নওগাঁর পত্নীতলাসহ আশেপাশের উপজেলায় গত কয়েকদিন ধরেই চলছে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। উত্তরের হীমেল হাওয়ায় ও কনকনে শীতের দাপটে মানুষ যেন প্রকৃতির কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে সমাজের ছিন্নমুল ও খেয়ে খাওয়া মানুষের জীবণে দেখা দিয়েছে বিপর্যয়। কনকনে শীতের কারণে শ্রমজীবি মানুষ ঘর থেকে বের হতে না পারার কারণে কোন রকমে খেয়ে না খেয়ে তাঁরা জীবণ ধারণ করতে বাধ্য হচ্ছে। এ সকল পরিবারের প্রবীণ ও শিশুরা অমানবিক জীবণ যাপন করছে। পাতলা ছেঁড়া কাঁথা ও কম্বল জড়িয়ে তাঁরা প্রচন্ত শীতে রাত্রী পার করছে। এ কারণে শীত জনিত সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছে অনেকেই। কনকনে শীতে ছিন্নমুল ও শ্রমজীবি মানুষ মানবেতন জীবণযাপন করলেও শীতবস্ত্র নিয়ে কেউ এগিয়ে আসেনি বলে জানা গেছে।
বুধবার সকালে নজিপুর পৌর এলাকা বাঁদপুঁইয়া দীঘি পাড়ে গিয়ে কথা হয় আদিবাসী কর্মকার সম্প্রদায়ের কয়েকজন নারী পুরুষের সাথে। তাঁরা চুলোর আগুনে শরীর গরম করার চেষ্টা করছিলেন। এ সময় বেলী কর্মকার নামে এক নারী দীঘি পাড়ে বসবাসরত কয়েকটি বাড়ি ঘুরিয়ে দেখিয়ে জানান, এখানে ৩৫/৪০টি আদিবাসী কর্মকার সম্প্রদায়ের বাস। যারা সকলেই দিনমজুর। পল্লীর বাড়ি ঘরের চেহারা দেখেই এখানকার মানুষের অবস্থা বিষয়ে সহজেই ধারণা পাওয়া যায়। ৬০ বছর বয়সী ভারতি কর্মকার জানান, তাঁর স্বামী নেই। একমাত্র মেয়েকে বিবাহ দিয়েছেন। দিনমজুরী করে পেট চালান। তীব্র শীতের কারণে ৩ দিন ধরে কাজে যেতে পারেননি। ঘরে খাবার না থাকায় পাশের বাড়ি হতে চাল ধার করে চুলায় চড়িয়েছেন। ঘরে শীতবস্ত্র না থাকায় ছেঁড়া একটি কাঁথা গায়ে জড়িয়ে রাত পার করছেন। ছোট একটি টিনের ঘরে তিনি একাই বসবাস করেন।
ষাটোর্ধ সুশীলা কর্মকার জানান, তাঁর একমাত্র ছেলে পাগল। কাজ করতে পারেন না। ছেলের বউ অন্যের বাড়িতে দিন মজুরীর কাজ করে যে আয় করেন তা দিয়েই ৬ সদস্যর পরিবার কোন রকমে চলে। শীতের কারণে ছেলের বউ কাজে যেতে না পারায় ঘরে খাবার নেই। সকালে আধা কেজি চালের খিচুড়ি রান্না করে ভাগ করে খেয়েছেন। দুপুর ও রাতের খাবার কি হবে বা আদৌ হবেই কিনা তা জানা নেই। জীবণ ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় অন্নের সংস্থান করতেই হিমশীম খেতে হয় বলে তীব্র শীত মোকাবিলা করার জন্য প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্র ক্রয়ের সামর্থ্য তাদের নেই। বাধ্য হয়েই পাতলা কাঁথা আর কম্বল গায়ে জড়িয়ে রাত পার করতে হচ্ছে।
শুধু ভারতি আর সুশীলা কর্মকারই নয় আদিবাসী পল্লীতে বসবাসরত সকল পরিবারের অবস্থা প্রায় একই। শৈত্য প্রবাহ জনিত তীব্র শীতে ছিন্নমুল ও শ্রমজীবি এই মানুষগুলো মানবেতর জীবণ যাপন করলেও তাদের জন্য কেউ শীতবস্ত্র নিয়ে এগিয়ে আসেনি এবং কোন খোঁজ খবরও নেয়নি বলে অভিযোগে জানান। এ বিষয়ে নজিপুর পৌর সভার মেয়র মো. রেজাউল কবির চৌধুরী বলেন, সকলকে শীতবস্ত্র প্রদান করা সম্ভব নয়। পত্নীতলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছাঃ রোমানা আফরোজ এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, উপজেলায় মোট ৫হাজার ৩শত ৯০পিছ কম্বল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এ সকল কম্বল জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছে। বর্তমানে কোন কম্বল স্টকে নেই। তবে নতুন করে কম্বলের জন্য চাহিদা পাঠানো হয়েছে।