কালিগঞ্জের কৃষ্ণনগর ইউনিয়নে আদুয়াখালি খাল অবৈধভাবে দখল করে নিয়ে লোনা পানি তুলে দিয়েছেন আবদুল মাজেদ ঢালী নামে এক প্রভাবশালী। সরকারি খাস খাল দখল করে লোনা পানি উত্তলোন করায় বিপাকে পড়েছেন খালের পার্শ্ববর্তী এলাকার অনেক কৃষক।
স্থানীয় বাসিন্দা পরিমল হালদার, মাসুম বিল্লাহ, মামুন খাঁ, ইউনুস খাঁসহ আরও কয়েকজন কৃষক জানান, আদুয়াখালী খালের পানি দিয়ে দীর্ঘদিন যাবত তারা খাল সংলগ্ন জমিতে চাষাবাদ করে বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করছেন। প্রায় ৩ বছর আগে খালের কিছু অংশ অবৈধভাবে দখল করে নেন শাহাপুর গ্রামের মৃত জহির ঢালীর ছেলে আবদুল মাজেদ ঢালী (৬০)। সম্প্রতি তিনি সবার অগোচরে পশ্চিম পাশে অবস্থিত অপর একটি খাল থেকে আদুয়াখালী খালে লোনা পানি উঠিয়ে দেয়ায় খালের পানি লবণাক্ত হয়ে ফসলের ক্ষেতে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে গেছে।
উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফারুক হোসেন ও কৃষ্ণনগর ইউপি’র ৬নং ওয়ার্ডের সদস্য নূর হোসেন জানান, আদুয়াখালী খাল থেকে স্থানীয় কৃষকরা ফসল উৎপাদনের জন্য পানি নিতেন। কিন্তু ওই খালে লবন পানি মিশ্রণের কারণে কৃষকদের ফসল উৎপাদন হুমকির মুখে পড়েছে। তারা আরও বলেন, খালের পাশে অবস্থিত প্রায় ৩০ বিঘা জমিতে প্রতিবছর ৩০ থেকে ৪০ লক্ষ টাকার ফসল উৎপাদন হয়। এখন খালটিতে লোনা পানি তুলে দেয়ার কারণে ক্ষতির সম্মুখিন হবেন এসব কৃষক।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, খাস খালটি ১৯৭৯ সালে বন্দোবস্ত নিয়েছিলেন মানপুর গ্রামের আবদুস সোবহান ও মুকুন্দপুর গ্রামের শহর আলী। ১৯৮৪ সালে সোবহান ও শহর আলী দখল নিতে আসলে স্থানীয়রা তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। ১৯৯৪ সালে মামলার রায়ে জনস্বার্থে খালটি পুনরায় খাস খতিয়ানভুক্ত করা হয়। পরবর্তীতে সোবহান ও শহর আলী রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে দীর্ঘ শুনানি শেষে বিজ্ঞ বিচারক আপিল নামঞ্জুর করে জনস্বার্থে খালটি উন্মুক্ত রাখার আদেশ প্রদান করেন। কিন্তু প্রায় ৩ বছর যাবত শাহাপুর ও কৃষ্ণনগর মৌজার আদুয়াখালি খালের ৮ দশমিক ৫ একর খাস খালের মধ্য দক্ষিণ দিকের শাহাপুর মৌজার প্রায় ২ একর জায়গা আবদুল মাজেদ ঢালী প্রভাব খাটিয়ে দখলে রেখেছেন।
খাস জায়গা দখল ও লবণ পানি উঠানোর বিষয়ে আবদুল মাজেদ ঢালীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি দীর্ঘদিন যাবত এই জায়গাটি ভোগ দখল করে আসছি। এখানে অল্পকিছু খাস জায়গা রয়েছে। খাস জায়গা বাবদ শহিদ মাদানী জামে মসজিদে প্রতিবছর আমি ৫ হাজার টাকা প্রদান করি। তবে লবণ পানি উঠানোর বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।
সরকারি খাল অবৈধদখলের বিষয়ে জানতে চাইলে জয়পত্রকাটি ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তা জালাল উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, খাল দখলের বিষয়টি আমার জানা নেই। খাস খাল কেউ অবৈধভাবে দখল করলে তার বিরুদ্ধে আইননানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
এমতাবস্থায় খাস খালটি দখলমুক্ত করে তা জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার জন্য উদ্ধর্তন কতৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী।