বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রধান সমস্যাগুলো চিহ্নিত হলেও এগুলোর সমাধানে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না। দেশে ভয়াবহ যানজট, বেহাল সড়ক ব্যবস্থাপনার প্রেক্ষাপটে রেলের লাভজনক হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও লোকসানের ভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়েছে সংস্থাটি। গত কয়েক বছরে রেলের অবকাঠামো উন্নয়নে দৃশ্যমান বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া হলেও এ সংস্থার লোকসান দিন দিন বাড়ছে। অথচ শুধু সদিচ্ছা থাকলেই বর্তমান অবকাঠামো ও ইঞ্জিন-কোচ দিয়ে ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ঘটিয়ে এ সংস্থার আয় কয়েকগুণ বাড়ানো সম্ভব। ১৩ বছরে সরকার রেলে বিপুল অঙ্কের অর্থ খরচ করেছে; চলমান রয়েছে আরও বিপুল অঙ্কের অর্থের বহু প্রকল্প। সেবা বাড়াতে এসবের প্রয়োজন রয়েছে। রেলের সার্বিক সেবা বাড়ানোর উদ্যোগ ও ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়। আয় বাড়াতে হলে এসবে নজর দেওয়ার বিকল্প নেই। জানা যায়, গত দুই অর্থবছরে শুধু রেল পরিচালনায় লোকসান গুনতে হয়েছে ৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি। অভিযোগ রয়েছে, বাস মালিকদের সঙ্গে যোগসাজশের কারণে ট্রেন পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা গাফিলতি করে থাকে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বাড়ে লোকসানের বোঝা। উন্নত প্রযুক্তি ও অবকাঠামো, দ্রুতগতির ট্রেন, সময়মতো চলাচল নিশ্চিত করার পাশাপাশি যাত্রীসেবার মান উন্নত করে বহু দেশ তাদের রেল যোগাযোগব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনতে সক্ষম হলেও আমাদের দেশে ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। রেলওয়ের উন্নয়নে বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলেও মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিন ও কোচের ওপর নির্ভরতা কমানোর পদক্ষেপও দৃশ্যমান নয়। বস্তুত সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণের অভাব ও অব্যবস্থাপনার বিষয়টি বহুদিন ধরে আলোচনায় থাকলেও এসব খাতে অগ্রগতিও দৃশ্যমান নয়। যেসব দেশের রেলওয়ে স্বাবলম্বী, সেসব দেশে সেবার মান বাড়ানোর বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এ খাতে গুরুত্ব না বাড়িয়ে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশ রেলওয়ে কতটা লাভের মুখ দেখবে সে বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। যেহেতু দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে রেলের রুগ্ণ দশা কাটছে না, সেহেতু এ সংস্থার সর্বক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষকে গুরুত্ব বাড়াতে হবে। রেলের পতিত জমি কাজে লাগাতে দূরদর্শী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। রেলপথকে ঝুঁকিমুক্ত করার জন্যও নিতে হবে পদক্ষেপ। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কঠোর হাতে দমন করা গেলে রেলের সার্বিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটবে।