নাস্তা খাওয়া শেষে বিল দেওয়ার সময় ১০ টাকা নিয়ে ভোক্তা ও বিক্রেতার মধ্যে বিবাদকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার বেলা এগারোটার দিকে নগরীতে তুলকালাম কান্ড ঘটেছে। বিক্রেতা দোকান ম্যানেজার, কর্মচারী ও ভোক্তার মধ্যে সৃষ্ট মারমারির ঘটনা গিয়ে ঠেকেছে সড়ক অবরোধ করে পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ, থানা ঘেরাও এবং দোকান ভাংচুর করা পর্যন্ত। যেখানে ধর্ম অবমাননা করার মতোও অভিযোগ ওঠে।
পুরো পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে থানা পুলিশের দুই সদস্যসহ কমপক্ষে দশজন আহত হয়েছে। যদিও বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। বরিশাল নদী বন্দর (পুরাতন লঞ্চঘাট) সংলগ্ন এলাকায় তুলকালাম এ ঘটনার সূত্রপাত ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সৌরভ ঢালী নামের হাজী মোহাম্মদ মহসীন মার্কেটের দোকানের এক কর্মচারীর সাথে নাস্তার বিলের ১০ টাকা দেওয়া-নেওয়া নিয়ে ঘোষ মিষ্টান্ন ভান্ডারের ক্যাশের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তির সাথে বাগ্বিতন্ডা শুরু হয়। পরবর্তীতে ওই মিষ্টির দোকানের কর্মচারীর সাথে সৌরভ ঢালীর হাতাহাতি ও মারামারির ঘটনা ঘটে। মারামারির সময় সৌরভ তার দাড়িতে আঘাতপ্রাপ্ত হন।
এ ঘটনার পর স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তি তৌহিদী জনতার নামে দাড়ি ছিড়ে ফেলায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে সৌরভের পক্ষে ঘোষ মিষ্টান্ন ভান্ডারে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে। খবর পেয়ে কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে এসআই রেজাউলসহ দুইজন পুলিশ সদস্য আহত হন। এরআগে তৌহিদী জনতার হামলার সময় দোকান কর্মচারী ও সাধারন জনগনসহ কমপক্ষে আটজন আহত হয়েছে। সূত্রমতে, হামলার ঘটনায় দোকান কর্মচারীরা নদী বন্দরের সামনের সড়ক অবরোধ করেন। পরবর্তীতে মিছিল নিয়ে কোতোয়ালি মডেল থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।
লঞ্চ ঘাটের হাজী মোহাম্মদ মহসীন মার্কেটের কর্মচারী সৌরভ ঢালী বলেন, প্রতিদিনই আমি ঘোষ মিষ্টান্ন ভান্ডারে নাস্তা করি। যেখানে প্রতিদিন ৩০ টাকা দিয়ে নাস্তা করি, সর্বশেষ গতকালও ৩০ টাকায় যে নাস্তা খেয়েছি আজ সেই একই নাস্তার বিল চাওয়া হয় ৪০ টাকা। তখন ক্যাশে থাকা ব্যক্তির সাথে এ নিয়ে কথা বলতেই কর্মচারীরা এসে আমার ওপর হামলা চালায়। ওইসময় তারা আমার দাড়ি ধরে টান দিলে কিছু অংশ ছিড়ে যায়।
ওমর ফারুক নামের এক ব্যবসায়ী জানান, একজন নামাজি লোকের ওপর হামলা করে দাড়ি ছিড়ে ফেলার ঘটনায় ব্যবসায়ীসহ স্থানীয়রা সবাই এর বিচার দাবি করছি। ঘোষ মিষ্টান্ন ভান্ডারের মালিক ভবতোষ ঘোষ ভানু বলেন, নাস্তার বিল ৪০ টাকা আমাদের তালিকায় লেখা আছে। তবে ওই লোক মিথ্যা কথা বলে আমাদের ৩০ টাকা বিল দিতে চেয়েছিলো। এ নিয়ে ওই লোক আমার স্টাফদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে। এনিয়ে মারামারি হয়েছে, তবে তার দাড়ি ছেড়ার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। তিনি আরো বলেন, নিজের দোষ ঢাকতে ওই লোক এরকম কথা ছড়িয়েছে। পাশাপাশি স্থানীয় অতিউৎসাহী কতিপয় লোক বিষয়টি যাচাই না করেই ক্ষুব্ধ হয়ে দোকানসহ কর্মচারীদের ওপর অর্তকিত হামলা চালায়।
অপরদিকে বিক্ষোভকারীরা গ্রেপ্তারকৃত দোকান কর্মচারীর কঠোর বিচারের দাবিতে কোতোয়ালি মডেল থানা প্রায় দুই ঘন্টা অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। এ ঘটনায় গুরুত্বর আহত মো. হেলাল বলেন, আমরা প্রতিবাদ করতে গেলে পুলিশ আমাদের উল্টো মারধর করেছে। পুলিশের লাঠির আঘাতে আমার মাথা ফেটে গেছে।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (দক্ষিণ) মো. ফজলুল করিম বলেন, হোটেলে খেতে যাওয়া ব্যক্তির সাথে কথা কাটাকাটির জেরধরে ঘটনাটি ঘটেছে। এর প্রেক্ষিতে বিষয়টি চারিদিকে ছড়িয়ে পরেছে। পরিবেশ বর্তমানে শান্ত রয়েছে এবং যারা আহত হয়েছেন তাদের চিকিৎসা নিতে পাঠানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় আমরা একজনকে হেফাজতে নিয়েছি। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) আলী আশরাফ ভূঞা বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে দোকানের এক কর্মচারীকে থানায় নেয়া হয়েছে। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। এ ঘটনায় পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।