গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে ১৩ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় ৫৬তম বিশ্ব ইজতেমাকে ঘিরে এগিয়ে চলছে প্রস্তুতিকাজ। ইতোমধ্যে ময়দানের ৭৫ ভাগ কাজ হয়ে গেছে বলে ইজতেমা আয়োজক কমিটির দাবী। মহান আল্লাহকে রাজি-খুশি করাতে ঘণকুয়াশা ও কনকনে শীত উপেক্ষা করে স্বেচ্ছাসেবি মুসল্লিরা সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। আলমি শূরার তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত তিনদিনের ইজতেমাকে ঘিরে টঙ্গী ও আশপাশ এলাকায় ধর্মীয় উৎসব আমেজ বিরাজ করছে। প্রতিবছর ইজতেমায় ঢাকা জেলার সাথীরা সবার শেষে তাদের জন্য নির্ধারিত খিত্তার কাজ করে থাকেন। এবারও শুধু ঢাকা জেলার মুসল্লিদের জন্য নির্ধারিত খিত্তারস্থান বাদে অন্য সকল কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ময়দানের পশ্চিম পাশে তুরাগ নদের পূর্বপাড়ে নামাযের মিম্বর ও উত্তর-পশ্চিম কোণে বিদেশি মেহমানদের জন্য নির্ধারিত কামরার পাশে বয়ান মঞ্চ নির্মাণ করা হচ্ছে। এছাড়াও ছামিয়ানা টানানো, বিদ্যুৎ ও মাইক সংযোগের জন্য তার টানানোসহ তাশকিল কামরা, জুড়নেওয়ালি জামাতের কামরা, বধিরদের বয়ান শোনার জন্য পৃথক কামরা তৈরি করা হচ্ছে। আগামী বৃহস্পতিবারের (১২ জানুয়ারি) মধ্যেই দেশ-বিদেশের লাখ লাখ মুসল্লি ময়দানে এসে তাদের জন্য নির্ধারিত খিত্তায় অবস্থান নেবেন।
ময়দানে প্রথমপর্বে খিত্তাভিত্তিক মুসল্লিদের অবস্থান : এবছর প্রথম পর্বের বিশ্ব ইজতেমায় আগত ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা যেসমস্ত খিত্তায় অবস্থান করবেন তা হলো-গাজীপুর (খিত্তা-১), টঙ্গী (খিত্তা-২,৩ ও ৪), ঢাকা (খিত্তা-৫-১৮ ও ২১, ২২, ২৫, ২৭, ২৮, ৩০), রাজশাহী (খিত্তা-১৯), চাপাই নবাবগঞ্জ (খিত্তা-২০), নাটোর (খিত্তা-২৩), নওগাঁ (খিত্তা-২৪), নড়াইল (খিত্তা-২৬), সিরাজগঞ্জ (খিত্তা-২৯), টাঙ্গাইল (খিত্তা-৩১), রংপুর (খিত্তা-৩২), গাইবান্ধা (খিত্তা-৩৩), লালমনিরহাট (খিত্তা-৩৪), মুন্সিগঞ্জ (খিত্তা-৩৫), যশোর (খিত্তা-৩৬), নীলফামারী (খিত্তা-৩৭), বগুড়া (খিত্তা-৩৮), জয়পুরহাট (খিত্তা-৩৯), নারায়নগঞ্জ (খিত্তা-৪০), ফরিদপুর (খিত্তা-৪১), ভোলা (খিত্তা-৪২), নরসিংদি (খিত্তা-৪৩), সাতক্ষীরা (খিত্তা-৪৪), বাগেরহাট (খিত্তা-৪৫), কুষ্টিয়া (খিত্তা-৪৬), মেহেরপুর (খিত্তা-৪৭), চুয়াডাঙ্গা (খিত্তা-৪৮), ময়মনসিংহ (খিত্তা-৪৯, ৫১), শেরপুর (খিত্তা-৫০), জামালপুর (খিত্তা-৫২), গোপালগঞ্জ (খিত্তা-৫৩), কিশোরগঞ্জ (খিত্তা-৫৪), নেত্রকোনা (খিত্তা-৫৫), ঝালকাঠি (খিত্তা-৫৬), বান্দরবন (খিত্তা-৫৭), বরিশাল (খিত্তা-৫৮), পিরোজপুর (খিত্তা-৫৯), হবিগঞ্জ (খিত্তা-৬০), কক্সবাজার (খিত্তা-৬১), সিলেট (খিত্তা-৬২), সুনামগঞ্জ (খিত্তা-৬৩), ফেনী (খিত্তা-৬৪), নোয়াখালী (খিত্তা-৬৫), লক্ষ্মীপুর (খিত্তা-৬৬), চাঁদপুর (খিত্তা-৬৭), বি.