রাজশাহীর পুঠিয়ায় বানেশ্বর-ঝলমলিয়া দুই হাটে ভেজাল খেজুর গুড়ে সয়লাভ হওয়ার কারণে ক্রেতারা বাধ্য হয়ে,অনলাইনের মাধ্যমে খেজুরগুড় ক্রয় করছে। উপজেলার হাটটিতে বেশিরভাগ চিনি মিশ্রিত ভেজাল গুড় কেনাবেচা হচ্ছে বলে ক্রেতারা অভিযোগ তুলেছেন। রাজশাহী নাটোর জেলায় শীত মৌসুম আসলে ব্যাপক চিনির চাহিদা দেখা দেয়। চিনি মিশানো গুড়গুলি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নীরবিগ্নে চলে যাচ্ছে। স্থানীয় গুড় উৎপাদনকারিরা বলছে, প্রতিদিন এই এলাকার খেজুরের গুড়ের বড় একটি অংশ অনলাইন মার্কেটিং মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যাচ্ছে। এতে করে গুড় উৎপাদনকারিরা দাম বেশি পাচ্ছেন এবং ক্রেতারা ভালো পন্য পাচ্ছেন। বেশি লাভের আশায় অনেকেই অনলাইনে গুড় বিক্রিতে বেশী আগ্রহী হচ্ছেন। উপজেলার শনি,মঙ্গলবার বানেশ্বর হাটবার। আর সোম ও বৃহস্পতিবার ঝলমলিয়া হাটবার। প্রতি সপ্তাহে দুই হাটে প্রায় ৫০০ মে.টন গুড় কেনাবেচা হয়ে থাকে। আর প্রতি কেজি পাটারী গুড় ১১০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অপরদিকে অনলাইন বাজারে সাধারন গুড় ১৫০ টাকা ও বিভিন্ন মসলাযুক্ত গুড়ের প্রকার ভেদে ২৫০ টাকা পর্যন্ত কেজি দামে বিক্রি হচ্ছে। অনলাইনে গুড় ব্যবসায়ি নুরুল আলম বলেন, উপজেলার মধ্যে অন্তত দুই শতাধিক উদ্যোক্তা আছেন, যারা অনলাইন বা গ্রুপের মাধ্যমে গুড়ের ব্যবসা করছেন। উদ্যোক্তারা প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জেলায় থেকে খেজুর গুড়ের অর্ডার পাচ্ছেন। ক্রেতার চাহিদা মোতাবেক সে গুড় কুরিয়ারের মাধ্যমে সরবরাহ করা হচ্ছে। বিক্রেতারা মোবাইল ব্যাংকের মাধ্যমে সে টাকা গ্রহণ করছেন। প্রতিদিন একজন ব্যবসায়ি অনলাইনে ৪০ থেকে ১০০ কেজি পর্যন্ত গুড় বিক্রি করছে। গত বছরগুলোতে যাদের ক্রেতাদের কথামতো সরবরাহ ভালো করেছেন তাদের গুড় বেশি বিক্রি হচ্ছে। দেশের ভেতরে থাকা আমদানিকৃত চিনিগুলো বিভিন্ন মাধ্যমে সংগ্রহ করছে চিনি পাইকারি ব্যবসায়ীরা। সারা বছর তেমন কোনো চিনি বিক্রি করতে দেখা যায় না। কিন্তু বর্তমানে প্রতিদিন টনকে টন পাইকারি চিনি কেনাবেচা করতে দেখা যাচ্ছে। হাট বাজারের মোদিখানা দোকানগুলিতে ভেজাল খেজুর গুড় তৈরি করার জন্য খুচরা বিক্রেতারা হুড়াহুড়ি করে চিনি কিনছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিনি পাইকারী ব্যবসায়ী বলেন,আগে আমরা প্রতিদিন পাঁচ/দশ বস্তার বেশি চিনি বিক্রি করতে পারতাম না। কিন্তু এখন দোকান খোলার আগেই খুচনা বিক্রেতা এবং মোদিখানা দোকানদারা এসে চিনি কিনার জন ধরনা দিয়ে বসে থাকছেন। জেলার ভেতর খেজুর গুড়েরের সর্ববৃহৎ আড়ত হচ্ছে,উপজেলার ঝলমলিয়া ও বানেশ্বর হাট। শীত মৌসুম শুরু হলে বাঘা চারঘাট উপজেলা জুড়ে শতাধিক আড়ত গড়ে উঠে। হাট-বাজারসহ প্রতিদিন সকাল থেকে ওই আড়ৎগুলোতে খেজুরের গুড় কেনাবেচা হয়ে থাকে। তারপর, বাঘা উপজেলার আড়ানি এলাকায় অর্ধশতধিক ভেজাল গুড় তৈরির কারখানা রয়েছে। এই গুড়গুলি পুঠিয়ার বানেশ্বর ও ঝলমলিয়া হাটের দিন মোকামে বিক্রি হয়ে থাকে। আড়ৎদার আমির হোসেন বলেন, হাটে আসা বেশিরভাগ খেজুরের গুড়ে মাত্রারিক্ত চিনি মেশানো রয়েছে। ঝকঝকে রং না হলে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকারা বেশি দামে গুড় কিনে না। চিনি মিশানো গুড় র্দীঘদিন আড়ৎতে কিংবা বাসা-বাড়িতে পড়ে থাকলে এর রং নষ্ট হয় না। কালো রংগের গুড় শহরের লোক পছন্দ করে না।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল হাই মোহাম্মদ আনাছ বলেন,বানেশ্বর ঝলমলিয়া দুই হাটে যারা ভেজাল খেজুর গুড় কেনাবেচা করছে। আমরা তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করব। আর যারা অনলাইনে মাধ্যমে ভেজালমুক্ত খেজুর গুড়ের ব্যবসা করে এই এলাকার সুনাম ধরে রাখছে তাদের সাধুবাদ জানায়।