ঘন কুয়াসা, কনকনে ঠান্ডা বাতাস ও তীব্র শীতে ভোগান্তিতে পড়েছেন শেরপুরের হত দরিদ্র মানুষ। বিশেষ করে জেলার সীমান্তবর্তী গারো পাহাড় ও জেলার বিভিন্ন চরাঞ্চলের হতদরিদ্র মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। শুধু গ্রাম বা চরাঞ্চলেই নয় শীতে কাবু করেছে শেরপুর জেলা শহরের মানুষকেও। তীব্র শীতে খেটে খাওয়া ও শ্রমজীবী মানুষ তাদের কাজে যেতে পারছেনা। ফলে পেটের খোরাক জোগানোর পাশাপাশি শীতের গরম কাপড়ের অভাবে কষ্টে আছে ওইসব হতদরিদ্র মানুষ। বিশেষ করে জেলা ও উপজেলাগুলোতে শীত জনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এরমধ্যে শিশু ও বয়স্কদের সংখ্যাই বেশি। দিন ও রাতের বেশীর ভাগ সময়ে ঘন কুয়াশা আচ্ছন্ন থাকায় এবং কনকনে বাতাসের কারণে জেলাবাসীর সকল প্রকার কাজ কর্মে ব্যাঘাত ঘটছে। শীত বস্ত্র ও পুরাতন শীতের গরম কাপড়ের দোকানে ভিড় বাড়ছে ক্রেতাদের। শীতের তীব্রতা কমাতে একটু উষ্ণতার জন্য সন্ধ্যার পর থেকেই শহরের বিভিন্ন চায়ের দোকানে ভিড় লক্ষ্য করা গেছে শীতার্ত মানুষের। শহরের বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে মৌসুমী ভাপা ও চিতই পিঠা ব্যাবসায়ীদের ব্যাবসাও জমে উঠেছে। কনকনে ঠান্ডার কারণে সময় মতো কাজে যেতে পারছেন না দিনমজুর ও শ্রমিকরা। এতে তারা পরিবারের লোকজন নিয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। শীত মোকাবেলায় সরকারীভাবে শীতবস্ত্র বিতরণের দাবী জানান তারা। এ ছাড়া গবাদি পশুদের গায়ে চট ও কাঁথা দিয়ে গা ঢেকে শীতের তীব্রতার হাত থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, নালিতাবাড়ী উপজেলার রামচন্দ্রকুড়া, নয়াবিল ও পোড়াগাঁও ইউনিয়ন, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় তীব্র শীত পড়েছে। এসব এলাকায় চলছে শৈত প্রবাহ। সন্ধ্যা থেকে সারারাত পর্যন্ত ঘনকুয়াশায় আচ্ছন্ন থাকে আকাশ। বেলা ১২ টার আগে সুর্যের দেখা মিলছে না। রাতে ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি আর দিনের বেলায় ১২ থেকে ২২ ডিগ্র সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকছে। অতিরিক্ত কনকনে ঠান্ডার কারণে সময় মতো কাজে যেতে পারছে না দিনমজুর ও শ্রমিকরা। এতে তারা পরিবারের লোকজন নিয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। শীত মোকাবেলায় সরকারীভাবে শীতবস্ত্র বিতরণের দাবী জানান তারা।
সীমান্তবর্তী নালিতাবাড়ী উপজেলার আন্ধারুপাড়া এলাকার বালু শ্রমিক হোসেন আলী বলেন, তীব্র শীতের কারণে কাজে যেতে পারছিনা। এতে আয় কমে গেছে। তাছাড়া আমাদের পর্যাপ্ত শীতবস্ত্রও নেই।
নালিতাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আদিবাসী নেতা মি. লুইস নেংমিনজা জানান, পাহাড়ি এলাকায় সবচেয়ে বেশি শীত পড়েছে। এই শীতে পাহাড়ি কর্মজীবি গারো আদিবাসীরা কাজে যেতে পারছে না। তারা সরকারী শীতবস্ত্র ও সহযোগিতা প্রাপ্তির দাবি জানান।
নালিতাবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলমগীর কবির বলেন, আগামী এক সপ্তাহ যদি এভাবে শীত পড়তে থাকে তাহলে বোরো বীজতলা কোল্ড ইনজুরিতে পড়তে পারে। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি, সেই অনুযায়ী এলাকার কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি।
এ ব্যাপারে নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খৃষ্টফার হিমেল রিছিল বলেন, নালিতাবাড়ীতে তীব্র শীত মোকাবেলায় আমরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শীতার্তদের মাঝে সরকারী বরাদ্দের প্রায় সাড়ে তিনশ কম্বল বিতরণ করেছি। এ ছাড়া ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আরো কম্বল চাওয়া হয়েছে। আমরা আশা করছি পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র নিয়ে দরিদ্র অসহায় শীতার্ত মানুষের পাশে দাড়াতে পাড়বো।