা মা ও ১৮ সামের একমাত্র ছেলেসন্তা এবং স্ত্রী। এই মধ্যেই দেশ স্বাধীনের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়।
মো.আলাউদ্দিন পাকিস্তানি সেনাবাহীনির অর্ডন্যান্স চাকুরি করতেন। দেশে যুদ্ধ শুরু হলে তিনি ঢাকা থেকে পালিয়ে স্ত্রী ও ১৮ মাসের একমাত্র শিশুসন্তানকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি বরিশালে গৈলাতে চলে আসেন। তাঁদেরকে বাড়ি রেখে, দেশে স্বাধীনের জন্য মুক্তিযুদ্ধে চলে যায়ন। এ সময় মো.আলাউদ্দিন এর মা ভানু বিবি ছেলেকে যুদ্ধে যেতে বাধাঁদেয়। তখন আলাউদ্দিন তার মাকে বলেছেন মা আমি যুদ্ধে মারাগেলে কিহবে ? দেশতো শত্রুরহাত থেকে মুক্ত হবে। তুমি আমার ছেলেকে দেখে রেখো। আমি যুদ্ধশেষকরে আমার ছেলের জন্য স্বাধীনতার পতাকা নিয়ে আসবো। দেশ স্বাধীন হলো সে পতাকা নিয়ে আসে নাই। তিনি শহীদ হয়ে আসলেন। মা, স্ত্রী ও ১৮ মাসের একমাত্র শিশু সন্তানের মায়া আটকাতে পারে নাই শিপাহী মো.আলাউদ্দিনকে। দেশকে স্বাধীন করার ব্রত নিয়ে নেমে পড়েন পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইতে। সম্মুখযুদ্ধে অনেক শত্রুকে ঘায়েল করেছেন। একপর্যায়ে নিজেও শহীদ হয়েছেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীর দেশে আর মা, স্ত্রী ও সন্তানের মুখ-কোনোটাই দেখে যেতে পারেনাই তিনি। তবে তাঁর প্রাণের বিনিময়ে উত্তর ষূরিরা পেয়েছে লাল-সবুজের পতাকা।
শহীদ মুক্তিযোদ্ধা শিপাহী মো.আলাউদ্দিন বরিশাল জেলার (তদকালিন গৌরনদী) বর্তমান আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের গৈলা গ্রামের বাসিন্দ ছিলেন। আগৈলঝাড়ার সরকারি গৈলা মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন মাঠে তার সমাধিস্থল রয়েছে।
স্বজনদের কাছ থেকে শোনা তথ্য জানিয়ে শহীদ মো.আলাউদ্দিনের ছেলে আব্দুল্লাহ লিটন বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ ঢাকা সেনানিবাস থেকে পালিয়ে এসে এপ্রিল মাসের প্রথম দিকেই তাঁর বাবা মুক্তিযুদ্ধে চলে যায়।
শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মো. আলাউদ্দিনের সহযোদ্ধাদের বরাত দিয়ে আব্দুল্লাহ লিটন বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ এপ্রিল বরিশাল জেলার প্রবেসদার গৌরনদীর কটকস্থ সাউদের খাল ব্রীজদিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর বরিশাল জেলায় ঢুকবে এই সংবাদ জানতে পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা পূর্বথেকে গৌরনদীর কটকস্থ সাউদের খাল ব্রীজ সংলগ্ন নামক স্থালে অবস্থান নেয়। কয়েকশত পাকিস্তানি বাহিনীর গাড়ী ট্যাং নিয়ে কটকস্থ সাউদের খাল ব্রীজের এখানে আসলেই ২৫ এপ্রিল ৯নং সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে সমূখযুদ্ধ হয় পাকিস্তানি বাহিনীর সংগে। ওই যুদ্ধে মো.আলাউদ্দিন পাকিস্তানি বাহিনীর গুলিতে বরিশালে প্রথম শহীদ হয়ন। আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের সরকারি গৈলা মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন মাঠে কবরে দাফন করা হয়।
শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মো.আলাউদ্দিনের একমাত্র ছেলে সন্তান আব্দুল্লাহ লিটন।২৯ ডিসেম্বর ২০২২ ইং বৃহস্পতিবার তাঁর বাবা সম্পর্কে জানতে চাইলে আবেগজড়িত কন্ঠে বলেন, আমার বাবা দেশের জন্য শহীদ হয়েছেন। দেশের মানুষকে স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। জন্মের পরে বাবাকে দেখেছি (আমার বয়স ১৮ মাস) কিন্তু বাবার মুখ আমার মোনে নেই। পিতার আদর স্নেহ কেমন বুঝি নাই, জানি না। আমার দাদির কাছে বাবা বলে গিয়েছিলো আমার জন্য স্বাধীনদেশর পতাকা নিয়ে আসবে কিন্তু দেশ স্বাধীন হলো দেশ পতাকা পেলো আমার বাবা শহীদ হয়েফিরলেন। ছোট বেলা স্কুলে গেলে বন্দুরা তাদের বাবাকে বাবা বলে ডকতো। আমি কখনও বাবাকে দেখি নাই বাবা বলে ডাকতে পারি নাই। আমার পিতা দেশ স্বাধীনতার যুদ্ধে শহীদ হয়েছে এই গর্বনিয়ে চলি। মানুষের সামনে গর্ব করে বলি আমার পিতার রক্তের বিনিময়ে আমারা স্বাধীন দেশ পেয়েছি।