বাড়ীয়া (খিত্তা-৬৮), খুলনা (খিত্তা-৬৯), পটুয়াখালী (খিত্তা-৭০), বরগুনা (খিত্তা-৭১), চট্টগ্রাম (খিত্তা-৭৪), কুমিল্লা (খিত্তা-৭৫), তুরাগ নদের পশ্চিমপাড় কাঁচাবাজারে মৌলভীবাজার (খিত্তা-৭৬), রাজবাড়ী (খিত্তা-৭৭), মাদারীপুর (খিত্তা-৭৮), শরীয়তপুর (খিত্তা-৭৯), মানিকগঞ্জ (খিত্তা-৮০, সাফা টাওয়ার), রাঙ্গামাটি (খিত্তা-৮১), খাগড়াছড়ি (খিত্তা-৮২), দিনাজপুর (খিত্তা-৮৩), পাবনা (খিত্তা-৮৪), ঠাকুরগাঁও (খিত্তা-৮৫), ঝিনাইদাহ (খিত্তা-৮৭, যমুনা প্লট), মাগুরা (খিত্তা-৮৮, যমুনা প্লট), কুড়িগ্রাম (খিত্তা-৮৯, কামারপাড়া বেড়ীবাঁধ বঙ্গবন্ধু মাঠ), পঞ্চগড়ের (খিত্তা-৯০, কামারপাড়া হাইস্কুল মাঠ-বধির স্কুল ভবন) জন্য নির্ধারিতস্থানে অবস্থান নিয়ে ইবাদত বন্দেগীতে মশগুল থাকবেন। এছাড়াও ময়দানের চারপাশে ১১ ও ১২নং খিত্তার কিয়দংশ, ৩২ ও ৩৭নং খিত্তার মাঝামাঝি ১২নং, ৭২, ৭৩, ৮৬ ও ৯১নং খিত্তাগুলো সংরক্ষিত হিসেবে রাখা হয়েছে বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ব ইজতেমা আয়োজক কমিটির শীর্ষ মুরুব্বি ডাঃ কাজী শাহাবুদ্দিন।
মুসল্লিদের নিরাপত্তায় পুরো ময়দানে প্রায় ৩শ’ ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা : ইজতেমা ময়দানে আগত ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের নিরাপত্তায় পুরো ময়দানে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ ও র্যাবের পক্ষ থেকে প্রায় তিনশতাধিক ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা স্থাপন করা হচ্ছে। সিসিটিভির মাধ্যমে কন্ট্রোলরুম থেকে পুরো ময়দানের আইনশৃংখলা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হবে। এবিষয়টি নিশ্চিত করেছেন টঙ্গী পশ্চিম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শাহ আলম।
ভাসমান পন্টুন সেতু : ইজতেমা ময়দানে আগত মুসল্লিদের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিতে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের সদস্যরা টঙ্গী-কামারপাড়া ব্রীজ থেকে আব্দুল্লাহপুর-টঙ্গী সংযোগ ব্রীজ পর্যন্ত তুরাগ নদে ৫টি ভাসমান পন্টুন সেতু তৈরি করছেন। পন্টুন সেতুগুলো তৈরি হয়ে গেলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম অঞ্চল থেকে আগত মুসল্লিরা সহজে তুরাগ নদ পারাপার হতে পারবেন।
ময়দান জুড়ে প্রায় ৫শ’ মাইক : আগত মুসল্লিরা যাতে নিরবচ্ছিন্নভাবে শীর্ষ মুরুব্বিদের বয়ান শুনতে পারেন সেজন্য পুরো ময়দানে প্রায় ৫শ মাইক স্থাপনের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। এরমধ্যে শব্দ প্রতিধ্বনিরোধক ৩২০টি ছাতা মাইক এবং বিদেশি মেহমানদের বয়ান শোনার জন্য বিদেশি কামরা ও তার আশপাশে ২০০টি ইউনিসেফ (প্রতিধ্বনি প্রতিরোধক) মাইন স্থাপন করা হচ্ছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইজতেমা ময়দানের মাইকের জামাতের শীর্ষ জিম্মাদার মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক।
প্রসঙ্গত : ১৩ জানুয়ারি শুরু হয়ে ১৫ জানুয়ারি রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে প্রথমপর্বের (আলমি শূরার) বিশ্ব ইজতেমার সমাপ্তি ঘটবে। মাঝে ৪দিন বিরতি দিয়ে ২০ জানুয়ারি দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাযের অনুসারী (ওয়াসিফুল ইসলামপন্থী) মুসল্লিরা বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয়পর্বে অংশ নেবেন। ২২ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে এবারের বিশ্ব ইজতেমার পরিসমাপ্তি ঘটবে। ২০২০ সালে ৫৫তম বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর করোনা-১৯ মহামারির কারণে গত দুই বছর ২০২১ ও ২০২২ সালে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়নি।