পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে পুলিশের সামনেই প্রতিপক্ষের মারামারিতে দুই নারী আহত ও শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটেছে।
বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) দুপুরে ভুক্তভোগী ঝুমুর বেগম বাদী হয়ে মির্জাগঞ্জ উপজেলা বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট স্বপন কুমার ঘোষের আদালতে চারজনকে আসামি করে একটি অভিযোগ দায়ের করলে আদালত অভিযোগটি তাৎক্ষণিক আমলে নিয়ে আসামীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার কাকড়াবুনিয়া ইউনিয়নের গাবুয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ওই গ্রামের মৃত আলতাফ মৃধার ছেলে নজরুল মৃধা ও তার পরিবারের লোকজনের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ।
এ ঘটনায় আহত হয়ে ভুক্তভোগী মোসাঃ ঝুমুর বেগম (২৬) ও তার ছোটবোন রুবি আক্তার (২৩) মির্জাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আহতরা ওই গ্রামের মোঃ ইউনুচ মৃধার কন্যা।
এদিকে মির্জাগঞ্জ থানার এএসআই জসিম উদ্দিন রুবির সাথে কথা বল সময় রুবি ভিডিও করলে এস আই জশিম এর সাথে থাকা কনস্টেবল ইমরান মোবাইল ফোনটিতে থাবা দেয়। পরে ভিডিওটি কেটে যায়।
অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গাবুয়া গ্রামের ইউনুচ মৃধা তার চাচাতো বোনের নিকট থেকে ২২ শতাংশ জমি ক্রয় করেন। সেই জমি নিয়ে প্রতিবেশী নজরুল মৃধার পরিবারের সাথে দীর্ঘদিন ধরে তাদের বিরোধ চলে আসছিল। ইউনুস মৃধার দুই ছেলে ও দুই মেয়ে ঢাকাতে বসবাস করে।
বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) সকালে তার দুই মেয়ে ঝুমুর ও রুবি বাড়িতে আসলে তারা বিরোধীয় জমির ধান কাটতে পারে ভেবে প্রতিপক্ষ নজরুল মৃধা থানায় গিয়ে পুলিশ নিয়ে আসে। পরে পুলিশের উপস্থিতিতে উভয়পক্ষ তর্কে জড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে পুলিশের উপস্থিতিতেই নজরুল মৃধা ও তার পরিবারের লোকজন প্রতিপক্ষের ঝুমুর ও রুবীকে লাঠি দিয়ে এলোপাথারি ভাবে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। এমনকি ১ নং আসামি নজরুল মৃধা ও ৩ নং আসামি সোহাগ মুন্সি রুবি আক্তারের শ্লীলতাহানি ঘটায়।
এ বিষয়ে নজরুল মৃধা বলেন, ঐ দুই নারী আমাদের উপর আগে আক্রমণ করেছিলেন। পরে আমরা তার প্রতিরোধ করেছি।
ভুক্তভোগী রুবি আক্তার অভিযোগ করে বলেন, আমরা দুই বোন সকালবেলা ঢাকা থেকে বাড়িতে বেড়াতে আসি। পরে ওরা পুলিশ নিয়ে আমাদের বাসার সামনে এসে আমাদেরকে বকাবকি ও গালিগালাজ করতে থাকে । এ সময় আমরা প্রতিবাদ করলে আমাদেরকে মারধর করছে। নজরুল আমার পরনের কাপড়চোপড় টেনে খুলে ফেলছে। তখন পুলিশে ওদের কিছু না বলে উল্টো আমাদের বকাবকি করছে। এমনকি আমি ভিডিও করতে গেলে আমার গায়ে হাত দিছে। পুলিশ আমাদের ঘরের দরজার তালা ও পিছনের জানালা ভেঙ্গে মোবাইল নেওয়ার চেষ্টা করছে। মোবাইল নেওয়ার জন্য কনস্টেবল ইমরান আমার হাত ধরে টানাটানি করছে। আমরা এর বিচার চাই। আমরা গরিব বলে কি এর বিচার পাবো না? দেশে কি বিচার নাই! ওরা কিভাবে পুলিশের সামনে আমাদেরকে মারধর করে। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
এএসআই মোঃ জসিম উদ্দিন বলেন, ওই দুই নারী ও তার পরিবার নজরুলদের জমির কাচা ধান কাঁটার পাঁয়তারা করছিল। তাই নজরুলের স্ত্রী তহমিনা থানায় এসে অভিযোগ করলে আমরা তদন্তে সেখানে যাই। তখন উভয়পক্ষকে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় ওই দুই নারী বাদীপক্ষের লোকজনের উপর হামলা করে। এসময় আমরা তাদেরকে থামিয়ে দেই।
মির্জাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, এক পক্ষের ধান অন্যপক্ষ কেটে নিয়ে যাবে, এরকম একটি অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশ ঘটনাস্থলে তদন্তে যায়। তখন উভয় পক্ষের মহিলারা মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় পুলিশ তাদেরকে শান্ত করার চেষ্টা করে। পরে কোন পক্ষ থেকেই মারামারির বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।