নওগাঁর মহাদেবপুরে অভিযানের পরও বন্ধ হয়নি ভেজাল গুড় তৈরি। বরং অভিযানের পরপরই আবার শুরু হয়েছে যথারীতি। শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) দুপুরে উপজেলার মথুর কৃষ্ণপুর গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে এই চিত্র।
এলাকাবাসী জানান, গত বুধবার র্যাব-৫ জয়পুরহাট ক্যাম্প, জয়পুরহাট জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের যৌথ অভিযানে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ভেজাল গুড় তৈরি ও বিক্রির দায়ে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার মথুর কৃষ্ণপুর গ্রামের জামাল হোসেনের ৮০ হাজার টাকা, বুলেট হোসেনের ৩০ হাজার টাকা, শ্রী প্রদীপ কুমার মন্ডলের ৩০ হাজার টাকা ও আবদুল মালেকের ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ সময় ২০ হাজার ৩৫০ কেজি ভেজাল গুড়, গুড় তৈরির কাজে ব্যবহৃত ৬ হাজার ৯৫০ কেজি চিনির শিরা, ৬ কেজি ক্ষতিকর রং ও ২ কেজি হাইড্রোজেন জব্দ করে ধ্বংস করা হয়।
শুক্রবার ওই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, কোন রকম পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা ছাড়াই আগের জায়গাতেই আগের মতই গুড় তৈরি করছেন তারা। জমি থেকে কেটে এনে বাড়ির পাশেই জমা করে রাখা হয়েছে মণকে মণ আখ। সেগুলো পরিস্কার না করেই ময়লা খোসাসহ বিদ্যুৎচালিত মারাই কলে ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে। এভাবে আখ থেকে রস বের করে আগের মতই সিমেন্টের তৈরি একটি নোংড়া পাত্রে গিয়ে পড়ছে সে রস। সেখান থেকে খোলা বড় কড়াইয়ে জ্বাল দেয়া হচ্ছে। বড় চুলার পাশেই রাখা হয়েছে ক্ষতিকর সোডার পাত্র। অভিযুক্ত বুলেট হোসেন নিজেই জ্বাল দিচ্ছিলেন চুলোয়। চুলোর উপর বিশাল কড়াইয়ে টগবগ করে ফুটছে রস। রসের উপর ময়লা আবর্জনার স্তুপ।
বুলেট জোড় গলায় জানালেন ৩০ হাজার টাকা জরিমানা দিয়েছেন। কিন্তু কেউ তাদেরকে গুড় তৈরি বন্ধ করতে বলেননি। তাই তারা এ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। জরিমানার টাকা তুলতে হলে এখন একটু বেশি করে গুড় তৈরি করতে হবে বলেও জানান তিনি।
২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছিল আবদুল মালেকের। তিনিও শুরু করেছেন আবার। তিনি জানালেন, বছরের পর বছর ধরে তারা এ ব্যবসায় করে আসছেন। অনেকেই আসেন। সেলামী নিয়ে চলে যান। কিন্তু র্যাব আসলে জরিমানা দিতে হয়। তাও বছরে একবার। গতবছরও দিয়েছেন। কিন্তু তারা চলে গেলে আর কোন সমস্যা হয়না।
৮০ হাজার টাকা জরিমানা দেয়ার পর থেকে মাথা খুব গরম হয়ে আছে জামাল হোসেনের। নিজেই জানালেন সে কথা। সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর খুবই ক্ষেপে গেলেন তিনি। ‘কালই র্যাব আসলো। আজকেই আবার সাংবাদিক কেনো আসতে হবে’। তার মন্তব্যটি যুক্তিসংগতই মনে হলো। কারণ তিনি মারাই বন্ধ রেখেছেন। তবে তার যন্ত্রপাতি, মারাই মেশিন, মণকে মণ আখ ঘটনাস্থলেই পড়ে আছে। পরিস্থিতি সামলে আবার শুরু করবেন-এমনটিই জানালেন।
জানতে চাইলে মোবাইলফোনে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নওগাঁর সহকারী পরিচালক শামীম হোসেন জানান, অভিযানের সময় তাদেরকে গুড় তৈরি বন্ধ করতে বলা হয়নি ঠিকই, কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, ক্ষেত থেকে আখ তুলে এনে হাসুয়া দিয়ে তার খোস ছড়িয়ে নিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া মারাই মেশিন থেকে যেখানে আখের রস পড়ে সেখানে সিমেন্টের বদলে প্লাস্টিকের পরিস্কার পাত্র রাখতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া গুড়ে ক্ষতিকর রঙ, চিনি, সোডা প্রভৃতি মেশাতে নিষেধ করা হয়েছে। এসব শর্ত না মানলে আবার অভিযান পরিচালনা করা হবে বলেও তিনি জানান।